রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


করোনায় কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপন


প্রকাশিত:
১৮ মে ২০২০ ০৪:৩২

আপডেট:
১৮ মে ২০২০ ০৪:৩৫

কিন্ডারগার্টেন স্কুল

বৈশ্বিক মহামারী প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীর মত বাংলাদেশেও লাখ লাখ মানুষের অবস্থান ঘরে। করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন আবিস্কার না হওয়ায় এ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ ঘরে থাকা ও নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ১৮ মার্চ থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে বাড়িতে অবস্থান করছেন সবাই।

এদিকে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেসরকারী কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়।

সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে লেখাপড়া করছে প্রায় ১ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে প্রায় ছয় লাখের মত। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার প্রায় ৩০ ভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে এ স্কুলগুলো।

কিন্ডারগার্টেন স্কুল এ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এসব কিন্ডারগার্টেনের ছয় লাখেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

একই অবস্থা রাজশাহীর মোহনপুরে গড়ে উঠা ৩৯টি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কর্মরত প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষকের। জানা গেছে, এসকল স্কুলে লেখাপড়া করেন প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের ফি-তে এসকল শিক্ষকের বেতন দেয়া হয়। করোনা সংক্রমণ রোধে বাড়িতে অবরুদ্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এই শিক্ষকরা। সেই সঙ্গে বহু কষ্টে দিন পার করছেন এসকল স্কুলের সাথে সংশ্লিষ্ট পিয়ন, বুয়া, অফিস সহকারী ও অন্যান্যরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ ক’জন শিক্ষক জানান, মোহনপুরসহ সারাদেশে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাসিক বেতন বড়জোর ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এই বেতনে তাদের সংসার চলে না। বাড়তি আয় হিসেবে তারা কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান। করোনা ভাইরাসের কারণে অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো কিন্ডারগার্টেনও বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগও বন্ধ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের ওপরই এসব কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক ও কর্মচারীদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।

তারা আরও জানান, শিক্ষকরা বর্তমান পরিস্থিতিতে সঙ্গীন অবস্থায় থাকলেও সম্মানের খাতিরে তারা ত্রাণের জন্য দাঁড়াতেও পারেন না। কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকরা কখনো সরকারের কাছে বেতন-ভাতার জন্য আবেদন করেননি। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা মাসিক বেতন দেয়নি। যার দরুণ বেশীরভাগ স্কুলের শিক্ষকরা বেতন পায়নি। এর ফলে অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে তাদের সব বন্ধ। স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছ থেকে বেতন না পাওয়ায় শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছেন না।

উপজেলার ধুরইল আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান আফসার আলী জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলি যদি আরো দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে, তবে না খেয়ে মরা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, ঘরে অবরুদ্ধ কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকদের জীবন-জীবিকার জন্য রাজশাহী জেলা পরিষদে ত্রাণের জন্য আবেদন করেন। ত্রাণ দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অনুমতি দিলেও এ পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা মেলেনি। সে জন্য এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহবান জানান শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পূর্ণবাসন বিষয়ক সম্পাদক, রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি ও মোহনপুর ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ বলেন, করোনার কারণে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যোগ হয়েছে বাড়ি ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল। প্রতিমাসে স্কুল চালানোর জন্য বাড়ি ভাড়া দিতে হয় ১৬ হাজার টাকা ও বিদ্যুৎ বিল ২ হাজার টাকা। আমার মত একই দশা সকল স্কুলের।

শিক্ষার্থী অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের সন্তান আমাদের শিক্ষার্থী । তাদের লেখাপড়ার সকল দায়িত্ব আমাদের। আমরা শিক্ষকদের মাসিক বেতন পরিশোধ করতে পারছিনা। তারা অনেক বিপদের মধ্যে রয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, আপনাদের বেতন পরিশোধ করতে কষ্ট হবে, তবুও মানবিক দিক বিবেচনা করে এই দুঃসময়ে শিক্ষার্থীদের বেতনভাতা পরিশোধ করুন।

তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সরকার যদি রোহিঙ্গাদের পূর্ণবাসনের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে তাদের দেকভাল করতে পারেন, তাহলে নিজ দেশের নাগরিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াবেন বলেও আমাদের বিশ্বাস।

তিনি আরও বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুল যদি না থাকতো, তাহলে সরকারকে আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার বিদ্যালয় স্থাপন করতে হতো। আর প্রতি মাসে শিক্ষকদের বেতন বাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো। সেদিক থেকে আমরা সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে দিয়েছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে আমাদের জন্য প্রণোদনা বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।

এছাড়াও সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, কিন্ডারগার্টেন দেশের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের দায়িত্ব নিয়ে সরকারের ভার লাঘব করছে, তাই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়ানো সরকারের কর্তব্য বলে দাবি করেন তারা।

 

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top