রাজশাহী শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


আত্মহত্যাকারীর জানাজা নামাজে ইসলামের বিধান কি?


প্রকাশিত:
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:০৯

আপডেট:
৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:৫৪

প্রতীকী ছবি

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে আত্মহত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং আত্মহত্যাকারীকে জাহান্নামি বলা হয়েছে। কাজটি এতই গর্হিত যে এর প্রতি ধিক্কার জানিয়ে অন্যদের এ থেকে সতর্ক করতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আত্মহত্যাকারীর জানাজা ত্যাগ করেছেন। যেমন হজরত জাবের বিন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.)-এর সামনে এক ব্যক্তিকে আনা হলো যে নিজেকে তরবারির ফলা দিয়ে মেরে ফেলেছে। ফলে তিনি তার জানাজা পড়লেন না।’ -সহিহ মুসলিম : ২৩০৯

প্রশ্ন হলো, আত্মহত্যাকারীর কি জানাজা পড়া যাবে না? অনেকে মনে করেন, কেউ আত্মহত্যা করলে তার জানাজা পড়া যাবে না। বর্ণিত হাদিসটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তাদের এ ধারণা সঠিক নয়।

আরও পড়ুন: বাকি কেনাকাটায় কত দিনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করবেন?

বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মূলত অন্যদের এমন মন্দ কাজ থেকে সতর্ক করার জন্য আত্মহত্যাকারীর জানাজা পড়ানো থেকে বিরত থেকেছেন। তবে সাহাবিরা এমন ব্যক্তির জানাজা পড়েছেন। তাই গণ্যমান্য আলেম ও বিশেষ ব্যক্তিত্বদের জন্য করণীয় হলো- আত্মহত্যাকারীর জানাজা না পড়ানো। বরং সাধারণ কাউকে দিয়ে তাদের জানাজা পড়িয়ে দেওয়া।

আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামি

কেউ যখন নিজেকে হত্যা করে তখন সে নিজেকে মূলত আল্লাহর গজব ও ক্রোধের শিকারে পরিণত করে। সে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। কারণ, তা কোনো শিরকি কাজ নয়। একমাত্র শিরকই এমন গোনাহ আল্লাহ যা ক্ষমা না করার ঘোষণা দিয়েছেন। শিরক ছাড়া যা আছে, তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আর আত্মহত্যা শিরক নয়। তেমনি ব্যভিচার, চুরি, মদপান সবকিছুই গোনাহ বটে। তবে তা শিরক নয়। এসবে লিপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছাধীন থাকবে। কেউ যখন এসব গোনাহে লিপ্ত হয়ে মারা যাবে, আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন। আর তিনি চাইলে তাকে তার অপরাধ অনুপাতে তাকে শাস্তি দেবেন।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিশ্বাসমতে, সে চির জাহান্নামি হবে না। কোনো গোনাহগারই অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে না। খুনি, মদ্যপ কিংবা অন্য কোনো অপরাধীও নয়। কিন্তু ওপরে যেমন বলা হলো, আল্লাহ চাইলে তাকে শাস্তি দেবেন, তার অপরাধ অনুযায়ী তাকে আজাব দেবেন তারপর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। একমাত্র আল্লাহকে অবিশ্বাসী মুশরিক-কাফেররাই শুধু জাহান্নামে চিরকাল থাকবে। যারা আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে; রাসুলুল্লাহর আনীত দ্বীনকে যারা অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন: হাউজে কাউছারের পানি থেকে বঞ্চিত হবে কারা?

আত্মহত্যাকারীর জন্য দোয়া

তবে এসবের অর্থ এই নয় যে, কেউ আত্মহত্যা করলে তার জন্য ক্ষমা ও রহমতের দোয়া করা যাবে না। বরং অধিক পাপী হওয়ার দরুন ওই ব্যক্তির জন্য আরও বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। আত্মহত্যা কোনো কুফুরি কাজ নয়, যার মাধ্যমে মানুষ ইমান থেকে খারিজ হয়ে যায়। দোয়া করা যাবে না কেবল ওই ব্যক্তির জন্য, যে ইমানহীন অবস্থায় মারা যায়।

তাদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো অথবা না করো, উভয়টি তাদের ক্ষেত্রে সমান। আল্লাহ তাদের কখনো ক্ষমা করবেন না। অবশ্যই আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে হেদায়েত দেন না।’ -সুরা আল মুনাফিকুন : ০৬

 

 

আরপি/এসআর-২১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top