রাজশাহী মঙ্গলবার, ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ই আশ্বিন ১৪৩১


অভিবাসনের মূল চাবিকাঠি ‘নৈতিক নিয়োগ’ নিশ্চিত করা


প্রকাশিত:
২৬ আগস্ট ২০২২ ০৩:২৪

আপডেট:
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৫:২৩

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ, নেপাল, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ কলম্বো প্রসেসের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা ঢাকায় একটি বৈঠকে যোগ দিয়ে বলেছেন, অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত কারার জন্য ন্যায্য ও ‘নৈতিক নিয়োগ’ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ঢাকা অফিস এ তথ‌্য জা‌নি‌য়ে‌ছে।

আইওএম জানায়, অভিবাসীদের সমস্যা মোকাবিলায় নীতি ও বিধিসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য ঢাকায় কলম্বো প্রসেসের থিম্যাটিক এরিয়া ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা দুদিনব্যাপী (২৪-২৫ আগস্ট) আলোচনায় যোগ দেন। আলোচকরা বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অভিবাসী পাঠানো দেশগুলোর জন্য নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত হলো অভিবাসনে ‘নৈতিক নিয়োগ’ নিশ্চিত করা।

কলম্বো প্রসেস টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইউনিট (সিপিটিএসইউ) ও আইওএম বাংলাদেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারের সভাপতিত্বে বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী, ১৯৭০ সালে সারা বিশ্বে ৮৪ মিলিয়ন অভিবাসী ছিলেন, যা ২০২০ সালে এসে দাঁড়ায় ২৮১ মিলিয়নে। বর্তমান বিশ্বের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ অভিবাসী। অভিবাসীরা তাদের জ্ঞান, নেটওয়ার্ক ও দক্ষতা দিয়ে নিজ দেশ ও গন্তব্য দেশগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

আইওএম বল‌ছে, বিশ্বব্যাপী অভিবাসী পাঠানোর গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। কলম্বো প্রসেস হলো ১২টি এশীয় দেশের একটি আঞ্চলিক পরামর্শমূলক প্ল্যাটফর্ম, যা অভিবাসীদের সুরক্ষা ও পরিষেবার জন্য কাজ করে। একইস‌ঙ্গে কলম্বো প্রসেস অভিবাসী ও তাদের পরিবারের জন্য শ্রম অভিবাসনের সুবিধাগুলো নিশ্চিতের জন্য কাজ করে। প্ল্যাটফর্মটি এ অঞ্চলে অভিবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশগুলোর সরকার মনে করে যে, অভিবাসন সমস্যা একতরফাভাবে সমাধান করা সম্ভব না।

আইওএম আরও জানায়, ‘নৈতিক নিয়োগের অনুশীলন’ বিষয়ে গঠিত থিম্যাটিক এরিয়া ওয়ার্কিং গ্রুপের ঢাকার বৈঠকে সদস্য রাষ্ট্রগুলো অভিবাসী নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘কর্মচারী-বেতন মডেল’ থেকে ‘নিয়োগকর্তা-বেতন মডেল’— এ রূপান্তরিত করার লক্ষ্যগুলোকে আরও এগিয়ে নিতে তাদের চার বছরের কাজের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। পরিকল্পনার মধ্যে আরও আছে, অনানুষ্ঠানিক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক কাঠামোর আওতায় অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিত করা এবং অভিবাসী কর্মীদের উপযুক্ত কর্ম এবং নিরাপদ অভিবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, অভিবাসী শ্রমিকরা অনেক সময় শোষণের শিকার হন, যা নিয়োগের সময়ই শুরু হয়। অভিবাসনে নৈতিক নিয়োগের অনুশীলন নিশ্চিত করার জন্য প্রেরণ ও গ্রহণ উভয় দেশের কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন।

আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান আবদুসাত্তর এসয়েভ বলেন, অভিবাসীরা প্রায়শই অনৈতিক নিয়োগের শিকার হন। নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য ন্যায্য ও নৈতিক নিয়োগের অনুশীলন করা একটি পূর্বশর্ত। নৈতিক নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য এখন আমাদের হাতে বিশ্বব্যাপী অনেক উদ্যোগ রয়েছে। অভিবাসীদের নিরাপত্তার জন্য এখন সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

সুইজারল্যান্ডের দূতাবাসের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স (ভারপ্রাপ্ত) সুজান মুলার বলেন, অনিয়মিত অভিবাসন ও অভিবাসীদের শোষণ মোকাবেলায় নৈতিক নিয়োগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নৈতিক নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য অভিবাসী প্রেরণ ও গ্রহণকারী দেশগুলির সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এসডিসি নৈতিক নিয়োগ নিশ্চিতে সরকার, আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবে।

দুই দিনব্যাপী সভায় বিভিন্ন পক্ষ অভিবাসন ও নৈতিক নিয়োগ বিষয়ে আলোকপাত করে। আইওএমের সিনিয়র লেবার মোবিলিটি, সোশ্যাল ইনক্লুশন স্পেশালিস্ট গ্রিক্রুই ল্যানিউ ও ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং ইন্টিগ্রেটিং সিস্টেমের (আইআরআইএস) ওপর একটি বিস্তারিত ধারণা দেন। আইআরআইএস আইওএমের একটি ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ, যা অভিবাসী কর্মীদের নৈতিক নিয়োগকে উৎসাহিত করে এবং শ্রম নিয়োগকারী, নিয়োগকর্তা ও রাষ্ট্রীয় পক্ষগুলোর জন্য একটি রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে, যাতে নিয়োগ-সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনা, নীতি, প্রবিধান, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে নৈতিক নিয়োগ নীতিগুলোকে একীভূত করা যায়।

এ ছাড়া, আইএলওর মাইগ্রেশন নীতি বিশেষজ্ঞ মারিয়া গ্যালোটি প্রতিষ্ঠানটির ন্যায্য নিয়োগের উদ্যোগ সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের ধারণা দেন। ইউএন উইমেনের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট নানসিরি ইমসুক রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলোর জন্য লিঙ্গ-প্রতিক্রিয়াশীল স্ব-মূল্যায়ন টুলের ওপর আলোকপাত করেন। দুদিনের আলোচনায় ছয়টি দেশের ৩৫ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।সূত্র: ঢাকা পোস্ট।

আরপি/ এসএডি-০১

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top