রাজশাহী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


বসন্তের রঙ ছড়াচ্ছে পলাশ


প্রকাশিত:
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:৩১

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ০৫:৪৩

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

শীত আছে, আবার শীত নেই। এ সময়ে আবহাওয়া বোঝা মুশকিল! ধূসর শীতের আড়মোড়া ভেঙে শীতের হিমেল হাওয়া বিদায় নিয়ে প্রকৃতিতে উঁকি দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত।

ও পলাশ, ও শিমুল
কেন এ মন মোর রাঙালে
জানি না, জানি না
আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে…’


আগুনরাঙা ফাগুন এলেই মনে পড়ে লতা মঙ্গেশকরের এই কালজয়ী গান। বাংলার বসন্ত মানেই পলাশ। আর পলাশ মানেই পর্ণমোচী বৃক্ষের লাল আভা।

ফাগুন মানে আগুন রাঙা পলাশ, বসন্ত বাতাসে পলাশের গন্ধ, ফুলে ফুলে মৌটুসী আর বুলবুলির অবাধ ছুট। পলাশ মানেই অপূর্ব বাংলাদেশ।

এ যে ফাল্গুন মাস! চারদিকের প্রকৃতিই যেন সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে আছে। রাজশাহী কলেজের প্রশাসন ভবন অতিক্রম করে লাইব্রেরির দিকে যেতে চোখে পড়ল বিশাল পলাশগাছ। পাতা নেই বললেই চলে। গাছভর্তি ফুল আর ফুল। কমলা রঙের পলাশ ফুল দেখে মন ভরে যাবে যে কারোর। মুগ্ধ হয়েঅনেকেই ক্যামেরা বের করে প্রেম বন্দি করতে ভুলেননা।

বসন্তের রঙ ছড়াচ্ছে পলাশ

নিজেকে ফ্রেম বন্দি করছিলেন রাজশাহী কলেজের দর্শন বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্রী মাকসুরা ও তার সহপাঠিরা। মাকসুরা জানান, আমরা বন্ধুরা কলেজে ক্লাসে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এই পলাশ গাছের দিকে নজর পড়লো। ক্যামেরা তাক করতেই দেখি পলাশের মগডালে ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে দুটি কাঠবিড়ালি। মধু খাচ্ছে ফুলের। ক্যামেরা তাক করেও সুবিধা করা গেল না কাঠবিড়ালির ছবি তোলার বেলায়। ক্যামেরা তাক করতে করতে অন্য ডালে ছুট দেয়। মগডালে আরও এসেছে মৌটুসীর দল, হালকা সবুজ মৌটুসীটা মেয়ে পাখি। আর কুচকুচে কালোটা পুরুষ। ওদের ছবিও তোলা দায়! এত দ্রুত তিড়িংবিড়িং করে এ ডালে–ও ডালে ছোটে, মোবাইল ফোলের ক্যামেরার ছোট লেন্সে তাদের পাওয়াই দায়। এদের দেখেই মণে হচ্ছে এখন বসন্ত এসে গেছে। রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন রকমের ফুল কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে যার মধ্যে পলাশ ফুল অন্যতম একটি ফুল। যা সবাইকে মুগ্ধ করছে।

কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র সাইমুল ইসলাম বলেন, বসন্তের সৌন্দর্য মানেই পলাশ ফুল। আমাদের কলেজের পলাশ ফুলের সৌন্দর্য কলেজকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তোলে। বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে গানের চরণটির মত যেন ঋতুরাজ বসন্ত এসে উকি দিচ্ছে মনে। আর বসন্ত আসলেই সবার মনে ফাগুনের উত্তলা বাতাসে পলাশ ফুলকে মনে করিয়ে দেয়। মনে হয় বসন্ত মানেই পলাশ ফুল। মানুষ মুগ্ধ হয় পলাশের ফাগুনের উত্তলা হাওয়ায়। পলাশ ফুলের সৌন্দর্য মানুষের নজর কাড়ে, হৃদয়ে এক প্রশান্তির অনুভুতি বয়ে আনে।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী নাইমা বলেন, প্রতিটি ঋতুর মধ্যে
পলাশ বসন্ত জুড়েই মুগ্ধতা ছড়ায়। সবুজ বনের মাঝে পলাশ ফুলের সৌন্দর্য মনে হয় সবুজের বুকে আগুন লেগেছে। পলাশ ফুলের সৌন্দর্য মানুষের নজর কাড়ে, হৃদয়ে এক প্রশান্তির অনুভুতি বয়ে আনে। প্রকৃতি পাবে বসন্তের ছোয়া এবং সাদরে বরণ করবে ঋতুরাজ বসন্তকে। আর ঋতুরাজে আগমন ঘটে বিভিন্ন ধরনের সব রঙিন ফুলের। এর মধ্যে পলাশ অন্যতম।

রাজশাহী কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, পলাশ ফুল মানেই বাঙালিদের মনে এক প্রশান্তির চেতনা। পলাশ ফুলের লাল রঙ মনে করিয়ে দেয় বাঙালিদের জাতীয়তাবাদ, আর্তনাদ ও চেতনা। বিভিন্ন নগরায়ণ এর কারণে পলাশ ফুলের বিলুপ্ত হয়ে গেলেও রাস্তার ধার,নদীর পাড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পলাশের সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে।

জানা যায়, পলাশ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম (Butea monosperma)। ইংরেজিতে এর নাম parrot tree। পলাশ একটি বৃক্ষ জাতীয় ফুল গাছ। উচ্চতা গড়ে ১৫ মিটার। এই গাছের শাখা-প্রশাখায় থোকায় থোকায় ফুল ফোটে। ফুল দেখতে অনেকটা বাঘের নখের মতো। শাখাপ্রশাখা আঁকাবাঁকা। এই গাছের পাতা গাঢ় ও সবুজ। গ্রীষ্মকালে নতুন পাতা গজায় এবং ফুল ফোটার সময় গাছ তাকে পাতাশূন্য। ফুল ফোটা শেষে এই গাছে ফল ধরে। পলাশ ফুল বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের উপমহাদেশে, নেপাল, লাওস এবং মিয়ানমার ও ভিয়েতনামেও জন্মে থাকে। হিন্দুদের দোলযাত্রায় এই পলাশ ফুলের রঙ দিয়ে হলি খেলা হয়। পলাশ ফুলের সৌন্দর্য ছাড়াও এতে রয়েছে ভেষজগুণ, এটি ঔষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পলাশ কাঠের তৈরি করা চামচ হিন্দুদের পূজাতে বিভিন্ন ধরনের রীতিনীতিতে ব্যবহার করা হয়।

 

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top