খা খা রোদে পুড়ছে বরেন্দ্র অঞ্চল

গ্রীষ্মকাল আসার আগেই তীব্র রোদে পুড়ছে রাজশাহীসহ আশপাশের এলাকা। চৈত্রের অগ্নিদহনে প্রাণহীন হয়ে উঠেছে চার পাশের প্রকৃতি। জীবন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে দিন মজুরসহ সকল শেণি পেশার মানুষের।
এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে বৃষ্টি ও শীতল হাওয়ার ছোঁয়া পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে নগরবাসী। এদিকে মাঝারি তাপপ্রবাহের প্রকোপে বৃষ্টির জন্য করছে হাঁসফাঁস সকলে। কয়েক দিনের টানা দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অসহনীয় গরমে হাহাকার করছে প্রাণীকূল।
সারাদিন অগ্নি ঝরা রোদ আর সন্ধ্যার পর ভ্যাপসা গরমে স্থবিরতা নেমে এসেছে কর্মজীবনেও। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবখানেই বিরাজ করছে চরম গরম। সামান্যটুকু স্বস্তির আশায় ছুটোছুটি করেও মিলছে না কোথাও। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়া কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম জানান, গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহীর তাপমাত্রা বাড়ছেই। রোববার দুপুরে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপামাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগের দিন শনিবার (১০ এপ্রিল) ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং তার আগের দিন শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ছিল ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪২ হলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে ধরা হয়।
এছাড়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। ফলে রাজশাহীর ওপর দিয়ে বর্তমানে মৃদু থেকে মাঝারি তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজকে চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে গত ২ এপ্রিল রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠেছিল। যা এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে উল্লেখ করেন আবহাওয়া অফিসের এই কর্মকর্তা। শুধু দিনে নয় রাতেও যেন নড়ছে না গাছের পাতা। প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রই যেন তেঁতে থাকছে সব সময়। পানির ট্যাপ এমনকি টিউবওয়েল দিয়েও বের হচ্ছে যেন ফুটন্ত পানি।
বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মাথার উপরে থাকা ফ্যান দিয়েও বের হচ্ছে গরম বাতাস। গত কয়েকদিন ধরে খুব বেশি পরিবর্তন হচ্ছে না তাপমাত্রার। সর্বদা বিরাজ করছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশেই। উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে হাহাকার করছে সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চল। তীব্র তাপদাহের প্রভাব পড়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালেও।
ক্রমেই বাড়ছে ডায়রিয়াসহ নানাবিধ রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একদিকে করোনা সংক্রমণের ঊর্দ্ধগতি অন্যদিকে অন্যদিকে গরমজনিত রোগী, সবমিলিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের। বিশেষ করে হাসপাতালে তিনটি শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করার উপায় নেই নতুন রোগী।
এবিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে করোনার মধ্যে ঘরে ঘরে আবার ডায়রিয়া, হিটস্ট্রোক, হিস্টিরিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের রোগী বাড়ছে। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে এ তীব্র গরমে। এজন্য বয়বৃদ্ধ ও শিশুদের রোদে না বের হয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশের মধ্যে থাকা ও বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি, ডাব ও দেশি ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) আবহাওয়া কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে মৃদু দাবদাহ বিরাজ করছিল। পরে এটি মাঝারিতে রূপ নিয়েছে। রোববার ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠায় তাপমাত্রা মাঝারি তাপদাহে রূপ নিলো। এ কারণে গরমের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর রাজশাহীতে তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত ওই রেকর্ড ভাঙেনি বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
আরপি / এমবি-১
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: