রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


ভাইরাস নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বানকে চীন বলছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত


প্রকাশিত:
২৬ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৪৮

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৫০

চীন বলছে তারা যখন ভাইরাস মোকাবেলায় ব্যস্ত তখন এই তদন্তের আহ্বান অনভিপ্রেত।

 

করোনাভাইরাসের সূত্রপাত নিয়ে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান চীন প্রত্যাখান করেছে। ব্রিটেনে চীনের একজন শীর্ষ কূটনীতিক চেন ওয়েন বিবিসিকে বলেছেন এই দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং এটা করা হলে এই মহামারি মোকাবেলায় চীন যেভাবে কাজ করছে তা ব্যাহত হবে।

কোভিড নাইনটিনের উৎস এবং প্রথমদিকে কীভাবে তা ছড়িয়েছে সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেলে তা এই রোগ মোকাবেলায় সহায়তা করবে। গত বছর উহান শহরে একটা বন্যপ্রাণী বিক্রির বাজার থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়।
ইতোমধ্যে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের একটি রিপোর্টে অভিযোগ আনা হয়েছে চীন এই সঙ্কট সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছিল। ওই রিপোর্টে বলা হয়, রাশিয়া এবং কিছুটা কম করে হলেও চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তার প্রতিবেশি দেশগুলোকে লক্ষ্য করে "ষড়যন্ত্র তত্ত্ব" ছড়ায়।

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় চীনের ভূমিকা নিয়ে বারবার চীনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। আমেরিকায় মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষ এই ভাইরাসের বিস্তার বন্ধে চীন যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি এমন অভিযোগে চীনা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে।

তবে উহানের এক গবেষণাগারে এই ভাইরাস তৈরি করা হয়েছিল এমন জল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

চীনের আপত্তি কোথায়?

এই মহামারির প্রায় শুরুর সময় থেকে আহ্বান জানানো হয় যে, আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের চীনে যেতে দেয়া হোক যাতে তারা তদন্ত করে দেখতে পারে কোথা থেকে এই ভাইরাস ছড়ালো। গত বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন আগামী সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদের বার্ষিক বৈঠকে তিনি এই তদন্তের জন্য চাপ দেবেন। এই পরিষদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য নীতি নির্ধারক। অস্ট্রেলিয়া এই পরিষদের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য।

এই বৈঠকে বর্তমান মহামারি থেকে "শিক্ষা নিয়ে" আগামীতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবেলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবার কথা রয়েছে। তবে মিস চেন বিবিসিকে বলেছেন তার দেশ আন্তর্জাতিক তদন্তের বিষয়ে মত দেবে না। "নিরপেক্ষ তদন্তের প্রস্তাব রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত," তিনি বলেছেন।

"আমরা এই মুহূর্তে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছি। এই ভাইরাস দমন করার জন্য আমরা পুরোমাত্রায় মনোযোগ দিচ্ছি। এখন তদন্তের কথাবার্তা কেন উঠছে? এই তদন্ত শুধু আমাদের লড়াইয়ে ব্যাঘাত ঘটাবে তাই নয়। আমাদের সম্পদও অন্য খাতে ব্যবহার করতে হবে।"
"এই উদ্যোগ রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এতে কেউ রাজি হবে না। এই তদন্ত কারো কোন কাজে আসবে না।" মিস চেন বলেন এই ভাইরাসের উৎস নিয়ে অনেক গুজব ছড়িয়েছে। এধরনের বিভ্রন্তিমূলক তথ্য বিপদজনক বলে তিনি দাবি করেন এবং বলেন এটা একটা ''রাজনৈতিক ভাইরাস এবং করোনাভাইরাসের মত একইরকম বিপদজনক''। তার থেকেও বেশি বিপদজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন।

চীনের সঙ্গে বিবাদে জড়াতে চায় না ইইউ

বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা গর্ডন করেরা বলছেন ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকাররা এই স্পর্শকাতর সময়ে চীনের সঙ্গে একটা কূটনৈতিক বিবাদে জড়াতে এখনও পর্যন্ত অনাগ্রহ দেখিয়েছে। তিনি বলছেন ইউরোপের অনেক দেশ এই সঙ্কট সামাল দেবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য চীনের ওপর নির্ভর করছে। তারা চায় চীনের সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদানের পথগুলো খোলা রাখতে, যার মাধ্যমে তারা বুঝতে চায় এবারের ভাইরাস প্রাদুর্ভাব কীভাবে ঘটল এবং ভবিষ্যতে কীভাবে এধরনের ঘটনা ঠেকানো যাবে।

এই আদানপ্রদানও যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গেই তাদের করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের একটি নিরাপত্তা সংস্থার চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। রুসি নামে এই সংস্থার বিশেষজ্ঞ চালর্স পার্টন বলেছেন: "বাগাড়ম্বর এবং সংঘাতের পথে হাঁটার সময় এখন নয়। কারণ বিষয়টি অনেক জটিল।"

তবে গর্ডন করেরা বলছেন আমেরিকায় চীনের এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপকভাবে রাজনীতি করা হচ্ছে, বিশেষ করে সেখানে নির্বাচনের মুখে রাজনৈতিক পয়েন্ট স্কোর করতে চীনের বিরুদ্ধে কে কতটা কঠোর হতে পারে এবং ভাইরাস কোথা থেকে এল, কীভাবে ছড়ালো এসব দাবি কে কতটা জোর গলায় করতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে ।


কী আছে ইইউর রিপোর্টে?

ইইউ তাদের রিপোর্টে দাবি করেছে চীনা কর্মকর্তারা এবং দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম এই ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে তাদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে। উহান থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তির কথা তারা এড়িয়ে গেছে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে চীনে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কিছু সামাজিক যোগাযোগ চ্যানেলে এমন তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে যে আমেরিকার সামরিক কর্মকর্তাদের সফরের সঙ্গে এই ভাইরাস ছড়ানোর সম্পর্ক আছে।


রিপোর্টের লেখক আরও বলেছেন রাশিয়া ইউরোপে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম - তাদের দাবি অনুয়ায়ী - এই সঙ্কট মোকাবেলায় ইইউর ভূমিকাকে খাটো করে সমন্বিত প্রচার চালিয়েছে।

 

বিবিসি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top