অদৃশ্য কালিতে লিখে সর্বোচ্চ নাম্বার পেল জাপানি শিক্ষার্থী
 
                                একটি খালি কাগজ জমা দেয়ার পর জাপানের নিনজা ইতিহাসের এক শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ নম্বর দেয়া হয়েছে- তার অধ্যাপক যখন বুঝতে পারেন যে, ওই কাগজে রচনাটি লেখা হয়েছে অদৃশ্য কালিতে, তখন তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
আইমি হাগা নামের ওই শিক্ষার্থী রচনা লিখতে নিনজাদের পদ্ধতি "আবুরিদাশি" অনুসরণ করেন। আর এর জন্য কয়েক ঘণ্টা ব্যয় করে সয়াবিন পানিতে ভিজিয়ে এবং পিষে ওই কালি তৈরি করেন তিনি।
তার শিক্ষক যখন ওই কাগজটি বাড়িতে গিয়ে গ্যাসের স্টোভে গরম করেন, তখন কাগজে লেখা ভেসে ওঠে।
"আমি যখন ছোট ছিলাম তখন একটি বই পড়ে এটা শিখি আমি," মিস হাগা বিবিসিকে বলেন।
"আমি শুধু চাইছিলাম যে অন্য কেউ যাতে একই ধরণের পদ্ধতি অনুসরণ না করে।"
ছোট বেলায় অ্যানিমেটেড টিভি শো দেখে মধ্যযুগীয় জাপানের নিনজা- গুপ্তচর এবং গুপ্তঘাতক বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন মিস হাগা।
জাপানের মাই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী নিনজা ইতিহাস বিষয় নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন, এবং তাকে ইগারিউ নিনজা জাদুঘর পরিদর্শন বিষয়ে একটি রচনা লিখতে বলা হয়।
"অধ্যাপক যখন ক্লাসে বললেন যে, সৃষ্টিশীলতার জন্য সর্বোচ্চ নম্বর দেবেন তিনি, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি আমার রচনা অন্যদের থেকে আলাদা করে তৈরি করবো।"
"আমি কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম, তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম যে আবুরিদাশি অনুসরণ করবো।"
মিস হাগা, যার বয়স ১৯ বছর, সারা রাত ধরে সয়াবিন পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। তারপর সেগুলো পিষে নিয়ে একটি কাপড়ে ছেকে নেন।
এরপর এর সাথে পানি মেশান-সঠিক ঘনত্ব পেতে তার প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। আর এর পর ভাল একটি ব্রাশ দিয়ে "ওয়াশি"(জাপানের এক ধরণের পাতলা কাগজ)-তে রচনা লেখেন তিনি।
শব্দগুলো শুকিয়ে গেলে, সেগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু, তার শিক্ষক যাতে একে খালি কাগজ মনে করে ফেলে না দেন সেজন্য এক কোণায় স্বাভাবিক কালিতে একটি ছোট নোট লেখেন তিনি। যেখানে লেখা ছিল "কাগজটি গরম করুন।"
নিনজা কী?
এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিনজুৎসু- যুদ্ধের এক ধরণের স্বতন্ত্র কৌশল ব্যবহার করেন- তিনিই নিনজা
জাপানের সামন্তবাদী যুগের নিনজা ঐতিহ্য শত শত বছরের পুরনো গুপ্তচরবৃত্তি এবং কৌশলের দিক থেকে নিনজারা বেশ দক্ষ
এন্টার দ্য নিনজা'র মতো মার্কিন সিনেমার মাধ্যমে নিনজারা জনপ্রিয়তা লাভ করে, কিন্তু হলিউডের চিত্রায়িত এ ধরণের নিনজার ধারণা বিভ্রান্তিকর হতে পারে
উৎস ইগারিউ এর নিনজা জাদুঘর ।
অধ্যাপক ইউজি ইয়ামাদা বিবিসিকে বলেন, তিনি রচনাটি দেখার পর "বিস্মিত" হন।
"আমি এ ধরণের প্রতিবেদন কোড ব্যবহার করে লিখতে দেখেছি, কিন্তু আবুরিদাশি ব্যবহার করে রচিত কোন প্রতিবেদন এর আগে দেখিনি," তিনি বলেন।
"সত্যি বলতে গেলে, আমার সন্দেহ ছিল যে শব্দ গুলো পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠবে কিনা। কিন্তু যখন আমি আসলেই কাগজটি বাড়িতে এনে গ্যাসের স্টোভে গরম করলাম, শব্দ গুলো খুব পরিষ্কারভাবেই ফুটে উঠলো এবং আমি ভাবলাম "বেশ ভাল!"
"আমি প্রতিবেদনটিতে সর্বোচ্চ নম্বর দিতে দ্বিধা করিনি- যদিও আমি এটি সম্পূর্ণ পড়ি নি। কারণ আমি ভাবলাম, কিছু অংশ গরম না করেই রেখে দেয়া উচিত, যাতে গণমাধ্যম এটি পেলে তার একটি ছবি নিতে পারে।"
রচনার বিষয়ে মিস হাগা বলেন যে, এর আধেয়র তুলনায় এর স্টাইলটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
"আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, অধ্যাপক কমপক্ষে সৃষ্টিশীল রচনা তৈরিতে আমার প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেবেন," তিনি বলেন।
"আর তাই আমার রচনার জন্য খারাপ নম্বর পাওয়ার শঙ্কায় আমি শঙ্কিত ছিলাম না- যদিও এর আধেয় আসলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না।"
সূত্র: বিবিসি
আরপি/ এএস
বিষয়:

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: