রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফল হয়েছি


প্রকাশিত:
২৯ মার্চ ২০২২ ২৩:০৬

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২২ ২৩:২৭

ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণে আমরা উদ্যোগ নিই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর অর্থ বন্ধ করে দেয় একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে, দুর্নীতি হয়েছে। সেটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করি এবং তাদের বলি এটা প্রমাণ করতে হবে। তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি।

মামলা হয় এবং এটাই রায় হয় যে, কোনো দুর্নীতি হয়নি বা দুর্নীতির কোনো সম্ভাবনাও ছিল না। আমি সিদ্ধান্ত নিই কারও অর্থে নয়। যেহেতু মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে এর জবাব আমরা দেব। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করব। এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেকে ভেবেছিল এটা আমরা করতে পারবো না কিন্তু আমি জানি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার ৭ মার্চের ভাষণে যে কথাটা বলে গেছেন বাঙালিদের সম্পর্কে, কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না। বাঙালিদের কেউ দাবায়া রাখতে পারে না, পারবে না। আমরা যদি ইচ্ছা করি, অসাধ্য সাধন করতে পারি। ৯ মাসে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে তা প্রমাণ করেছি। আজ পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফল হয়েছি।

শরীয়তপুরের জাজিরায় শেখ রাসেল সেনানিবাসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ সেনানিবাস উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি যার কাজ অতি শিগগিরই সম্পন্ন হবে। পদ্মা বহুমুখী সেতুটি চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এক্ষেত্রে শেখ রাসেল সেনানিবাস ভবিষ্যতে পদ্মা বহুমুখী সেতুর সার্বিক নিরাপত্তা বিধান এবং সেনানিবাসের আশেপাশের এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের কাজে নিয়োজিত থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, আমার দুই ভাই- ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। শেখ কামাল ‘বাংলাদেশ প্রথম যুদ্ধ প্রশিক্ষণ কোর্সে’ উত্তীর্ণ হয়েছিল। যুদ্ধাকালীন প্রধান সেনাপতির এডিসি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল। শেখ জামাল সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেছিল। যুদ্ধের পোশাকে সশস্ত্র অবস্থায় তার একটি ছবি ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শেখ জামাল ১৯৭৫ সালে রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন লাভ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ছোট ভাই শেখ রাসেলের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে 'আর্মি অফিসার' হবে। মাওয়া ও জাজিরা সেনানিবাসকে ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’ হিসেবে নামকরণ করার জন্য সেনাবাহিনী প্রধানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’ এর সকল অফিসার, জেসিও ও অন্যান্য পদবীর সেনাসদস্যকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে ভবিষ্যতে ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ এক দিকে যেমন গড়ে তুলেছিলেন। স্বাধীনতা রক্ষার সমস্ত প্রতিষ্ঠাগুলো তিনি গড়ে তোলেন। অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের সেনাবাহিনীকেও তিনি গড়ে তুলেছিলেন। জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা, ১৯৭৪ ‍তিনি প্রণয়ন করেন। সেই সঙ্গে সেনা বাহিনীর জন্য মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মড স্কুলসহ প্রায় ১০০টার মতো ইউনিট ও প্রতিষ্ঠান তিনি তৈরি করে দিয়ে যান।

৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর সেনা বাহিনীতে যে অস্থিরতা ছিল, ১৯-২০টা ক্যু হয়। বহু সেনা অফিসার, বিমান বাহিনীর অফিসার-সৈনিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ সরকার আসে। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমাদের লক্ষ্য থাকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও যুগপোযোগী করতে হবে, প্রশিক্ষিত করতে হবে, উন্নত করতে হবে এবং সমৃদ্ধশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে উন্নয়নের পদক্ষেপ আমাদের নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমি ক্ষমতায় আসার পর যখন জাপান যাই- তখন জাপান সরকারের কাছে পদ্মা ও রূপসা সেতু নির্মাণের জন্য অনুরোধ জানাই। তারা রাজি হয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে। পরবর্তীতে আমি ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্ত স্থাপন করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসার পর তারা সেটা বন্ধ করে দেয়। অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন বাহিনী ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, মাওয়া ও জাজিরা দুই প্রান্ত মিলিয়ে ৯ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এই সেনানিবাস। পদ্মার তীরের ২৩৫ একর জমির ওপর ১৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেনানিবাসে তিনটি প্রধান ইউনিট রয়েছে।

 

 

আরপি/এসআর-০২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top