রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


একাডেমিক সময়ে উচ্চস্বরে গান-বাজনা, বিঘ্নিত পাঠদান কার্যক্রম


প্রকাশিত:
৬ মার্চ ২০২০ ০৪:৫৭

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১২:৩১

ছবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ১২৩ নম্বর কক্ষে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস চলছে। হঠাৎ করেই ভেঁপু বাশি ও ঢাক-ঢোলের শব্দ। কিছুক্ষণের জন্য লেকচার বন্ধ করলেন শিক্ষক। লেকচার থেকে মনযোগ হারিয়ে শিক্ষার্থীরা জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছেন। কী হচ্ছে বাইরে তা দেখতে যেন উদগ্রীব তারা। এরই মধ্যে ভবনটির পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটিতে দেখা মিলল একটি শোভাযাত্রার। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পুনর্মিলনী উপলক্ষে শোভাযাত্রাটি বের করেছিল বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এটিই প্রথম নয়, প্রতিনিয়ত র‌্যাগ ডে, মাইকিং, মিছিল-মিটিংয়ের শব্দে পঠন-পাঠন কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ রয়েছে ৫৯টি। ইনস্টিটিউট রয়েছে আরো ৫টি। বিভাগ ও ইনস্টিটিউট মিলিয়ে এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো বিভাগের র‌্যাগ ডে, পুনর্মিলনী, রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর মিছিল-মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা বিভিন্ন বিসিএস কোচিংয়ের মাইকিং তো রয়েছেই। রুটিন করে ক্যাম্পাসে এসব কর্মসূচি করার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে একাডেমিক কার্যক্রম চলাকালীন ক্যাম্পাসে যেকোনো প্রকার গান-বাজনা, উচ্চস্বরে মাইক বাজানো এসবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- উচ্চশব্দের কারণে প্রতিনিয়তই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও অফিসিয়াল কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। র‌্যালিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে বক্স বাজানো, ভেপু, বাঁশির শব্দে পাঠে মনোযোগ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সামনে লেকচার প্রদানেও শিক্ষকদের অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের চতুর্পাশ দিয়েই রয়েছে রাস্তা। এসব রাস্তা দিয়ে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হওয়া মিছিল-মিটিং, শোভাযাত্রার শব্দে গ্রন্থাগারে অধ্যয়নরত শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে।

আরোও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ নওগাঁর আমীন উদ্দীন

খোঁঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদুল্লহ কলা ভবনের সামনের আম বাগানে বাংলা ও আরবি বিভগের অ্যালামনাই অনুষ্ঠান শুরু হয় বৃহস্পতিবার সকালে। তাই সকাল থেকেই শুরু হয় বক্স বাজানো। অথচ পাশেই দুটি একাডেমিক ভবনে ১৩টি বিভাগের ক্লাস চলছিল। বক্সের শব্দে বিঘ্নিত হচ্ছিল পাঠদান কার্যক্রম। এ ছাড়াও ক্যাম্পাসে থাকা বিভিন্ন বিসিএস কোচিংয়ের পক্ষ থেকে প্রায়ই উন্মুক্ত সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এসব সেমিনারের কথা শিক্ষার্থীদের জানিয়ে তাদের মনযোগ আকর্ষণ করার জন্য ক্যাম্পাসে মাইকিং করে কোচিং সেন্টারগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামতাজ উদ্দিন কলা ভবনের এক শিক্ষার্থীর বলেন, উচ্চশব্দের কারণে আজ শিক্ষক ঠিক মতো ক্লাস নিতে পারেননি। শিক্ষক ক্লাসের সময় শেষ হওয়ার আগেই বের হয়ে চলে গেছেন। তিনি আরো বলেন, শুধু যে আজকেই এ সমস্যা তা নয়, প্রায়ই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

জানতে চাইলে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম খলিলুর রহমান খান বলেন, অ্যালামনাইয়ের উদ্দেশ্য হলো প্রাক্তন-বর্তমান সকলে একত্র হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা। প্রাক্তনরা তাদের বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা করবে। বিভাগের কেউ দরিদ্র শিক্ষার্থী হলে তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে। কিন্তু বর্তমানে চিত্র উল্টো। এখন অ্যালামনাইয়ের অর্থ ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে গান বাজনা করা। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানগুলো যদি ছুটির দিনগুলোতে করা যেত তাহলে কোনো পঠন-পাঠন কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হত না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, বিশ্ববদ্যালয়ের সকল বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে অফিস চলাকালিন (সকাল ৯টা-বিকাল ৫টা) কোনো প্রকার সাউন্ড সিস্টেম, মিছিল মিটিং করা যাবে না। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তা না মেনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। একজন শিক্ষক নিজেই অভিযোগ করে আবার সে নিজেই সেই কাজ করছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সবার সচেতন হয়ে সহযোগিতা করতে হবে।

 

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top