রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


এলএসডি মাদক শনাক্তে বিমানবন্দরে নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্র


প্রকাশিত:
১১ এপ্রিল ২০২২ ১০:২৭

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০৩:১৯

ছবি: সংগৃহীত

দেশে ইয়াবার পর এলো আইস। আর এখন আসছে নতুন মাদক এলএসডি (লাইসার্জিক এসিড ডাইথ্যালামাইড)। এই নতুন মাদক দেশে আসছে আফ্রিকা ছাড়াও বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে। এগুলো আনা হচ্ছে আকাশ পথে। তবে ভয়ঙ্কর এই মাদক শনাক্তে বিমানবন্দরগুলোতে কোনো যন্ত্র নেই বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি এক প্রবাসী যুবককে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। এমনকি এই মাদক শনাক্তে কোনো যন্ত্র নেই বন্দরগুলোতেও।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি- নতুন এই মাদক (এলএসডি) আকাশপথে কখনও নোটবুকে লুকিয়ে আবার কখনও মানিব্যাগের ভেতরে করে আনা হচ্ছে। দেখে বোঝারও শক্তি নেই কারও। মোটা প্রিন্টের কালার করা একটি পাতের মতো। এই মাদকটি এত সহজেই বহনযোগ্য যে, কেউ এই মাদকের বিষয়ে অভিজ্ঞ না হলে বুঝতেই পারবে না। দেখে মনে হবে- এটি একটি স্টিকার। দেশে আনার পর অনলাইনের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর এই মাদক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মাদকসেবীদের হাতে হাতে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গেল বছরের মে মাসের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রের মৃত্যু হয় গলায় ধারালো দায়ের আঘাতে। ওই যুবক নিজেই তার গলায় দা চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। আলোচিত ওই ঘটনার তদন্তে নামার পর বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর তথ্য।

পুলিশ জানতে পারে- সেই যুবক দেশে আসা নতুন মাদক এলএসডি সেবনে আসক্ত ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে সেবন করার পরই তার প্রভাবে সে নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এছাড়াও এ ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তারা এই এলএসডিই বিক্রি করতো। এরপর থেকেই ভয়ঙ্কর এই মাদক নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে।

পরে অবশ্য অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মতিঝিল ও খিলগাঁও এলাকা থেকে এলএসডিসহ (লাইসার্জিক এসিড ডাইথ্যালামাইড) কয়েকজন যুবককে গ্রেফতার করা হয়। ওই ঘটনাও ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আবারও দেশে আসতে শুরু করেছে ভয়ঙ্কর এই নতুন মাদকের চালান।

এলএসডি কি?

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ড্রাগ অ্যাবিউজের তথ্যমতে, ডি-লাইসার্জিক অ্যাসিড ডায়েথিলামাইড বা এলএসডি রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি একটি পদার্থ। যা রাই এবং বিভিন্ন ধরণের শস্যের গায়ে জন্মানো এক বিশেষ ধরণের ছত্রাকের শরীরের লাইসার্জিক অ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয়। এটি স্বচ্ছ, গন্ধহীন একটি পদার্থ।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের মতে, এটি পাউডার, তরল, ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের আকারে পাওয়া যায়।

আর মনোবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএসডি নেওয়ার পর সাধারণত মানুষ ‘হ্যালুসিনেট’ করে বা এমন দৃশ্য দেখে যা বাস্তবে নেই। অনেক সময় অলীক দৃশ্য দেখার কারণে দুর্ঘটনার শিকারও হয়।

এলএসডিকে ‘সাইকাডেলিক’ মাদক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই ধরনের মাদকের প্রভাবে সাধারণত মানুষ নিজের আশপাশের বাস্তবতাকে ভিন্নভাবে অনুভব করে এবং কখনও কখনও ‘হ্যালুসিনেট’ বা অলীক বস্তু প্রত্যক্ষও করে থাকে।

১৯৩৮ সালে প্রথমবার এলএসডি সংশ্লেষণ করা হয়। এরপর ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে নানা ধরনের মানসিক রোগের চিকিৎসায় এলএসডি ব্যবহারের জন্য প্রচারণা চালান গবেষকরা। তবে ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এলএসডিসহ সব ধরণের সাইকাডেলিক ড্রাগ নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ চিকিৎসা কাজে এলএসডি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে এই বিষয়ে গবেষণায় ভাটা পড়ে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এলএসডি নতুন মাদক। এর একটি ক্ষুদ্র অংশের দাম আট থেকে ১০ হাজার টাকা। ফলে এটি কেনা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে এই মাদকটি উচ্চবিত্তদের সন্তান ও ব্যক্তিরা বেশি গ্রহণ করছে। এছাড়াও মাদকটি এখনও পরিচিতি না পাওয়ায় এবং সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় সেটি আকাশ পথ ব্যবহার করে আনা হচ্ছে বাংলাদেশে। এ ক্ষেত্রে সহায়তা ও ব্যবসা করছে প্রবাসী কিছু ব্যক্তি। এর বাইরেও ঢাকায় তাদের এজেন্টও রয়েছে। তবে ব্যক্তি উদ্যোগেই দেশে বেশি আসছে এই নতুন মাদক।

চলতি বছরের ২২ মার্চ দেশে আসেন ফেনী জেলার রায়হান (২৫) নামের এক যুবক। তিনি দেশে আসার সময় তার নোট বইয়ের ভেতরে ২০০ পিস এলএসডি নিয়ে আসেন। তাকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব জানতে পারে, সে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এই মাদকের ব্যবসা চালাত। এ জন্য সে হোয়াটসআপ নম্বর ব্যবহার করতো। বাংলাদেশে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে চাহিদা নিয়ে সেই অনুযায়ী পাঠিয়েও দিতো। এই যুবক ২০১৩ সালে আফ্রিকায় যায়। দীর্ঘ নয় বছর পর দেশে ফেরত আসার পর ১০৪ পিস এলএসডি বিক্রিও করেছেন তিনি। অবশ্য রোববার তাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাবের দাবি- দেশে এলএসডি এখন আসছে আকাশ পথে। তার প্রমাণও পেয়েছেন তারা। তবে সেই নতুন মাদক এলএসডি শনাক্তে বাংলাদেশের কোনো বিমানবন্দরে নেই যন্ত্র বা মেশিন।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, হেরোইন-ইয়াবাসহ অন্যান্য যে মাদকগুলো রয়েছে সেগুলো ডিটেক্ট করার ক্ষেত্রে আমরা অভ্যস্ত। তবে এলএসডি মাদক একটি ছোট্ট স্টিকারের মতো একটি স্ট্রিপ। এইটা যে ড্রাগ তা বুঝতে গেলে ডিটেক্ট করার মতো যন্ত্র দেশে আছে কি না তা আমার জানা নেই।

তবে বিষয়টি সম্পর্কে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক (সদ্য বিদায়ী) উইং কমান্ডার তৌহিদ উল আহসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে দেশের কোনো বিমানবন্দরে মাদক নির্ণয় বা শনাক্তে কোনো মেশিন নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত না ওই ব্যক্তিকে সন্দেহ বা তল্লাশি করা হবে।

 

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top