রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


বেতন-ভাতার ৬০ শতাংশ পাবেন বাড়িতে থাকা গার্মেন্ট শ্রমিকরা


প্রকাশিত:
৩০ এপ্রিল ২০২০ ০৮:৫৯

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ২০:২১

ছবি:সংগৃহীত

করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে দেশে লকডাউনের মধ্যে বাড়িতে থাকা গার্মেন্টস শ্রমিকরা এপ্রিল মাসের বেতন-ভাতার ৬০ শতাংশ পাবেন বলে সরকার বলেছে।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান গার্মেন্টস মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।তবে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ঘরে থাকা শ্রমিকের জন্য শতভাগ বেতন ভাতা দাবি করেছে।

অন্যদিকে, গার্মেন্টস কারখানা খোলা নিয়ে বিতর্কের মুখে সরকার ঢাকার বাইরে থেকে শ্রমিকদের না আনার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এরপরও দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলে দলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকায় আসার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

মালিকরা বলেছেন, তারা কর্মস্থলে থাকা শ্রমিকদের দিয়েই ধাপে ধাপে সব কারখানা চালু করার চেষ্টা করছেন।


যদিও গার্মেন্টস শ্রমিকদের মার্চ থেকে তিন মাসের বেতন দেয়ার জন্য লকডাউনের শুরুতেই রপ্তানি খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার।

কিন্তু কারখানায় না গিয়ে বাড়িতে থাকা শ্রমিকরা বেতন পাবেন কি না-এনিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরণের শংকা তৈরি হয়। এছাড়া অনেক কারখানায় লে-অফ করা বা শ্রমিক ছাঁটাই করার অভিযোগও উঠেছে।

এই বিষয়গুলো নিয়ে শ্রম গার্মেন্টস মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকের পর প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান জানিয়েছেন, তাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন ঈদের আগে কোনো কারখানায় কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা হবে না এবং লকডাউনের মধ্যে মালিকরা বাড়িতে থাকা শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ বেতনভাতা দেবেন।

তিনি আরো বলেছেন, যে সব কারখানা শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে পারছে, তারা কারখানা চালু করছে।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন ছাড়া অন্যন্য সংগঠনগুলো শতভাগ বেতনভাতা দাবি করেছে।

গত মঙ্গলবার গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছিলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের ঢাকায় আনা যাবে না।

মালিকরাও অনুষ্ঠানিকভাবে এর সমর্থনে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

রংপুর থেকে একজন শ্রমিক আজই ট্রাকে করে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কর্মস্থলে এসেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি নারী পুরুষ মিলিয়ে তার আরো ১২ সহকর্মির রাস্তার সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

"মোবাইল ফোনে আমাকে জানায় যে অফিস খুলছে। তোমরা চলে আস। যেভাবে হোক কারখানায় আস। তখন আমরা ১২ মিলে প্রত্যেকে এক হাজার টাকা করে দিকে ট্রাকে করে বুধবার গাজীপুরের কলিয়াকৈরে আসি। ট্রাকে আমরা বসা ছিলাম। আর আমাদের ওপর ত্রিপল দিয়া আমাদের নিয়া আসে।"

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেই শ্রমিকরা দলে দলে কর্মস্থলে আসছেন, রাস্তায় তাদের তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

মাদারিপুর থেকে ঢাকায় আসা একজন নারী শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন, "আমাদের বলছে যে, অফিস খোলা, ডিউটি করা লাগবে। তারপরে আমরা কিছু জায়গা হাঁইটা আসছি। আবার কিছু জায়গা আটো দিয়া আসছি। সিএনজি দিয়াও আসছি।"

বামপন্থী একটি শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী জলি তালুকদার বলেছেন,সরকার এবং মালিকপক্ষ দায় না নিয়ে কৌশলে হাজার হাজার শ্রমিককে ঢাকায় নিয়ে আসছেন। "আজকে আবার যেভাবে শ্রমিকদের টেনে আনা হলো। এটা কৌশলে শ্রমিকদের বাধ্য করা হলো আসার জন্য।"

গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সহ সভাপতি এস এম মান্নান কচি এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন।

তিনি বলেছেন, "আমাদের সরকারের সাথে আলোচনা হয়েছে এবং গার্মেন্টসগুলি ধাপে ধাপে খুলে দিচ্ছি আমরা। এটা অবশ্যই আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকায় যে শ্রমিকরা আছে, তাদের দিয়েই আমরা কারখানা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"

কিন্তু দেশে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকরা দলে দলে আসছেন। তাদেরকে বলা হয়েছে, কারখানায় না এলে বেতন পাবেন না এবং যারা কাজে যোগ দেবেন না তাদের এপ্রিল মাসের বেতনভাতার ৬০ শতাংশ দেয়া হবে-এগুলো শ্রমিকদের কর্মস্থলে আসতে বাধ্য করছে কিনা-এই প্রশ্নে এস এম মান্নান কচি বলেছেন, "শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সাথে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আমরা শ্রমিক ছাঁটাই করবো না এবং বাড়িতে থাকা শ্রমিকরা বাড়িতে বসেই তাদের টাকা পাবেন।"

এদিকে সরকার মালিকদের যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিচ্ছে।, সেখানে মার্চ থেকে তিন মাসের বেতন শ্রমিকদের দিতে হবে-সরকারের পক্ষ থেকে তা বলা হয়েছিল। তাহলে এপ্রিলে বেতন-ভাতায় ৬০ শতাংশের বিষয় আসছে কেন?

এই প্রশ্নে বিজিএমইএ নেতা এস এম মান্নান কচি বলেছেন, "এটা একটা লোন মাত্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই আপদকালীন মুহুর্তে স্বল্প সুদে আমাদের ঋণ দিয়েছেন। এটা অবশ্যই আমাদেরকে ফেরত দিতে হবে।"

"হয়তো এখানে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। আমি তিন মাসের বেতন দিলে আমাকে টাকাটা ফেরত দিতে হবে। কাজই যদি না করি তাহলে আগামী দিনে লোনটা শোধ করবো কীভাবে?" বিবিসি।

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top