রাজশাহী সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


ফিল্মি স্টাইলে ফাঁড়ি থেকে হ্যান্ডকাফসহ পালিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ!


প্রকাশিত:
২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৯

আপডেট:
৬ মে ২০২৪ ১৩:৩৬

ছবি: সংগৃহীত

গ্রিলকাটা চোর সন্দেহে গ্রেফতার এক তরুণ রাতের আঁধারে ফাঁড়ি থেকে হ্যান্ডকাফসহ পালিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করেছে। হ্যান্ডকাফ পরিহিত তরুণকে দেখে হকচকিত পুলিশ কর্মকর্তারা। বিস্ময়ের রেশ কাটতেই পুলিশ কর্মকর্তারা নেপথ্যের কাহিনি জানতে চাইলেন।

তরুণ তাদের জানায়, রাতে ফাঁড়ির পুলিশ বাসায় এসে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। থানার বড় কর্মকর্তা কথা বলবেন জানিয়ে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এরপর হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ব্যাপক মারধর শুরু করে। একপর্য়ায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান ফিরলে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে টয়লেটে যাওয়ার সময় পাহারায় থাকা পুলিশ সদস্যের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়। সকালে সে থানায় আত্মসর্মপণ করে।

ফিল্মি স্টাইলে হ্যান্ডকাফসহ পালিয়ে যাওয়ার এ ঘটনা ঘটে রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগ থানায়। আজিমপুর ফাঁড়ি থেকে হ্যান্ডকাফসহ থানায় পালিয়ে আসা তরুণের নাম মুরাদ শিকদার। শহীদ নগরের ৮ নম্বর গলির বাসিন্দা মোহাম্মদ শিকদারের ছেলে মুরাদকে বাসা থেকে ফাঁড়িতে নেয়া ও ফাঁড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা স্বীকার করলেও ফাঁড়ি পুলিশের বক্তব্য পালিয়ে যাওয়ার পর চিরুনী তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল সোয়া ৩টা) মুরাদ শিকদার থানা হাজতে অবস্থান করছিল।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টা। লালবাগ কিল্লার মোড়ের অদূরে লালবাগ থানা সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, থানা গেটের বিপরীত দিকে একটি বাড়ির গেটের সামনে মাটিতে বসে রয়েছেন অভিযুক্ত গ্রিলচোর মুরাদের বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোটবোন। কিছুক্ষণ পর পর মুরাদের মা ও ছোট বোন ডুকরে কেঁদে উঠছেন।

এ প্রতিবেদককে মুরাদের মা শেফালি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘পোলাডা ঘরে ঘুমাইছিল। পুলিশ কথা আছে বইল্ল্যা হাতে হ্যান্ডকাফ পরাইয়া নিয়ে গেল। রাতে কি মাইরটাই মারছে। পিটাইয়া হাত-পা ফুলাইয়া ফালাইছে।’

মুরাদের বাবা মোহাম্মদ শিকদার পেশায় রিকশাচালক। তিনি বলেন, ‘পোলাডা জান বাঁচাইতে ফাঁড়ি থেকে পলাইয়া থানায় আত্মসমর্পণ করে। মুরাদের বাবা-মায়ের দাবি তার ছেলে চোর নয়, স্টিলের কারখানায় চাকরি করে।’

এ প্রতিবেদক ঘটনা জানতে লালবাগ থানার ভেতরে প্রবেশ করতেই জানতে পারেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র অফিসারের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দিতেই নড়েচড়ে বসেন ডিউটি অফিসার। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা আছে জানাতেই রেজিস্টার খাতা এগিয়ে দিয়ে জানান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে হলে নাম, বাবার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার লিখে অপেক্ষা করতে হবে।


থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি আজিমপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ বিনয় কুমার রায়কে ডেকে আনেন।

বিনয় কুমার রায় জানান, গত ১৭ নভেম্বর আজিমপুর কলোনিতে ১/১ অফিসার্স পোস্টাল কোয়ার্টারের বাসিন্দা রুহুল আমিনের বাসায় গ্রিল কেটে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়। এ ঘটনায় গত ২৫ নভেম্বর থানায় মামলা হয়। বিনয় কুমারের দাবি, মুরাদ গ্রিলকাটা চোর চক্রের সদস্য। এ কারণে সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাওয়ার নামে হ্যান্ডকাফসহ সে পালিয়ে যায়। রাতেই তাকে গ্রেফতার করে থানায় আনা হয়।

মুরাদের বিরুদ্ধে থানায় কয়টা মামলা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে তার কাছে মামলার সংখ্যা-সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। তাকে রাতে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। প্রয়োজনে আসামিকে হাজত থেকে ডেকে এনে কোথাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে কিনা তা দেখাতে চান। পাশে বসে থাকা আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, এখন কি আর মাইরের দিন আছে, কত রকম কৌশলে কথা আদায় করা যায়। এ সময় মুরাদকে হাজত থেকে ডেকে আনার কথা বললে বিনয় কুমার না শোনার ভান করে এড়িয়ে যান।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন বলেন, এ কথা সত্যি যে আসামি ফাঁড়ি থেকে পালিয়েছিল। তবে তাকে গ্রেফতার করে থানায় আনা হয়েছে বলে জানান।

বিকেল ৩টায় থানার বাইরে অপেক্ষমাণ মুরাদের বাবা-মা জানান, তার ছেলে মারধরের হাত থেকে রক্ষা পেতে হ্যান্ডকাফসহ পালিয়ে থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে।

 

আরপি/ এএস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top