রাজশাহী রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


এবার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শাস্তির আওতায়


প্রকাশিত:
২১ জুলাই ২০২২ ২০:১৩

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০৫:২৫

ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ভোটকেন্দ্রে পেশিশক্তির প্রভাব বিস্তার হলে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। সেটা না করে ভোটগ্রহণ অব্যাহত রাখা হলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। এ অপরাধে দায়ী হলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এমন বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বুধবার কমিশনের এক সভায় কিছু ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজনের শর্তে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আজ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারে নির্বাচন কমিশন। একজন নির্বাচন কমিশনার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আরও জানা গেছে, খসড়ায় বিদ্যমান আরপিওর ১১টি ধারায় সংশোধনীর প্রস্তাব করছে ইসি। এর বেশিরভাগই বিদ্যমান আরপিওর করণিক ক্রুটিজনিত। আরপিওতে বড় ঋণখেলাপিদের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিলখেলাপি (

বিদ্যুৎ, টেলিফোন, গ্যাস, পানি) এবং কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণখেলাপিদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন খেলাপি বিল ও ঋণ পরিশোধ করেই প্রার্থী হতে পারবেন। বর্তমানে তা সাত দিন আগে পরিশোধের বিধান রয়েছে।

এছাড়া প্রার্থীদের আয়কর সনদ জমা দেওয়া, রাজনৈতিক দলের প্রতিটি কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির সময়সীমা ১০ বছর ২০৩০ সাল নির্ধারণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, আরপিও সংশোধনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংশোধনীতে ভোটকেন্দ্রে পেশিশক্তি প্রতিরোধে সাজার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে। তিনি জানান, আরপিও সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাশ হতে হবে। এজন্য দু- একদিনের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার বিকাল ৩টা-৫টা পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সময় নির্ধারিত ছিল। মঙ্গলবার ইসির যুগ্মসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা যোগাযোগ করলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সংলাপে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন।

বিএনপি না আসার সিদ্ধান্ত জানার পর গতকাল দুপুরে নোটিশ জারি করে বিকালে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার একমাত্র এজেন্ডা ছিল আরপিও সংশোধন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এ সভায় চার কমিশনার অংশ নেন।

সভায় যেসব ১১টি ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ৬, ৭, ১২, ১৫, ২৫, ৩১, ৩৬, ৪৪, ৮৪, ৯০ও ৯১।

জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রে পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধে আরপির ধারা ২৫ ও ৮৪ এ নতুন উপধারা যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২৫এ উপধারায় ভোটকেন্দ্রে কেউ অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন তা উল্লেখ করা হয়েছে।

আর এ ব্যর্থতায় ৮৪এ ধারায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সর্বোচ্চ ৫ বছরের সাজা এবং ৮৪বি উপধারায় প্রভাব বিস্তারকারীদের সর্বোচ্চ তিন বছরের সাজার বিধান রাখা হয়েছে।

তবে তাদের কারও সাজা এক বছরের কম হবে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত নির্বাচনগুলোতে বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের পরও ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।

এ নিয়ে পরবর্তীকালে মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। বর্তমান কমিশন ওই ধরনের জটিলতা এড়াতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে সাজার আওতায় আনছে। প্রসঙ্গত, ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত বা চালুর নির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার প্রিসাইডিং কর্মকর্তার।

আরও জানা গেছে, ২৫এ উপধারায় ভোটগ্রহণের কোনো অবস্থায় কেউ বা কারা যদি ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের গ্রেফতার বা সরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেবেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হলে নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোটগ্রহণ বন্ধ করে কেন্দ্র ত্যাগ করে চলে আসবেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাকে তা অবহিত করবেন।

বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জানাবেন এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনে নতুন করে ভোট নেবেন।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এসব পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে ৮৪এ ধারায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৮৪বি ধারায় প্রভাব বিস্তারকারীদের সাজা যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যান্য সংশোধনীর মধ্যে রয়েছে-বিল ও ক্ষুদ্র ঋণখেলাপিরা আগের দিন তা পরিশোধ করে পরের দিনই মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন।

বর্তমানে মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে পরিশোধের বিধান রয়েছে। ১২(১)(১)(এন) ধারা সংশোধনের মধ্য দিয়ে বড় ঋণখেলাপিদের সমান সুযোগ পেতে যাচ্ছেন তারা।

এছাড়া ভোট গণনার বিবরণী ও ব্যালট পেপারের হিসাব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও এজেন্টদের দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে ৩৬(১১) ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে।

তথ্যসূত্র: যুগান্তর

 

আরপি/এমএএইচ-০২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top