রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা

বোরো তুলতে মাঠে লড়ছেন কৃষক


প্রকাশিত:
২০ এপ্রিল ২০২০ ১৪:৫৮

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১৩:৩৩

 

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের মানুষের খাদ্য নিশ্চিতে বোরো ধান ঘরে তুলতে মাঠে লড়ছেন কৃষক। সকাল থেকে বিকাল কিংবা রাতেও কাজ করছেন তারা। তাই করোনা পরিস্থিতিতে দেশে কৃষিপণ্যের কোনো ধরনের সংকট হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


এদিকে গত বছরের মতো এবারও চলতি বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার আশা প্রকাশ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে ধান কাটার সময় হলেও শ্রমিকের সংকটে কৃষকের মুখে হাসি নেই। সঙ্গে ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজ শনিবার থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত দুই ধাপে ভারতের আসাম ও মেঘালয়সহ পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। এই বৃষ্টির পানি ব্রহ্মপুত্র এবং হবিগঞ্জের কিছু নদী দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এতে দেশের হাওর অঞ্চলের বিশেষ করে হবিগঞ্জের হাওরে বোরো ফসলের ক্ষতি হতে পারে।


এদিকে গত বৃহস্পতিবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে ২০৩ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন ধান।
এছাড়া ২০১৯-২০ চলতি অর্থবছরে ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন ধান।
অধিদফতরের সরেজমিন উইং সূত্র বলছে, দেশের হাওর অঞ্চলসহ যেসব জায়গায় বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে, সেখানে ধানের ভালো ফলন হয়েছে।
তাই আশা করা হচ্ছে, এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যাবে। তাই ধান কাটার পর মোট উৎপাদনের চিত্র বলা যাবে।
এ দিন নেত্রকোনা জেলার হাওর অঞ্চলের কৃষক মো. আবদুল্লাহ ফোনালাপে যুগান্তরকে বলেন, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছি। ধানের ভালো ফলন হয়েছে।
এখন যদি করোনাকে ভয় করে ঘরে বসে থাকি তাহলে চলবে না। তাই সতর্ক থেকে মাঠে কাজ করছি। তবে করোনার প্রকোপে হাওর অঞ্চলে কোনো কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
তাই মাঠে ধান কাটার সময় হলেও এখনও পড়ে আছে। আর এ সমস্যা আমার মতো অনেক কৃষকের। তিনি বলেন, এখন যদি ধান কাটা শুরু করতে না পারি, তাহলে অকাল বন্যায় ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই দিশেহারা হয়ে নিজের ধান নিজেই কাটছি।
একই অঞ্চলের আরও এক কৃষক মো. ইকরাম যুগান্তরকে বলেন, ফলন খুব ভালো হয়েছে। যা আশা করেছি, তার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে কৃষি শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা যাচ্ছে না।
কৃষি অফিস থেকে আমাদের দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। শুনেছি আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে কাটার ব্যবস্থা করবে সরকার। তবে এখনও এমন কিছু আমাদের এখানে আসেনি। তাই ধান নিয়ে নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় আছি।
শুক্রবার সাভারের অঞ্চলের বিরুলিয়া গ্রামের কৃষক মো. আল-আমিন ফোনালাপে যুগান্তরকে বলেন, তিনিসহ সেখানকার সবাই বোরো ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় আছেন।
তারা দেশের খাদ্য নিশ্চিতে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মাঠে আছে। তিনি বলেন, এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি। এই ধানের বেশির ভাগই আমি বিক্রি করে দেব।
সেক্ষেত্রে আমি আর্থিকভাবে লাভবান হবো। আর দেশের মানুষ দুই বেলা খেয়ে থাকতে পারবে। এজন্য করোনার এই পরিস্থিতিতেও ধান উৎপাদনে মাঠে লড়াই করে যাচ্ছি। তবে কৃষি শ্রমিকের অভাবে মাঠে ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে একটু চিন্তা লাগছে।
সম্প্রতি গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের অবস্থার মতো ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
এতে দেশেও ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা উৎপাদন বাড়ালে বিদেশের কাছে হাত বাড়াতে হবে না।
এজন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের জন্য চার শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া গত রোববার গণভবন থেকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার সময় কৃষকের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ধান কাটার মৌসুম। কৃষি শ্রমিকদের কাজ ও যাতায়াতে সহযোগিতা করা হবে। যাতে কৃষি শ্রমিকরা যেখানে কাজ করতে যেতে চায়, সেখানে গিয়ে কাজ করতে পারেন।
জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ইতোমধ্যেই হাওরসহ একাধিক অঞ্চলে ধান কাটা শুরু হয়েছে।
এছাড়া কৃষক যাতে ধান ঘরে তুলতে পারে আমরা এ নিয়ে নানাভাবে কাজ করছি। শ্রমিক আনার বিষয়েও কাজ করছি। এছাড়া যন্ত্র সরবরাহ করেছি। যন্ত্রের ব্যবহারও শুরু করা হয়েছে।
তিনি জানান, করোনায় দেশে কৃষিপণ্যের সংকট হবে না। কারণ কৃষকরা করোনা মোকাবেলায় মাঠে কাজ করছে। কৃষি কর্মকর্তারাও তাদের সাহায্য করছে।


করোনামুক্ত থেকে কিভাবে কাজ করবে তার দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া হাওড়া ইতোমধ্যে ২০০টি হারভেস্টার এবং ২০০ রিপার ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য নেয়া হয়েছে।

 

আরপি/ এআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top