রাজশাহী রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


বাড়িওয়ালার হুমকিতে রাতের আঁধারে পালিয়ে গেল করোনা রোগী


প্রকাশিত:
২০ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৭

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০৬:২০

ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরে কার্তিক দাস নামে এক ব্যক্তির করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসায় বাড়িওয়ালা কর্তৃক আগুনে পুড়িয়ে মারার হুমকির দেয়ায় পালিয়ে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসেন। এ ঘটনার পর কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের হস্তক্ষেপে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের গোহারোয়া সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে পাঠায় স্থানীয় প্রশাসন।

তিনি চাঁদপুরের জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া গ্রামের স্বহদেব দাসের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লামিয়া সাইফুল।তিনি বলেন, ডিসি স্যার বিষয়টি আমাকে জানানোর পর ওসি এবং চৌদ্দগ্রাম সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে নাঙ্গলকোট রেলস্টেশনে যাই।

এসময় তার কাছে মাস্ক ছিল না, হ্যান্ড গ্লাভস্ও ছিল না। সেখানে গিয়ে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাইকের মাধ্যমে তার (কার্তিক দাস) সঙ্গে কথা বলি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দুটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসা হয়।

এসময় তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নাঙ্গলকোট উপজেলার গোহারোয়া ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানো হয়। কার্তিক দাস জানান, তিনি কক্সবাজার জেলা সদরের কলাতলী এলাকায় একটি জুতার দোকানে শ্রমিক হিসেবে চাকরি করতেন। করোনার প্রভাবের কারণে কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন ঘোষণার পর ওই দোকানটিও বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর তিনি গত ১২ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ আঙ্গারপাড়া দাসবাড়িতে ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের কাছে চলে আসার পর তার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। পরদিন স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠায়। গত ১৬ এপ্রিল তার করোনা পজিটিভ ফল আসে। এতে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ওই বাড়িটি লকডাউন করে দেয়।

তিনি আরও জানান, আমি লক্ষ্মীপুরে যে বাড়িতে ভাড়া থাকি, সেই বাড়ির সকলে বাড়ি ছাড়ার জন্য আমাকে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে এবং বাইরে দিয়ে তালা লাগিয়ে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। এতে আমি বলেছি প্রশাসনের সঙ্গে একটু কথা বলে নেই ১০ মিনিট সময় দেন।

তাও দেয়নি। বাইরে থেকে কেউ বলছে ঢিল মার, কেউ বলছে বাঁশ দিয়ে খোঁচা মার। কেউ বলছে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে ঘরে মারো। এভাবে আমাকে মানসিকভাবে চাপ দেয়ার পর আমি ঘর থেকে বের হয়ে টার্মিনালে চলে আসি। পরে একটি চাল বোঝাই ট্রাকে করে লাকসামে চলে আসি। সেখান থেকে রেললাইন দিয়ে হেঁটে নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশনে আসি।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার থেকে আসার পর গত ১৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দিয়ে আসি। এরপর আমি কয়েকবার সেখানে ফোন দিয়েছি, ওরা বলেছে- রিপোর্ট আসে নাই। পরে রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে লক্ষ্মীপুরের প্রশাসন বাড়িটি লকডাউন করে দেয়। এতে বাড়িওয়ালাসহ স্থানীয় লোকজন আমার ওপর এমন অত্যাচার শুরু করলে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, সে এভাবে ঘোরাফেরা করার কারণে করোনার জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে তাকে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করি। বর্তমানে সে আইসোলেশনে রয়েছে। রোগীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি কোনো বাড়িওয়ালা এ অবস্থায় তাকে চাপ প্রয়োগ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আরপি / এমবি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top