রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


অর্থমন্ত্রীকে ৭ প্রস্তাব

জব্দ ৬শ’ কোটি টাকা ফেরত চায় হলমার্ক


প্রকাশিত:
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২০:৪৪

আপডেট:
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২০:৫৮

ছবি: সংগৃহীত

সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথে ব্যাংক জালিয়াতির হোতা হলমার্ক গ্রুপ। ঋণ পরিশোধের বিনিময়ে গ্রুপটি বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে জব্দ থাকা প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা ফেরত ও নতুন করে ব্যাংকিং সুবিধাসহ ৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে।

এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর হলমার্কের কাছে ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের পাওনা আদালতের বাইরে সমঝোতার ভিত্তিতে আদায়ের কৌশল খুঁজতে উচ্চপর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘হলমার্ক টাকা দিয়ে ব্যবসায় ফিরে আসবে। আমি নতুন করে ব্যবসায়ী সৃষ্টি করতে পারব না। সুতরাং তাদের দিয়েই ব্যবসা করাতে হবে। আমি চাচ্ছি, আমাদের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করবে। ব্যবসা করতে হলে পাওনা শোধ দিতে হবে। তাদের সে সক্ষমতা আছে।’

দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডি জেলহাজতে থাকার সময় হলমার্কের অ্যাকাউন্টে ৪৬৫ কোটি টাকা জমা দেয়া হয়েছে। ওই টাকা থেকে কমপক্ষে ৩শ’ কোটি টাকা ব্যবসা পরিচালনার জন্য গ্রুপকে ফেরত দিতে হবে।

চেয়ারম্যান ও এমডি অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করবেন। পাশাপাশি জামিনে মুক্ত হওয়ার পর এ প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সম্পত্তির তালিকা অর্থমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।

তৃতীয় প্রস্তাবে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে হলমার্কের ৯০ থেকে ১০০ কোটি টাকা জমা আছে। বিপুল অঙ্কের অর্থ আদালত কর্তৃক অবরুদ্ধ করা আছে। এ গ্রুপ যেন ব্যবসা পরিচালনা করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে সেজন্য অবরুদ্ধ অর্থ অবমুক্ত করতে হবে।

চতুর্থ প্রস্তাবে বলা হয়, জনতা ব্যাংকের ম্যাক্স স্পিনিং মিলস ও আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের হিসাবে জমাকৃত ৮৩ কোটি টাকা হলমার্কের পাওনা। এ অর্থ হলমার্ক গ্রুপকে ফেরত দিতে হবে।

পঞ্চম প্রস্তাবে বলা হয়, ঋণের টাকা সহজে পরিশোধের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কিস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ষষ্ঠ প্রস্তাবে বলা হয়, গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি জামিনে মুক্তিলাভের পর দ্রুত জমি বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন।

সপ্তম প্রস্তাবে বলা হয়, হালমার্ক সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনা, গ্রাহকদের পূর্ণবিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে পারে এজন্য সব ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করতে হবে।

লিখিত প্রস্তাবে তানভীর মাহমুদের আইনি কর্মকর্তা মো. বাবুল ইসলাম বলেন, হলমার্ক গ্রুপের এমডির ক্ষমতা প্রাপ্য হয়ে আপনাকে (অর্থমন্ত্রী) জানাচ্ছি- এ গ্রুপের এমডি বিগত ৭ বছরের বেশি সময় জেলহাজতে আছেন।

চেয়ারম্যানও দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন। চেয়ারম্যান ও এমডির অবর্তমানে গ্রুপের ৪৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ। প্রায় ৪০ হাজার কর্মচারী বেকার। মেশিনারিজ কার্যকর না থাকায় প্রায় ধ্বংসের পথে। এখন চেয়ারম্যান ও এমডি জামিনে বের হতে পারলে এ গ্রুপ ঘুরে দাঁড়াতে এবং বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

জানা যায়, এর আগেও ১৫ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন করেছিলেন কারাবন্দি তানভীর মাহমুদ। সেখানে তিনি বলেছেন, তাকেসহ তার স্ত্রী জেসমিন ইসলামকে জামিনে মুক্তি দেয়া হলে কারখানা চালু করে প্রথম বছর ১২ কোটি, দ্বিতীয় বছর ২৪ কোটি ও তৃতীয় বছর থেকে ১০০ কোটি টাকা করে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করবেন।

এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি হলমার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন চাওয়া হয় সোনালী ব্যাংকের কাছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোনালী ব্যাংক একটি প্রতিবেদন পাঠায়।

সেখানে বলা হয়, হলমার্ক কেলেঙ্কারি উদ্ঘাটনের পর আবশ্যকীয় কাগজপত্র বা দলিলাদির ঘাটতি রেখেই ৪০৫৪ শতাংশ সম্পত্তি মর্টগেজ নেয়া হয়েছে। কেলেঙ্কারির ঘটনা উদ্ঘাটনের আগে মর্টগেজ নেয়া ২৮৭৪ শতাংশ সম্পত্তির ক্ষেত্রেও দালিলাদির ঘাটতি রয়েছে।

দুদকের মামলায় আসামিপক্ষ জেলহাজতে অন্তরীণ থাকায় ৯১৫৪ শতাংশ সম্পত্তির মূল বা সার্টিফাইড দলিল ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ব্যাংকের হেফাজতে নেয়া হলেও তা এ পর্যন্ত মর্টগেজ নেয়া সম্ভব হয়নি।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১২ সালের ৩১ মে পর্যন্ত প্রুপটি সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখা থেকে জালিয়াতি করে ২ হাজার ৯৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ৪৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত হলমার্ক গ্রুপের কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। অবলোপন থাকায় এসব অর্থের সঙ্গে কোনো সুদ যোগ হচ্ছে না। হলমার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংকের কাছে যে সম্পত্তি বন্ধক রেখেছে, তার বাজারমূল্য ৪৭২ কোটি টাকারও কম। তাছাড়া এ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বন্ধকী সম্পত্তি চারবার নিলামে তোলার বিজ্ঞাপন দিয়েও কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি।

ফলে কারখানাগুলোর স্থাপিত প্রায় ২৮২ কোটি টাকা মূল্যের মেশিনারিজ ৬ বছরের অধিককাল ধরে অব্যবহৃত থাকার ফলে তা কার্যক্ষমতা হারিয়ে ক্রমান্বয়ে স্ক্রাপে পরিণত হচ্ছে।

 

আরপি/এসআর


বিষয়: হলমার্ক


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top