রাজশাহী বুধবার, ১৫ই মে ২০২৪, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


পুলিশি নির্যাতনে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র


প্রকাশিত:
৯ জুন ২০২০ ২০:৩২

আপডেট:
১৫ মে ২০২৪ ০৪:৩৩

ছবি: মার্কিন পুলিশ

পুলিশি নির্যাতনে বিশ্বের শীর্ষস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি পুলিশি নির্যাতন-নিপীড়ন হয়। নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, হেফাজতে হত্যা ও আটক-গ্রেফতারে সবার উপরে মার্কিন পুলিশ।

আর পুলিশের এসব নিপীড়নের সবচেয়ে বড় শিকার দেশটির কৃষ্ণাঙ্গ অধিবাসীরা। বর্ণবৈষম্য ও নাগরিক অধিকার বঞ্চনার পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ অধিবাসীদের চেয়ে কয়েকগুণ অত্যাচার সহ্য করতে হয় কৃষ্ণাঙ্গদের।

কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান তুমুল বিক্ষোভের মধ্যে সোমবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন মতে, পুলিশ হেফাজতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রেই। ২০১৫-১৬ সালের এক পরিসংখ্যান অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ হেফাজতে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিগুণ ও ব্রিটেনের ছয়গুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সিএনএন বলেছে, উন্নত দেশগুলোতে আটক-গ্রেফতার, হেফাজতে মৃত্যু ও কারাবন্দিদের তথ্য-উপাত্ত তেমন গোছালোভাবে পাওয়া যায় না।

এ কারণে অন্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে ঠিক কতটা নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে, তা বলা কঠিন। উদারহরণস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ঠিক কত মানুষ পুলিশ হেফাজতে মারা যায় তার সঠিক সংখ্যা জানা অসম্ভব।

ফ্লয়েড হত্যায় ন্যায়বিচারের দাবিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট-বড় প্রতিটি শহরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে সাধারণ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়েও বর্ণবাদবিরোধী এই বিক্ষোভ পৌঁছে গেছে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ফ্লয়েডের হত্যা একটা দৃষ্টান্ত মাত্র। যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেক বছর তার মতো এমন শত শত মার্কিনি পুলিশের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।

অন্যান্য উন্নত রাষ্ট্রে এমন ঘটনা খুবই বিরল। তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান তুলনা করলে দেখা যায়, মার্কিন পুলিশ জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় গুলি করে হত্যা, আটক-গ্রেফতার ও বন্দি করে থাকে।

সম্পদের পরিমাণ, বাক-স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সূচকগুলোতে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটাই এগিয়ে কিংবা সমান সমান। কিন্তু পুলিশের কর্মকাণ্ড, সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরাই এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।

বিষয়টি স্বীকার করে সাবেক এফবিআই ডিরেক্টর জেমস কমি (প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলের প্রথম দিকে দায়িত্ব পালন করেন) ২০১৫ সালে হাউস জুডিশিয়ারি কমিটিকে বলেন, কত মানুষ সিনেমা দেখতে যায় তার হিসাবও থাকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে গত মাসে কিংবা গত বছর ঠিক কত মানুষ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে, তার সংখ্যা আমি বলতে পারব না।’

ফলে এ ক্ষেত্রে প্রধানত গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনার ওপর নির্ভর করতে হয়। এ থেকে যে সংখ্যাটা সামনে আসনে সেটাও চোখ কপালে তোলার মতো।

ব্যুরো অব জাস্টিস স্ট্যাটিস্টিকসের (বিজেএস) সংগৃহীত তথ্য মতে, ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত মাত্র ১০ মাসে গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় এক হাজার ৩৪৮ জনের। গড়ে প্রতি মাসে ১৩৫ ও প্রতিদিন চারজনের বেশি।

এফবিআইয়ের রেকর্ড করা তথ্য বলছে, ২০১৮ সালেই কোনো উনকানি ছাড়াই অন্তত ৪০৭ নিরস্ত্র মার্কিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে এবং প্রতি ক্ষেত্রেই এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ন্যায়সঙ্গত হত্যা’ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এফবিআইয়ের এই উপাত্তে পুলিশের প্রত্যেক হত্যাকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

ফলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাটির তথ্যের সঙ্গে মানবাধিকার গোষ্ঠী ও সংবাদমাধ্যমগুলোর সংগৃহীত তথ্যের বড় পার্থক্য থেকে যায়। যেমন, ২০১৯ সালে ওয়াশিংটন পোস্টে পুলিশের গুলিত নিহত ১ হাজার ৪ জনের হত্যাকাণ্ড রিপোর্ট করা হয়।

 

আরপি/আআ-১১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top