রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


রাজধানীতে পোশাকশ্রমিক-পুলিশের সংঘর্ষ


প্রকাশিত:
২১ মে ২০২০ ১৯:১৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৪২

ছবি: সংগৃহীত

বকেয়া বেতনের দাবিতে সিভিক্স অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা গতকাল ভোর থেকে রাজধানীর পোস্তগোলা ব্রিজ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা তারা সড়কে অবস্থান নেন। এতে আটকা পড়ে যায় পণ্যবাহীসহ সব ধরনের যান চলাচল। পরে পুলিশ লাঠি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদের সড়ক থেকে তুলে দেয়।

এ সময় শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এ ঘটনায় অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিন দিন ধরে গার্মেন্টটির শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে আসছিলেন। বিজিএমইএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মালিকপক্ষ তাদের বোনাস পরিশোধ করেছে। কিন্তু তারা চলতি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছিলেন।

গতকাল ভোর ৫টায় সহস্রাধিক শ্রমিক গার্মেন্টের সামনে অবস্থান নেন। এরপর সকাল ৭টায় তারা পোস্তগোলা ব্রিজের ওপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। ব্রিজের উত্তর অংশে তারা ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পোস্তগোলা রেলগেট এলাকায় যানজট দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ শ্যামপুর থানা পুলিশ তাদের সড়ক থেকে চলে যেতে বলেন।

বকেয়া বেতন না পেলে অবরোধ তুলে নেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিকরা। কয়েকবার অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানোর পরই লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। শ্যামপুর থানা কমপ্লেক্সের সামনে এভাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

এ সময় অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বিক্ষুব্ধরা। এক পর্যায়ে অবরোধের দেড় ঘণ্টা পর শ্রমিকরা সড়ক থেকে চলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শ্যামপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহ আলম জানান, মালিকপক্ষ তাদের ৫০ শতাংশ বোনাস দিয়ে দিয়েছেন। এরপরও তারা চলতি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। অথচ এ বেতন আগামী মাসে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়ার কথা। কিন্তু শ্রমিকরা এটি মানছিলেন না।

কয়েকবার সড়ক ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও তারা রাজি না হলে পরে পুলিশ অ্যাকশনে যায়। এদিকে বিকাশে বেতন-ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও না পেয়ে এবং শতভাগ বোনাসের দাবিতে রাজধানীর কমলাপুরে বিন্নি নামে একটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এতে সেখানকার সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে কমলাপুর এলাকার সড়ক অবরোধ করেন গার্মেন্টটির শতাধিক শ্রমিক। পরে মতিঝিল থানা পুলিশের আশ্বাসে টাকা গতকালই পাওয়ার শর্তে সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছেন তারা। জানা গেছে, শ্রমিকদের কারও দুই মাস কারও এক মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া। করোনার কারণে গার্মেন্ট বন্ধ। করোনার জরুরি ত্রাণও পাননি তারা।

মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন মোল্লা জানান, বিন্নি গার্মেন্টের মালিককে ডেকে বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে সবার বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাওনা টাকা পৌঁছে যাবে। শ্রমিকদের বিষয়টি জানানোর পর তারা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

গাজীপুরে শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ : গাজীপুরে শতভাগ ঈদ বোনাসসহ চলতি মাসের বেতন পরিশোধের দাবিতে গতকাল দিনভর কয়েক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এ সময় এক কারখানার কয়েক কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ আশপাশের সড়কগুলো অবরোধ ও ভাঙচুর করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর আবদুল জলিলসহ শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, শতভাগ ঈদ বোনাসসহ বেতনভাতা পরিশোধের দাবিতে জিরানী এলাকার বেঙ্গল গ্রুপের পলিমার প্লাস্টিক ও রোমানিয়া ফুড কারখানার শ্রমিকরা বিকাল পর্যন্ত কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে।

শ্রমিকরা শতকরা ৫০ ভাগ ঈদবোনাস দেওয়ার সরকারের ঘোষণাকে না মেনে গত কয়েকদিন ধরে শতভাগ ঈদ বোনাসসহ চলতি মাসের বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু মঙ্গলবার কারখানা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারের ঈদে শ্রমিকদের শতকরা ৫০ ভাগ ঈদবোনাস মোবাইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করে।

রাতের শিফটে কর্মরত শ্রমিকরা তাদের মোবাইলে শতকরা ৫০ ভাগ ঈদবোনাস প্রদানের বার্তা দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবিতে মধ্যরাতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় উত্তেজিত কয়েক শ্রমিক কারখানায় ভাঙচুর করে।

পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় মোট ৬০ ভাগ ঈদ বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেয়। একই দাবিতে জিরানী বাজারের সানগড় টেক্সটাইল লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঈদ বোনাসসহ পাওনাদি পরিশোধ না করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানার মালামাল ভাঙচুর ও কয়েক কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে। এদিকে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, শতভাগ ঈদ বোনাসসহ পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর এলাকার এমাসিন টেক্স ও ডেল্টা কম্পোজিটসহ শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার গোল্ডেন থ্রেড কারখানার শ্রমিকরা বুধবার সকাল হতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে।

কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে না নেওয়ায় দুপুরে ডেল্টা কম্পোজিট কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং গোল্ডেন থ্রেড কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top