রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


শরীরে ব্যান্ডেজ নিয়ে বাঁচার আকুতি দগ্ধদের


প্রকাশিত:
৭ জুন ২০২২ ১৮:৫৬

আপডেট:
৭ জুন ২০২২ ১৮:৫৮

ছবি: সংগৃহীত

দগ্ধ সারা শরীরে ব্যান্ডেজ। এমন অবস্থায়ও একটু উপশমের জন্য কারও কারও প্রাণান্তকর চেষ্টা। আবার কেউ জ্ঞানহীন, কেউবা লাইফ সাপোর্টে। এমন পরিস্থিতিতে স্বজনদের আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না। ঢাকায় ১৬ জনের চিকিৎসা চলছে।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মী গাউছুল আজম (২৩) এবং রবিন মিয়াকে (২২) ভর্তি করা হয়। লাইফ সাপোর্টের মধ্যেই গাউছুলকে ঢাকায় আনা হয়।

ওই অবস্থায় তার অপারেশন হয়। আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছে। তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। বার্ন ইনস্টিটিউটে রোববার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪ এবং সোমবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত আরও দুই দগ্ধ ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয়েছে।

এ নিয়ে ঢাকায় ১৬ জনের চিকিৎসা চলছে। বর্তমানে গাউছুল লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসকর্মী রবিন মিয়া, ডিপোর রিসিভার ফরমানুল এবং সিকিউরিটি ম্যানেজার একেএম মাকফারুলকে (৬৫) আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন। আটজনকে রেড ইউনিটে এবং বাকি চারজনকে এইচডিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। বার্ন ইউনিটে সোমবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে কাভার্ড ভ্যান চালক সজিব (৩৫) এবং দুপুরে কাভার্ড ভ্যান চালক নজরুল মণ্ডলকে (৩৩) আনা হয়।

নজরুলের শরীরের ৩৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম জানান, দগ্ধ ফায়ার সার্ভিসকর্মী গাউছুলকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসকর্মী রবিনসহ আরও দুজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

আইসিইউ, এইচডিইউ অথবা রেড ইউনিটে ভর্তি ১৬ জনের মধ্যে কাউকেই শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। সবার শ্বাসনালি দগ্ধ হয়েছে। শ্বাসনালি পোড়াসহ দগ্ধ রোগীদের ২৪ ঘণ্টা পার হলে শঙ্কা আরও বাড়ে। ক্ষত শুকালে শরীরে টান পড়ে।

তখন শারীরিক অবস্থাও সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি। লাইফ সাপোর্টে থাকা গাউছুল আজমের বাবা সাতক্ষীরা সদর থেকে বার্ন ইউনিটে আসেন। সোমবার ভোরে আইসিইউতে প্রবেশ করে তিনি ছেলেকে ২-৩ মিনিট দেখেন।

ছেলেকে দেখেই তিনি আইসিইউর ভেতরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউই তাকে সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না। তিনি কৃষি কাজ করলেও ছেলের রোজগারে সংসার চলত। প্রতি মাসে গাউছুল টাকা পাঠাত।

আর টাকা পাঠাতে হবে না-বলেই বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন। গাউছুলের স্ত্রী ও সিয়াম নামে ছয় মাসের ছেলে রয়েছে। প্রায় তিন বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করেন গাউছুল আজম।

আইসিইউতে পাশাপাশি বেডে চিকিৎসাধীন দুই সহকর্মী (ফায়ার সার্ভিসকর্মী) গাউছুল ও রবিন। রবিনের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন তার স্ত্রী বর্ণা আক্তার। ১-২ মিনিট স্বামীর পাশে থেকে তিনিও বের হয়ে যান।

বর্ণা জানান, বছর খানেক তাদের বিয়ে হয়েছে। তিনি এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। দুর্ঘটনার সময় তাকে ফোন করে রবিন বলেছিলেন, দোয়া করিও ডিপোতে আগুন লেগেছে। কথাগুলো বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বর্ণা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রবিনের এক সহকর্মী জানান, চিকিৎসকরা বলে দিয়েছেন কেউ শঙ্কামুক্ত নয়। নজরুল মণ্ডলের অবস্থাও ভালো নয়। তার স্ত্রী রূপা বেগম রেড ইউনিটের বারান্দায় তিন বছরের মেয়ে কণাকে নিয়ে কাঁদছিলেন।

স্বামীর পাশে থাকার জন্য তিনি অনুরোধ করছিলেন। আর বিলাপ করে বলছিলেন স্বামীর কিছু হলে তিনি বাঁচবেন না। নজরুল-রূপা দম্পতির ঘরে দুটি মেয়ে রয়েছে।

শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মী রয়েছে। চিকিৎসাধীন ১৫ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মীর মধ্যে ১৩ জন চট্টগ্রামে এবং দুজন ঢাকার বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন।

এছাড়া আরও দুই কর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিম যুগান্তরকে জানান, আমরা বার্ন ইউনিটে সার্বক্ষণিক রয়েছি।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাদের সহকর্মীসহ (গাউছুল ও রবিন) দগ্ধ কেউই শঙ্কামুক্ত নন। সোমবার সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. দুলাল মিয়া যুগান্তরকে জানান, একটি অগ্নিকাণ্ডে ৯ অগ্নিনির্বাপক কর্মীর মৃত্যু আগে কখনো হয়নি।

বার্ন ইউনিটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ভূমিমন্ত্রী : আইসিইউতে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের সোমবার দুপুরে দেখতে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দগ্ধদের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। আহতদের নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া ও তাদের সুচিকিৎসার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী দগ্ধ ব্যক্তিদের দেখতে আসেন। তিনি বলেন, বিস্ফোরণপরবর্তী আগুন নিয়ন্ত্রণে এবং আহতদের উদ্ধারে ফায়ার ফাইটার, সেনা সদস্যসহ উপস্থিত অনেকেই জীবন বাজি রেখে কাজ করে গেছেন। আহতদের চিকিৎসায় ডাক্তার ও স্বাস্থকর্মীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

 

সূত্র: যুগান্তর

 

আরপি/এসআর-০৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top