রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


মলাটের স্মৃতিতে ছেলের সাথে চঞ্চল চৌধুরী


প্রকাশিত:
১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১৬

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০২:০৮

ছবি: সংগৃহীত

স্মৃতির অ্যালবামে ধুলো পরে যায় ঠিকই। কিন্তু কোনো কোনো স্মৃতি থেকে যায় অমলিন। সারা বছর না হোক, বছরের শুরুতে আমাদের জন্য বাজেট হতো বিশ টাকা। সে সময় বিশ টাকা হাতে পেলে নিজেকে বিল গেটস মনে হতো। সে বিশ টাকার হিসাব ছিল একেবারে আলাদা।

আইসক্রিম, লজেন্স বা বিস্কুটের হিসেবে সে টাকা খরচ হলে পিঠে কালশিটে পরত নির্ঘাত। সে টাকায় আসত হরেক রকমের রঙিন কাগজ কিংবা গ্লসি পেপারের ইংরেজি ম্যাগাজিনের খোলা পাতা।

সে সব পাতায় ছবি থাকত কুংফু কারাতের, ড্রাগনের আর চীন দেশের নাম না জানা কোনো কিশোরীর! সে সব চকচকে রঙিন কাগজ কোথা থেকে আসত তার কোনো হদিস আমাদের জানা ছিল না। কিন্তু নির্দিষ্ট দোকানে বিশ টাকা জমা দিলেই মিলত সেই জাদুর কাঠি। রঙিন ছবির সেসব কাগজ না পেলে খোঁজ পড়ত দেশীয় ম্যাগাজিনের। তারও দেখা না পেলে সংবাদপত্রের।

পছন্দের কাগজ কিনে বছরের শুরুতে পাওয়া নতুন বইয়ের ওপর লাগানো হতো মলাট। বছরের শুরু হবে, হাতে বই আসবে, সে বইয়ে লাগবে নতুন মলাট! কিশোর বয়সে এ ছিল বিরাট এক ‘অ্যাডভেঞ্চার’। মলাট লাগানোর জন্য একটা দিন বরাদ্দ থাকত। সে দিন কোনো পড়াশোনা ছিল না বলে দিনটা ছিল আনন্দের। বই সামনে থাকবে কিন্তু পড়া হবে না!

চোখ বুজে শৈশবে ফিরে গেলে সবার নাকেই ফিরে আসে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ। চোখে ভাসে বইয়ের রঙিন প্রচ্ছদ। সেই বই যাতে ছিঁড়ে না যায়, তার জন্য কত চেষ্টা। পুরনো ক্যালেন্ডার কেটে কিংবা বাজার থেকে মোটা কাগজ কিনে এনে বইয়ের ওপর আলাদা মলাট লাগানোর অভিজ্ঞতা কম-বেশি সবার জীবনেই আছে।

ফেলে আসা শৈশব চাইলেও ফিরে পাওয়া যায় না। কিন্তু নতুন প্রজন্মের মাঝে সেই অনুভবটুকু তো ছড়িয়ে দেওয়া যায়। সেটাই করলেন জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। নিজের ছেলের নতুন বইয়ের মলাট লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এর মাধ্যমে চঞ্চল যেমন ফিরে গেছেন তার চেনা শৈশবে, আবার অনুসারীদের মনেও স্মৃতির উসকানি দিয়েছেন। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ছেলে শুদ্ধ’র সঙ্গে তোলা একটি ছবি শেয়ার করেন চঞ্চল। সেখানেই দেখা গেল, ফ্লোরে বসে নতুন বইতে মলাট লাগাচ্ছেন অভিনেতা।

ক্যাপশনে চঞ্চল লিখেছেন, ‘অযথাই জীবনটাকে আমরা অনেক বেশী জটিল করে ফেলেছি। সহজ সরল জীবনাচরণ থেকে সরে এসেছি বহু দূরে। প্রাণের আনন্দ মেলানোর মূহুর্তগুলো আমরা এখন আর সহসা খুঁজে পাই না। তাই ছেলের নতুন ক্লাসের বইয়ের মলাট লাগানোর উৎসবেও মাতোয়ারা থাকি। অন্যরকম সুখ, ভালো লাগার অন্যরকম অনুভূতি। ফিরে যাই শৈশবে। সকালের রোদে পিঠ দিয়ে, পিঠাপিঠি ভাইবোনের পুরাতন বইগুলোকে মলাট দিয়ে নতুন বানানোর উৎসবে।

চঞ্চল আরও লিখেছেন, ‘আগে জীবনে প্রাণ ছিল, শত দারিদ্র্যে সুখ ছিল, সেই সুখগুলো না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে।’

সন্তানদের একটুখানি আনন্দ দিতে পিতা-মাতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে চঞ্চল বলেছেন, ‘অন্তত সন্তানের নতুন ক্লাসের নতুন বইতে মলাট লাগানো হলো কিনা, খবরটা নিতে পারেন। আপনার ভালো লাগবে কিনা জানি না, আপনার সন্তানের কিন্তু ভালো লাগবে।’

 

আরপি/ এমএএইচ-০৯

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top