রাজশাহী শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


আবারো উত্তাল শাহবাগ চত্ত্বর


প্রকাশিত:
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০১:৩৮

আপডেট:
১৮ মে ২০২৪ ১৬:০৮

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর শাহবাগে ‘দুর্নীতি ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ আয়োজিত পূর্বঘোষিত ধর্ষণবিরোধী গণসমাবেশ শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা থেকে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দেন।

সমাবেশে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীরা ‘ধর্ষকের কালো হা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও, যে সরকার ধর্ষক পালে সে সরকার চাই না, বর্তমান সরকার ধর্ষকদের পাহারাদার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে শাহবাগ।

সমাবেশ থেকে সারাদেশে অব্যাহতভাবে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সকল প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করাসহ ৯ দফা দাবিও উত্থাপন করা হবে।

বিকেল ৪টা থেকে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, প্রীতিলতা ব্রিগেডিয়ারসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে নৃত্য ও ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সমাবেশটি শুরু হয়। এর আগে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে যোগ দিতে দেখা যায়।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহর সঞ্চালনায় এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসিরুদ্দিন প্রিন্সের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও- উপস্থিত আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ আকাশ, সামিনা লুৎফা, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।

সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্স বলেন, দেশব্যাপী ধর্ষণবিরোধী এই গণজাগরণের মধ্যেই ধর্ষণের মাত্রা, তীব্রতা ও ভয়াবহতা অন্য যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই ৮-১০টি ধর্ষণের খবর এই সময়ও এসেছে। এরকম নানা বীভৎস খবর প্রতিদিনই পত্রিকার পাতাজুড়ে থাকছে।

আইনের রক্ষক থেকে শুরু করে ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত ছাত্র-যুব-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং তাদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীরাই এসব ঘটনার বেশিরভাগের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এরই বিরুদ্ধে আমাদের আজকের সমাবেশ। আমাদের এই আন্দোলন মাত্র শুরু, এই আন্দোলন চলতে থাকবে যতদিন না ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন বন্ধ না হচ্ছে।

সমাবেশে অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের যে পরিসংখ্যান আমরা দেখতে পাই, সেটার চেয়ে দ্বিগুন ঘটনা আমাদের দেশে ঘটছে। ধর্ষণবিরোধী এই আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক। এই আন্দোলন অন্যান্য আন্দোলনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে হবে না। সব রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সংগঠিত করে সারাদেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন হ্রাস করতে হলে সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণও বাড়াতে হবে। সর্বোপরি নারীদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।

নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, এই আন্দোলন সামাজিক আন্দোলন, এই আন্দোলন সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং এই আন্দোলন অবশ্যই রাজনৈতিক আন্দোলন। আল জাজিরার প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে যেভাবে সরকার আন্দোলন করছে, সেভাবে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলছে না, আন্দোলন করছে না। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরকার কথা বলবে না, যা করতে হবে আমাদেরই করতে হবে। আসুন ধর্ষণ এবং বিচারহীনতার যে আন্দোলন আজ আমরা করছি, সেটিকে কেন্দ্র আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সারাদেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিলও বের করা হবে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সমাবেশটি জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত হওয়ায় শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শাহবাগে আসার রাস্তাটি ব্লক রয়েছে। তবে অপর পাশ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে যান চলাচল করছে।


আরপি / এমবি-১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top