রাজশাহীর রাজাকারের তালিকায় পাবলিক প্রসিকিউটর টিপুও রয়েছেন

রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধীদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে রাজশাহী বিভাগের ৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) নাম রয়েছে আন্তজার্তিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুসহ ৫ জনের নাম। আবার তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট মহসিন আলীর নামও রয়েছে সেই তালিকায়।
রাজাকারের তালিকায় এইসব ব্যক্তিদের নাম দেখে প্রচণ্ড ক্ষেপেছেন শহীদ পরিবারের সন্তান আব্দুস সালামের পরিবারের সদস্যরা। আব্দুস সালামের পরিবারের ৫ জন সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত হন। তবে ওই সময় আব্দুস সালাম পাকিস্তানী হানাদারদের ভয়ে ভারত পালিয়েছিলেন। তাঁর নামটিও রয়েছে এই তালিকায়।
প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় রাজশাহী বিভাগের ১ থেকে ১৫৪টি তালিকা রয়েছে। এই তালিকায় কয়েক শ’ ব্যক্তির নাম রয়েছে। যাদের কয়েকজনের নাম দ্বিতীয়বারও রয়েছে। এমনকি একজন রাজাকারের নাম রয়েছে দ্বিতীয়বার অভিযোগকারী হিসেবে। রাজশাহী বিভাগের রাজাকারদের তালিকায় যে নামগুলো রয়েছে ৮৯ নম্বর তালিকায় থাকা ৫ জনের মধ্যে অপর দু’জন হলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এসএস আবু তালেব।
যদিও এই ৮৯ নম্বর তালিকার মন্তব্যের ঘরে লিখা আছে তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিলে। এর বাইরে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। সেই হিসেবে ধরে নেওয়া হয় এই ৫ ব্যক্তি রাজাকার ছিলেন না বলেই তাঁদের অব্যাহতি দিতে আবেদন করা হয়েছিল।
কিন্তু রাজাকারের তালিকায় এসব ব্যক্তিদের নাম যেভাবেই আসুক না কেন সেটিও লজ্জাজনক বলে দাবি করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাড আব্দুস সালামের পরিবারের সদস্য আরিফুল হক কুমার। তিনি বলেন, ‘এই তালিকায় কেন আসবে এসব ব্যক্তির নাম। যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, আবার যিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তাঁর নামও কেন আসবে। হয়তো রাজাকাররা এই তালিকা তৈরিতে কাজ করেছেন।’
তবে তালিকায় অনেক প্রকৃত রাজাকারের নামও উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন ডিন আহম্মেদ মোহাম্মদ প্যাটেল (তিনি কানাডায় রয়েছেন), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন, ড. মোহাম্মদ ওয়াসিম, জিল্লুর রহমান, রাজশাহী নগরীর খোরশেদ আলম, আব্দুস সোবহান, খন্দকার আব্দুল বাকি প্রমুখ ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। কিন্তু নাম রয়েছে তবে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি এমন ব্যক্তিও উঠে এসেছেন তালিকায়। এদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী বিভাগের ৩৮ নম্বর তালিকায় থাকা নজির আহমেদ, ৪৮ নম্বরে দলিলুর রহমান প্রমুখ।
অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগের ৪১ নম্বর তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে রাজশাহী জেলার সিংড়া থানার অন্তগর্ত ভুল বাড়িয়া গ্রামের আব্দুল আজিজ কর্তৃক রাজাকার ও দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। কিন্তু এই তালিকায় কাদের নামে অভিযোগ করা ছিল তাদের নাম উল্লেখ না থাকলেও আজিজের নামটিই রয়েছে।
একই অবস্থা রয়েছে আরো কয়েকটি ক্রমিক নম্বরে। ৪৪ নম্বর তালিকায় রাজশাহীর রাজাকার খোরশেদ আলম কর্তৃক দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। এখানেও বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা গবেষক আহম্মেদ শফিউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের দুস্কৃতিকারী হিসেবে মনে করতো রাজাকাররা। তাহলে রাজাকার খোরশেদের করা অভিযোগ কি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে এটি হাস্যকর। যদিও আমি তালিকাটা দেখিনি।’
রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধা গবেষকদের দাবি, এই তালিকা সম্পূর্ণ নয়। এটি ওই সময়ের তালিকার একটি খসড়া হতে পারে। আবার কপি পেস্টও হতে পারে। কোনো অনুসন্ধান ছাড়াই যাচ্ছে-তাই ভাবে নামগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যেহেতু সরকার এটিকে রাজাকারের তালিকা বলছেন, কাজেই এখানে কোনোভাবেই অন্য সাধারণ বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন এইরকম ব্যক্তির নাম উঠে আসা বাঞ্ছনীয় নয়। এটি মেনে নেওয়ায় যায় না।
আরপি/এসআর
বিষয়: রাজাকার রাজশাহী টিপু প্রসিকিউটর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: