রাজশাহী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


ত্রাণের জন্য এনআইডি ফটোকপির স্তূপ


প্রকাশিত:
২৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:১৭

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ১৩:৫৮

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের প্রভাবে ছুটির মেয়াদ যতই বাড়ছে ঝিনাইদহে কর্মহীন মানুষের খাবারের জন্য হাহাকার ততই বাড়ছে। সরকারি অফিস ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও অনেকেই ত্রাণ পাচ্ছেন না। শৈলকূপা পৌরসভার মেয়র বললেন চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম, এজন্য সবাই পায় না।

এরই মধ্যে ত্রাণ না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন কেউ কেউ। বুধবার (২২ এপ্রিল) ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলায় ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ করেছেন হতদরিদ্ররা। পাশাপাশি সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরের বারান্দায় ত্রাণ পাওয়ার আশায় জাতীয় পরিচয়পত্রের স্তূপ পড়ে আছে দরিদ্রদের। সদর উপজেলাসহ ছয় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অনেকেই পান ত্রাণ সহায়তা।

জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ত্রাণ দেয়া শুরু হয়েছে। কেউ অভুক্ত থাকবে না। একে একে সবাই খাবার পাবে। তবে তাদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিতে হয়তো একটু সময় লাগবে।

বুধবার সকাল ১০টার দিকে শৈলকূপা উপজেলা পরিষদের সামনে পৌর এলাকার ঝাউদিয়া আবাসনের দুই শতাধিক ভূমিহীন নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করেন। পৌর এলাকার কোনো জনপ্রতিনিধি এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজখবর ও ত্রাণ দেননি বলে অভিযোগ। ফলে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা।

ঝাউদিয়া আবাসনের বাসিন্দা মহিদুল ইসলাম, নেহাল উদ্দিন, রোজিনা খাতুন, ভানু বেগম জানান, তারা এখন পর্যন্ত সরকারি সহায়তা পাননি। পৌর এলাকার কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের খোঁজখবর নেননি। ২০-২৫ দিন আগে স্থানীয় এক ব্যক্তির দেয়া পাঁচ কেজি চাল পেয়েছেন তারা। এখন আবাসনের প্রতিটি পরিবার না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে বিক্ষোভে নেমেছেন তারা।

এ বিষয়ে শৈলকূপা পৗরসভার মেয়র কাজী আশরাফুল আজম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে আমাকে চার টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আরও তিন টন যোগ করে পৌর এলাকার নয় ওয়ার্ডে ১০ কেজি করে চাল ও তিন কেজি করে আলু দিয়েছি। ঝাউদিয়া আবাসনের বাসিন্দারা একেবারেই ত্রাণ পাননি তা সঠিক নয়। হয়তো সবাই পাননি এটা ঠিক। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম; এজন্য সবাই ত্রাণ পায় না।

মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদে দেখা যায়, অফিসের বারান্দায় জাতীয় পরিচয়পত্রের স্তূপ। ত্রাণের জন্য দাঁড়িয়েছে আছে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ। সবার হাতে স্মার্টকার্ড এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। ত্রাণ পাওয়ার আশায় অনেকেই পরিচয়পত্রের ফটোকপি ফেলে গেছেন।

তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ওই বারান্দায় একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যত্রতত্র কোনো প্রকার আইডি কার্ড জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়নি। সুতারাং আপনারা মূল্যবান আইডি কার্ডের ফটোকপি এভাবে ফেলে যাবেন না।’

ত্রাণের জন্য পরিচয়পত্র জমা দিতে আসা আজিম বিশ্বাস বলেন, এক মাস ধরে কাজ বন্ধ। এখন পর্যন্ত সরকরি কোনো অনুদান পাইনি। কাঠমিস্ত্রির কাজ করি। ঘরে বসে আছি। শুনলাম এখানে ভোটার আইডির ফটোকপি জমা দিলে ত্রাণ পাওয়া যাবে। এজন্য কার্ড জমা দিলাম।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বদরুদ্দোজা শুভ বলেন, ভোটার আইডি কার্ড জমা দিতে হবে- এমন কোনো নির্দেশনা আমাদের নেই। এমনটা আমরা কাউকে বলিনি। তারা কেন ভোটার আইডির ফটোকপি বারান্দায় রেখে গেছেন তারাই ভালো জানেন।

এ বিষয়ে জানতে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সরোজ কুমার নাথের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। পরে এসএমএস পাঠালেও রেসপন্স করেননি তিনি।

 

আরপি/ এমবি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top