রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১


পুলিশের অভিযানে মা ও বোন লাঞ্ছিত, ছাত্রের ‘আত্মহত্যা’


প্রকাশিত:
১৮ জুলাই ২০২০ ১৬:৫২

আপডেট:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:১০

 

চট্টগ্রামে রাতে সাদা পোশাকে অভিযানে যাওয়া এক পুলিশ সদস্য ও তিন সোর্সের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে স্কুলছাত্রের মা ও বোন আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর ছাত্রটির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, মা ও বোনকে পুলিশ বাসা থেকে থানায় নিয়ে গেছে—এমন তথ্য জানার পর বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে ‘আত্মহত্যা’ করে স্কুলছাত্র সালমান ইসলাম মারুফ। আর পরিবার বলছে, বাসায় সালমানের মা-বোন পুলিশ সদস্য ও সোর্সদের হাতে লাঞ্ছিত না হলে এমন ঘটনা ঘটত না।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হেলাল উদ্দিনকে ঘটনার রাতেই প্রত্যাহার (ক্লোজড) করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সময়ে ডবলমুরিং থানার বাদামতলী বড় মসজিদ গলিতে এসব ঘটনা ঘটে। মৃত সালমান ইসলাম মারুফের বাবার নাম দিদারুল আলম। চার ভাই-বোনের মধ্যে সালমান দ্বিতীয়। সে চাচার দোকানে চাকরির পাশাপাশি টিঅ্যান্ডটি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। ওই গলিতেই তাদের বাসা।

এদিকে ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তদন্ত প্রতিবেদন (রিপোর্ট) দেওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তা জমা দেয়নি কমিটি।
সালমানের স্বজন আবু তাহের এবং স্থানীয় লোকজনের দেওয়া তথ্য মতে, কিছুদিন আগে সালমানের বাইসাইকেল ও মোবাইল ফোন চুরি হয়েছিল। এরপর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি তাদের বাসায় উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলেন। এ সময় সালমান ‘চোর চোর’ চিৎকার দিয়ে ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে এবং আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে তাঁকে (ব্যক্তি) মারধর করে। তখন সেখানে সাদা পোশাকে উপস্থিত হন ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক হেলাল উদ্দিন। তিনি নিজেকে পুলিশ সদস্য এবং উকিঝুঁকি দেওয়া ব্যক্তিকে সোর্স দাবি করেন। এ সময় সালমানের মা, বোনসহ স্বজনদের সঙ্গে এসআই হেলালের বিতণ্ডা শুরু হয়। হেলাল ও সোর্সদের সঙ্গে মা ও দুই বোনের ধস্তাধস্তি হয়। এই ফাঁকে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় সালমান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুরুতে সালমানের সঙ্গে বিতণ্ডার সময় যখন তাঁরা নিজদের পুলিশের সদস্য ও সোর্স পরিচয় দেন, তখনই সালমানের মা রুবিনা, বোন নেহাসহ অন্যরা হেলালের কাছে ক্ষমা চান। মা দাবি করেন, দুই দিন আগে ছেলের মোবাইল ফোন ও সাইকেল চুরি হওয়ায় সে সন্দেহ করেছিল আবার (বাসায় উঁকি দেওয়া ব্যক্তি) চোর এসেছে। সে কারণে সালমান এমন আচরণ করেছে। আসলে সালমান ভালো ছেলে। কিন্তু এসআই হেলাল ও সোর্সরা এতে খুশি হতে পারেননি। পরে তাঁরা এক লাখ টাকা দাবি করেন। তখন সালমানের মা ও বোন অনুনয়-বিনয় করে এত টাকা দিতে পারবেন না বলে জানান। এতে হেলাল ও তাঁর সঙ্গের তিন সোর্স আরো উত্তোজিত হয়ে সালমানকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। তখনই পুলিশ সদস্য ও সোর্সের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে; সালমানের মা ও বোনের শরীরে সোর্সরা ‘হাত’ দিয়েছেন, নেহার ‘গলা টিপে’ ধরেছেন—এমন অভিযোগ করা হয়েছে সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে।

ঘটনাপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হওয়ার একপর্যায়ে এসআই হেলাল থানায় ফোন করে বিষয়টি জানান। পরে ডবলমুরিং থানার মোবাইল ডিউটিতে থাকা পুলিশদল ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে তারা সালমানের বোন নেহাকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। তাই পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার সময় মাকেও ডেকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে নেয় পুলিশ। এদিকে পুলিশের সঙ্গে বিতণ্ডার জের ধরে বোন নেহার (২১) অজ্ঞান হওয়া এবং মা রুবিনা আক্তারকে পুলিশ বাসা থেকে থানায় নিয়ে গেছে—রাতে বাসায় ফিরে এমন তথ্য জানার পর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে সালমান। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
স্কুলছাত্র সালমানের বিরুদ্ধে মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার তথ্য জানাতে পারেনি ডবলমুরিং থানার পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সালমানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকার তথ্য পুলিশের কাছে নেই। কেন সেখানে হেলাল সোর্স নিয়ে হাজির হয়েছিলেন, সেটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’ প্রকৃত তদন্ত নিশ্চিত করতেই ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত উপপরিদর্শককে ক্লোজ করেন মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক। কিন্তু ঘটনার বিষয়ে জানতে এসআই হেলালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক বলেন, এসআই হেলাল ওই বাসায় অভিযানে গিয়েছিলেন। সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ সালমানকে নিয়ে আসার চেষ্টা করলে তার মা ও বোন বাধা দিয়ে সালমানকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। দুই পক্ষের মধ্যে টানাহেঁচড়ার সময় বোন মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাই পুলিশ তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মাকেও সঙ্গে যেতে বলে পুলিশ। আর সালমান হয়তো মা ও বোনকে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ—এমনটা মনে করেছিল। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

(সূত্র: কালেরকন্ঠ)

 

আরপি/ এআর-০১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top