রাজশাহী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১


প্রকাশ্য জুয়া আইন-১৮৬৭

সংশোধন হতে যাচ্ছে


প্রকাশিত:
২ অক্টোবর ২০১৯ ২০:৪০

আপডেট:
২ অক্টোবর ২০১৯ ২০:৪৮

ছবি: সংগৃহীত

জুয়া বন্ধে দেড়শ’ বছরের পুরনো আইনকে যুগোপযোগী করতে চায় সরকার। বর্তমান আইনে কঠোর শাস্তির বিধান নেই। এ কারণে গত ২ সপ্তাহের অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবের জুয়ার আসর থেকে আটক দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই আইনে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

আটকদের বিরুদ্ধে অন্য ধারায় মামলা দেয়া হয়েছে। এদিকে ওই আইন দ্বারা জুয়া বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। জুয়াকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ক্যাসিনো সংশ্লিষ্ট লোকজন ও জুয়াড়িদের আইনের আওতায় আনার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি সাজা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে।

আইনজ্ঞরা বলছেন, ‘দুর্বল আইনের কারণেই আটকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। এ আইন যুগোপযোগী করা দরকার। এ বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলে বিদ্যমান আইনটি যুগোপযোগী কিংবা নতুন আইন করা কঠিন কিছু নয়।’

জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জুয়া বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানে জুয়া বন্ধের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাষ্ট্রকে নির্দেশনা দেয়া হয়। তিনি বলেন, জুয়ার আইনটি অনেক পুরনো। এটাকে কিভাবে যুগোপযোগী করা যায় সে বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। শিগগিরই প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।’

১৯৭২ সালের সংবিধানে জুয়া বন্ধের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাষ্ট্রকে নির্দেশনা দেয়া আছে। যদিও পরে এ বিষয়ে আর নতুন কোনো আইন হয়নি। বিদ্যমান আইনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স বা পারমিট নিয়ে মদ বিক্রি ও পানের সুযোগ আছে। সম্প্রতি ঢাকায় র‌্যাবের সমন্বিত অভিযানে চারটি ‘ক্যাসিনো’ সিলগালা এবং অনেককে আটকের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সামালোচনা হচ্ছে। এসব ক্লাবে গোপনে জুয়া খেলার অনেক আসর বসার কথা নানা সময়ে শোনা গেলেও একেবারে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণসজ্জিত ক্যাসিনোর অস্তিত্ব বাংলাদেশে রয়েছে তা একেবারে ভাবনার বাইরে।

জানা যায়, জুয়ার বিষয়ে যে আইন কার্যকর আছে, সেটি হল ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন-১৮৬৭’, সেখানে অবশ্য ক্যাসিনো বিষয়ে কিছু বলা নেই। তবে ওই আইনে ‘কেউ তার ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানের মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবহারকারী হিসেবে যে কোনো ব্যক্তি জ্ঞাতসারে বা স্বেচ্ছায় অন্য লোককে, উক্ত স্থানকে সাধারণ জুয়ার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত করিতে দিলে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এমনকি তাস, পাশা, কাউন্টার অর্থ বা অন্য যে কোনো সরঞ্জামসহ যে কোনো ব্যক্তিকে ক্রীড়ারত বা উপস্থিত দেখিতে পাওয়া গেলেও শাস্তি দেয়ার সুযোগ আছে এই আইনে।’

ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুতে জারি করা ১৫২ বছরের এ আইনটি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। এ আইনে জুয়া খেলার অপরাধ সর্বোচ্চ ২০০ টাকা জরিমানা এবং ৩ মাসের কারাদণ্ড। ক্ষেত্রবিশেষে উভয় দণ্ড একত্রে কার্যকর করার বিধানও রাখা হয়েছে আইনটিতে। কিন্তু এ শাস্তি হাস্যকর। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর ৯২ ধারায় প্রকাশ্যে জুয়া খেলার জন্য মাত্র ১০০ টাকা জরিমানা করার বিধান করা হয়।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ক্যাসিনো জুয়া ব্যাপকতা লাভ করেছে। তাই জুয়া খেলা বন্ধে বিদ্যমান আইনটি দ্রুত সংশোধন করে একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। জুয়া খেলার অপরাধ সর্বোচ্চ ২০০ টাকা জরিমানা এবং ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি সত্যি হাস্যকর। আইনটিকে যুগোপযোগী করতে হবে। যেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে থাকবে যাবজ্জীবন কারদণ্ডের বিধান। ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোর লাইসেন্স দেয়ার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যুব সমাজ ধ্বংসকারী ক্যাসিনোর লাইসেন্স দেয়া কোনো মতেই সঠিক হবে না।’

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সাম্প্রতিক অভিযানে কথিত ক্যাসিনো সিলগালা এবং অনেককে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব ঘটনায় দেড়শ’ বছরের পুরনো জুয়া আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা না দেয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ বর্তমান জুয়া আইনটি এখন অকার্যকর। এটি ব্যাপকভাবে সংশোধন করা দরকার।

 


আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top