১০ টাকার গোলাপের দাম ১০০ টাকা!

ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে ফুল উপহার দেওয়া বহুল প্রচলিত রীতি। ভালোবাসা দিবসে তাই প্রিয়জনের মুখে হাসি দেখতে ফুলের চেয়ে ভালো উপহার বুঝি নেই। একদিকে ভালোবাসার রঙ, অন্যদিকে ফুল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এ দুয়ে মিলে গোলাপ বেশ দাপুটে। এবার ভালোবাসা দিবসে ফুলের দোকানে ভিড় দেখার মতো। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একটি গোলাপের জন্য ক্রেতাকে ব্যয় করতে হচ্ছে ১২০ টাকা। বসন্ত ও ফাল্গুনকে ঘিরে ফুলের বাজারে আগুন দাম। বিভিন্ন ধরনের ফুলের সৌন্দর্য ও সাজসজ্জায় ফুলের বাজার। বিক্রি হচ্ছে নানা রকমের ফুল। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে গত চার পাচঁ দিন থেকেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে নানা রকমের ফুল। তবে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় প্রতিটি ফুলের দাম ঊর্ধমুখী বলে দাবি বিক্রেতাদের।
বিক্রেতারা বলছেন, গোলাপ ছাড়া ভালোবাসা প্রকাশের কথা চিন্তায় করা যায় না। তাইতো বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস ঘিরে একটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। অতিরিক্ত মূল্যের দিয়ে কিনে নিয়ে আসায় দাম বেশি হাঁকতে হচ্ছে।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে নগরী প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট ও মহাসড়কের পাশে ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। ফুলের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতার চাপ নেই। তবে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাসমাগম বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজশাহীর সাহেব বাজারে জরি মার্কেটের ফুল বিক্রেতা মোঃ মাইনুল ইসলাম বলেন, যশোরের ফুলের মোকামের দাম বেশি হওয়ায় বিক্রেতারাও ফুল বিক্রি করছেন বেশি দামে। প্রতিটি গোলাপের দাম ১০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকা, জারবেরা ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা, কারোটিনা ৪০ টাকা,ও ফুলের বুকেট ৪০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পহেলা ফাল্গুন ও বসন্ত দুইটির প্রাধান্য দিয়ে বিক্রি হচ্ছে নানা রকমের ফুল এবং ক্রেতাদের ভিড় জমছে বিকেল থেকে। পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে ফুলের দাম অনেক বেশি। ৭ তারিখ রোজ ডে উপলক্ষে লাল গোলাপ ৭০ টাকা ও হলুদ গোলাপ ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সাহেব বাজার মোড়ের ফুল ক্রেতা রাব্বি বলেন, পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের দাম অনেক বেড়েছে তবে ফাল্গুন ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও বিয়ে বাড়ি উপলক্ষে কিনছেন বিভিন্ন রকমের ফুল। আমাদের অতিরিক্ত দাম দিয়েই ফুল কিনে নিয়ে আসতে হচ্ছে। লাল গোলাপ ১০০ পিসের ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। আর কালারিং ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকায়। এর মধ্যে রোগে পচন ধরে ফুল নষ্ট হয়েছে। ফুলের তেমন আমদানিও নেই। আমাদের গোলাপ কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। বিক্রি তো ১০০ টাকার নিচে করলে লোকসান হবে। কারণ সব ফুল তো বিক্রি হবে না। অবিক্রিত ফুল নষ্ট হয়ে যাবে।
নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় ফুল নিয়ে বসেছেন নিউ রোজ পুষ্পবিতানের স্বত্বাধিকারী মোঃ আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, আমরা শুধু ঈদ, ভালোবাসা দিবসসহ বিশেষ দিনগুলোতে ফুল কিনে বিক্রি করি তাই নয়; সারাবছরই ফুল বিক্রি করে থাকি। আগে প্রতি পিস গোলাপ কিনতাম ৩ থেকে ৫ টাকার মধ্যে। আস্তে আস্তে দাম বেড়ে ৭ থেকে ৮ টাকা হল। কিন্তু সেই গোলাপ প্রতি পিস এখন কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। বিক্রি করছি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। গোলাপের দাম বেশি হওয়ায় এবার তেমন ক্রেতাও নেই। দিন শেষে ফুল যদি থেকে যায় তাহলে লোকসানে বিক্রি করতে হবে।
পাইকারি ফুল ক্রেতা নজরুল বলেন, আমরা বাগানে বাগানে ঘুরে অল্প সংখ্যক ফুল পেয়েছি। গোলাপ কিনতে হয়েছে প্রতিযোগিতা করে। প্রতিটি লাল গোলাপ কিনতে হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। আর সাদা বা হুলুদ গোলাপ কিনতেই পড়েছে ৫০ টাকার উপরে। আসলে ফুলের ফলন খুব একটা হয়নি। আমরা প্রতি বছর যে বাগান থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার ফুল কিনতাম এবার সেই বাগান থেকে মাত্র ৫০০ পিস কিনলাম।
ফুল ক্রেতা শাহাদাত হোসেন বলেন, একটি গোলাপের দাম চাচ্ছে ১২০ টাকা। সর্বশেষ ১০০ টাকা করে দুটি গোলাপ কিনলাম। ১০ টাকার গোলাপ কিভাবে ১০০ টাকা বিক্রি হয়? আমি গোলাপ কিনতে এসে রীতিমতো অবাক হয়েছি। তবে দরকার হওয়ায় ১০০ টাকায় কিনলাম। সাধারণ মানুষ এই দামে গোলাপ কিনতে পারবে না।
আরেক ফুল ক্রেতা মেহেদী হাসান সোহাগ বলেন, আমার বন্ধুর জন্য গোলাপ কিনতে এসেছিলাম। ১০টি গোলাপের টাকা দিয়ে ১টি গোলাপ কিনলাম। আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই ভালবাসা দিবসে প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানাতে গোলাপ ফুল কিনতে এসেও বিড়ম্বনায় পড়েছি। গোলাপ কেনার পরে আর ফিরে যাওয়ার রিকশা ভাড়া নেই। এখন হেঁটে হেঁটে ফিরছি।
জিরো পয়েন্ট মোড়ে ফুল কিনতে আসেন নাদিয়া ইসলাম। তিনি বলেন, পহেলা ফাল্গুন ও বিশেষ করে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের দাম অনেক বেশি। তবুও বেশি দামেই কিনছেন লাল, হলুদ গোলাপসহ জারবেরা ফুল।
শুধু গোলাপের দাম বেড়েছে তা নয়; গোলাপের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে, গাঁদা, হাসনা হেনা, সূর্যমুখী, চন্দ্রমল্লিকা ও জিনিয়াসহ বিভিন্ন ফুলের দাম। চায়না কান্ডিশন ফুলও এখন বেশ জনপ্রিয়।
বিভিন্ন রংয়ের জারব্রা ফুলের চাহিদা রয়েছে এখন। কিছুটা ছোট সূর্যমুখীর মতো দেখতে এই ফুলের দাম প্রতি ডাটা ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এই ফুলটি অনেক নারীই এ দিনটিতে খোপায় বেলি ফুলের মালা গাঁথতে পছন্দ করেন। প্রতিটি মালার দাম পড়ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। গাঁদা ফুলের মালার জন্যও একই অর্থ খরচ করতে হবে ক্রেতাকে।
আরপি/ এমএএইচ
বিষয়: ১০ টাকা গোলাপে ১০০ টাকা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: