রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


ভোট বাতিলের ক্ষমতা চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে ইসির প্রস্তাব


প্রকাশিত:
৯ আগস্ট ২০২২ ০৬:৫৭

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:১৫

সংগৃহিত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনায় স্থির হয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কর্মপরিকল্পনাগুলো ভেটিংয়ের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংস্কারের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

জানা গেছে, ভোটের দিন থেকে ফল গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত যেকোনো মুহূর্তে ভোট বাতিল, পোলিং এজেন্টদের সুরক্ষা, অনিয়মে জড়িত নির্বাচনী কর্মকর্তা ও প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা, নারী প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ২০৩০ সাল সময়, গঠনতন্ত্র সংশোধনের সময় কমিয়ে এক মাস করার প্রস্তাবনাগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আরপিও-এর ৭, ১২, ১৫, ২৫, ৩১, ৩৬, ৪৪, ৮৪, ৯০, ৯১ অনুচ্ছেদসহ বেশ কিছু ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজন ও করণিক সংশোধনী প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। এছাড়া, ভোট নিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে যেকোনো মুহূর্তে ভোট বাতিলের ক্ষমতা চাইছে নির্বাচন কমিশন।

আরপিও সংশোধনের বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, নির্বাচন নিয়ে যেকোনো পর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে ভোট বাতিল, নির্বাচনী কাজে অবৈধভাবে বাধা ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার যোগসাজশ এবং পোলিং এজেন্টদের ভীতি প্রদর্শন বা বাধার ঘটনা দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা, দলের সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়াসহ প্রায় এক ডজন ছোটে খাটো সংস্কারের সুপারিশ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আরপিও সংশোধনের এ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবনা রোববার কমিশন সভায় অনুমোদন হয়েছে। আজ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপরও দরকার পড়লে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে। মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ভেটিং শেষে মন্ত্রিসভায় বৈঠকে যাবে। সেখানে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে তা সংসদে সংশোধন বিল আকারে উপস্থাপন হবে। এ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থানী কমিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সংসদে বিল আকারে পাস হলেই সংশোধনীটি আরপিওতে যুক্ত হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বলেন, ভোটের সময় কোনো অভিযোগ পেলে কমিশন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে পারে বিদ্যমান আইনে। এখন ভোটের সময়ের পরে থেকে ফলাফল প্রকাশের পর, এমনকি গেজেট প্রকাশের আগে নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ের অভিযোগ কমিশন তদন্ত করে অনিয়মের প্রমাণ পেলে ভোট বাতিল করতে পারবে। ৯১ অনুচ্ছেদে দুটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনের যেকোনো মুহূর্তে পেশিশক্তি বা অন্যবিধ যেকোনো কারণে নির্বাচন বন্ধ/বাতিল জন্য এ প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিধির অধীনে কারো প্রার্থিতা বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন নতুন করে ওই নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্যেও প্রস্তাবনার পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনী কাজে বাধা দিলে বা বাধার চেষ্টা করলে শাস্তির আওতায় আনতে ৪৪ অনুচ্ছেদে উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে পেশী শক্তির ব্যবহার প্রতিরোধে ২৫ অনুচ্ছেদে নতুন প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরেও পোলিং এজেন্টদের আসতে দেওয়ায় বাধা বা কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পেলেও দায়ীদের সর্বোচ্চ ৫ বছরের শাস্তির আওতায় আনতে একটা প্রস্তাব রয়েছে খসড়ায়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দায়িত্বশীল কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার অবহেলা বা দায়ীদের পাশাপাশি প্রভাব বিস্তারকারীদের সাজার প্রস্তাব; ভোট গণনার বিবরণী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও এজেন্টদের দেওয়া বাধ্যতামূলক করা; প্রার্থীদের আয়কর সনদ জমা দেওয়া এবং মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন খেলাপি বিল ও ঋণ পরিশোধ করেই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে প্রস্তাবে।

এছাড়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার প্রতিশ্রুতি ২০২০ সালে শেষ হয়েছ। নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালনে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় দলগুলোকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দিতে খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমার সময় এক বছর থেকে কমিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে জমার বিধান রাখা হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, বেশ কিছু প্রস্তাব থাকলেও ব্যাংক ও সেবা সংস্থার প্রতিনিধিদের আপত্তি থাকায় ঋণ ও বিল খেলাপিদের আরও ছাড়ে সুপারিশ করতে পারেনি ইসি। ১৯৭২ সালে দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার- আরপিও শীর্ষক নির্বাচনী আইনটি (১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং- ১৫৫) ইংরেজিতে প্রণয়ন করা হয়।

এর আগে কে এম নূরুল হুদা এর নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন আরপিও এর ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলায় রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়। এই ধারাবাহিকতায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯৪ ক অনুচ্ছেদের দেওয়া ক্ষমতাবলে ২০১২ সালে ১ জুলাই বাংলা-পাঠ গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তৎকালীন কমিশন বিদায়ের আগে আইন সংস্কারে উদ্যোগী হলেও নিজেদের দ্বন্দ্বে তা আর সম্ভব হয়নি।

 

আরপি/এসএইচ ০৯



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top