রাজশাহী শুক্রবার, ১৪ই মার্চ ২০২৫, ৩০শে ফাল্গুন ১৪৩১


মাদ্রাসা যেন 'নির্যাতন কেন্দ্র'


প্রকাশিত:
২৯ অক্টোবর ২০১৯ ২০:৫০

আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ০১:০৫

ছবি: সংগৃহীত

নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় দাউরা শহরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হতো তার বিবরণ পড়লে যে কারোই গা শিউরে উঠবে। কেউ চাইবে না এরকম একটি প্রতিষ্ঠানে কোন শিশু এক বছর তো দূরের কথা, এক মিনিটের জন্যেও সেখানে লেখাপড়া করুক।

এধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তল্লাশি চালাচ্ছে নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী।

বেসরকারি এসব ধর্মীয় স্কুল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে শিশুদের যারা সেখানে ভয়াবহ রকমের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের অনেকেরই শরীরেই রয়ে গেছে সেসব নির্যাতনের চিহ্ন।

যেসব শিশুদের নিয়ে পিতামাতারা বাড়িতে সমস্যায় পড়েছিল, কিম্বা যেসব তরুণ ছেলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল, অথবা জড়িয়ে পড়েছিল ছোটখাটো অপরাধের সাথে, তাদের পরিবার তাদেরকে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতো, কিন্তু তারা ধারণাও করতে পারতো না তাদের প্রিয় সন্তানেরা সেখানে কী ধরনের দুর্বিষহ জীবন কাটাতো।

তল্লাশি চালানোর পর কর্মকর্তারা এসব প্রতিষ্ঠানকে 'মাদ্রাসা' নয় বরং উল্লেখ করছেন 'নির্যাতন কেন্দ্র' হিসেবে।

নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারির নিজের শহর দাউরায় এরকম যে বাড়িটির সন্ধান পাওয়া যায় তাতে দুটো প্রধান ভবন। তার একটি ছিল রাস্তার একপাশে যেটি মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, সেখানে শিশুদের কোরান পড়ানো হতো। আর রাস্তার আরেক পাশে শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা।

সেটি ভগ্নপ্রায় একতলা একটি বাড়ি। তাতে আছে পাঁচ থেকে ছ'টি অন্ধকারাচ্ছন্ন স্যাঁতস্যাঁতে ঘর, সেখানে বদ্ধ পরিবেশ, দরজা জানালায় লোহার গ্রিল লাগানো।

এসব ঘরে যেসব শিক্ষার্থীরা থাকতেন বিবিসিকে তারা বলেছেন, ঘরগুলো আসলে জেলখানার ছোট ছোট কক্ষের মতো। একেকটা কক্ষে রাখা হতো ৪০ জনের মতো শিক্ষার্থী এবং তাদের পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো।

তারা বলেছেন, শেকল পরা অবস্থাতেই প্রস্রাব-পায়খানা করার জন্যে তাদেরকে টয়লেটে যেতে হতো।

এই জায়গাতে তারা খাওয়াদাওয়া করতো ও ঘুমাতো।

সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকে বলেছেন, মারধর ও ধর্ষণ করার জন্যে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা প্রায়শই তাদেরকে ঘরের বাইরে নিয়ে যেতেন।

ওই কেন্দ্রে আটক ছিলেন এরকম একজন রাবিউ উমর বলেছেন, "ওটা ছিল এই দোজখের মতো।"

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই মাদ্রাসা থেকে মোট ৬৭ জন বন্দী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অল্পবয়সী কিশোর যেমন রয়েছে - তেমনি রয়েছে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষও।

পুলিশ জানিয়েছে, মাদ্রাসার নিবন্ধন খাতায় তারা মোট ৩০০ জন শিক্ষার্থীর নাম পেয়েছেন। তারা ধারণা করছেন, এর আগের সপ্তাহে মাদ্রাসার ভেতরে দাঙ্গা লেগে গেলে সেসময় অনেকেই ওখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, গত এক মাসে প্রায় ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে যারা এরকম আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিবেশে বসবাস করতো।

শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তাদের হাতে পায়ে শুধু যে শেকল পরিয়ে রাখা হতো কিম্বা চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন তাই নয়, দিনের পর দিন তাদেরকে না খাইয়ে রাখা হতো।

নির্যাতিত এক দল শিক্ষার্থীকে প্রথম উদ্ধার করা হয় সেপ্টেম্বর মাসে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কাদুনা শহরের রিগাসা এলাকায়।

একজন ছাত্রের এক আত্মীয় পুলিশকে খবর দিলে সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫০০ জনকে উদ্ধার কার হয়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও ছিলো।

পরে এরা সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের কাছে যে পরিবেশে বসবাসের বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে অনেকেই স্তম্ভিত হয়েছেন।

 

 

আরপি/ এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top