শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সাময়িক বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বলিয়াডাইং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবিরকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ দুপুরে গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আবুল হায়াত এই বরখাস্তের আদেশ দেন।
ইউএনও বলেন, "আজ থেকে বিগত দিনের সকল দূর্নীতি বন্ধ হবে। খেলার মাঠে সবাই খেলবে, কোনো ধরনের অনিয়ম হবে না। আপাতত তদন্ত হবে, ততদিন সাময়িক বরখাস্ত থাকবে প্রধান শিক্ষক।"
এদিকে গত তিন দিন ধরে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে আসছিল, প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত। বারবার অভিযোগ জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, ফলে শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করে এবং প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানায়।
আজ দুপুরে স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ইউএনও প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীরা মনে করছে, এই পদক্ষেপ তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রথম সাফল্য।
গ্রামের একটি বিদ্যালয় হওয়ায় আন্দোলনটি প্রথমদিকে তেমন গুরুত্ব পায়নি বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করলেও, তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। তারা আরও জানান, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তাই প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন।
ইউএনও আরো জানিয়েছেন, দ্রুতই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। তদন্ত শেষে প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন এবং ইউএনও’র দ্রুত পদক্ষেপে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা আশা করছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রশাসনে স্বচ্ছতা এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার সুরক্ষিত হবে।
ইউএনও’র আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আপাতত ক্লাসে ফিরে গেছে। তবে, তারা এখনো দাবি করছে যে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ করতে হবে। প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ না হলে আবারও তারা কঠোরতম আন্দোলন করার হুশিয়ারি দেন।
এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের পক্ষের কিছু প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে, এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর তারা আর চড়াও হতে পারেনি।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির একজন সৎ মানুষ এবং তার নেতৃত্বে বিদ্যালয়ে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তারা বলেন, "এমন একজন মানুষের পদত্যাগ যাতে না হয়, সেই কারণেই আমরা প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে স্যারের পাশে দাঁড়াতে চাই।"
তবে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্যই এই প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অতর্কিতে হামলার চেষ্টা করে। তাদের দাবি, প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি, অনিয়ম, ও স্বেচ্ছাচারিতা ঢাকতে এই প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ভাড়া করে আনা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আরও জানান যে, তাদের অভিভাবকদেরও বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। তারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানান, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: