রাজশাহী শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১

‘Rapid Cash’ অ্যাপসে ঋণের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে নিতো মোবাইলের নিয়ন্ত্রন, অত:পর...


প্রকাশিত:
১৯ মে ২০২৩ ০১:১৯

আপডেট:
৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:১৫

ছবি: গ্রেফতার আসামিরা

‘Rapid Cash’ নামক মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতারণা করে অর্থ আদায় চক্রের ৪ নারীসহ ১৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। তারা ফেসবুকে ‘Rapid Cash’ অ্যাপসের মাধ্যমে ঋণের লোভ দেখিয়ে রেজিট্রেশনের নামে কৌশলে ব্যক্তিগত তথ্য ও মোবাইলের নিয়ন্ত্রন নিয়ে ব্লাকমেইল করতো বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১৬ মে) গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ। 

আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি টিম এন্টি টেররিজম ইউনিটের অফিসার ও ফোর্সের সহায়তায় তাদের গ্রেফতার করে। এসময় আসামিদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১০টি মোবাইল ফোন, ১১টি ল্যাপটপ, ৫টি সিপিইউ, পেনড্রাইভ ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বিকেলে আরএমপি মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতার আসামিরা হলো- মাহিউদ্দিন মাহির (৩১), বিন সাদ মিনহাজ (২৩), ছানা মিয়া (৩৫), লিটন (৪৩), মেহেদী হাসান (২৩), হাসান ইমাম প্রিন্স (৩৩), বেলায়েত হোসেন (২৮), মারুফ আহমেদ (২৭), সাব্বির হোসেন লিয়ন (২৬), শিহাবুল ইসলাম নিশু (২২), ফায়েজুল ইসলাম (২৪), সোহান খান (২১), আব্দুল ওয়াদুদ (২৫), ইতি আক্তার (২০), স্মৃতি শাহ সৌমিক (২১), আয়েশা (২১) ও রুবাইয়া(২০)।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী নগরীর আবুল এহসান ফেসবুকে ‍‘Rapid Cash’ নামে একটি অ্যাপস ৩০ হাজার টাকা ঋণের বিজ্ঞাপন দেখেন। তিনি অ্যাপসটি ডাউনলোড করে তার মোবাইল নম্বর, এনআইডি নম্বর ও লাইভ ছবি দিয়ে রেজিট্রেশন করেন। ওই দিন রাত সাড়ে ১০ টায় একটি নগদ মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর থেকে তার মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৭১৫ টাকা ক্যাশইন হয়। তিনি ওই নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পান।

রাত ১২ টায় ‘Rapid Cash’ অ্যাপস চেক করে দেখেন তার নামে ৭১৫ টাকা জমা হয়েছে। শর্তে বলা হয়েছে, ৫৮৫ টাকা সুদসহ মোট ১৩০০ টাকা ৩ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এহসান তাদের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন দিয়ে বন্ধ পেলে ই-মেইলের মাধ্যমে সে টাকা পরিশোধ করবে মর্মে একটি মেইল পাঠান। তখন প্রতারকরা একটি নম্বর দিয়ে টাকা পরিশোধ করতে বলে। এরপর তিনি ১৩০০ টাকা পরিশোধ করেন।

ওই দিন আবার আবুল এহসানের নগদ অ্যাকাউন্টে পূর্বে ন্যায় টাকা জমা হয় এবং সুদসহ পরিশোধ করতে বলে। এরপর প্রতারক চক্ররা মোবাইল ফোনে জানায়, তার মোবাইলের কন্টাক্ট লিস্ট, ছবি, ভিডিওসহ যাবতীয় তথ্য হ্যাক করেছে। টাকা পরিশোধ না করলে তার নগ্ন ছবি তৈরি করে সব কন্টাক্ট নম্বরসহ ফেসবুকে ছড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়।

পরবর্তীতে প্রতারকরা বিভিন্ন সময়ে একাধিক মোবাইল নম্বর থেকে কল দিয়ে ‘Rapid Cash’-এর পরিচয় দিয়ে হুমকি প্রদান করে টাকা চাইতে থাকে। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলে প্রতারকরা তার নগ্ন ছবি তৈরি করে তাকেসহ তার কন্টাক্ট লিস্টের কয়েকজনের কাছে পাঠায় এবং তার নিকট নারী আত্বীয়ের নগ্ন ছবি তৈরি করে ফেসবুকে দিবে বলে হুমকি দেয়।

আবুল এহসান ভয়ে প্রতারকদের দাবীকৃত টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু প্রতারক চক্ররা তারপরেও বিভিন্ন অজুহাতে তার কাছে টাকা দাবী করতে থাকে। তিনি আবারও তাদের টাকা দেন। এভাবে আসামিরা টাকার জন্য তাকে নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। গত ১৪ মে আবুল এহসানের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আরএমপির বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়।

আরএমপি মুখপাত্র রফিকুল আলম জানান, মামলার প্রেক্ষিতে নগরীর বোয়ালিয়া জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফউদ্দীন শাহীনের তত্ত্বাবধানে বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে একটি টিম প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার অভিযানে নামেন।

গত ১৬ মে পুলিশের ওই টিম এন্টি টেররিজম ইউনিটের অফিসার ও ফোর্সের সহায়তায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ৪ নারীসহ ১৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এসময় আসামিদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১০টি মোবাইল ফোন, ১১টি ল্যাপটপ, ৫টি সিপিইউ, পেনড্রাইভ ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ‘Rapid Cash’ নামে মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে দেশে এবং দেশের বাহিরে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করে আসছিল। গ্রেফতার আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা।

 


আরপি/এসআর-০২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top