রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অধ্যক্ষ-শিক্ষক!


প্রকাশিত:
২৩ আগস্ট ২০২২ ২০:৩৪

আপডেট:
২৩ আগস্ট ২০২২ ২২:০০

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, প্যাকেজিং আর সরবরাহের জন্য রয়েছে একটি গোপন টিম। এই টিমে নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে শিক্ষক (ইনস্ট্রাক্টর) থাকেন। কিন্তু তাঁদের একটি অংশই পরীক্ষার আগে ফাঁস করে দেন প্রশ্নপত্র! সেই প্রশ্ন বিক্রি করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষ ফাইনাল বিএসসি-ইন-নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে এই তথ্য। ২০ আগস্ট ওই পরীক্ষা শুরুর আগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল পরীক্ষা শুরুর আগে একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ও সাদা কাগজে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ছবি উদ্ধার করে।

গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন- ফরিদা খাতুন (৫১), মনোয়ারা খাতুন (৫২), নার্গিস পারভীন (৪৭), কোহিনুর বেগম (৬৫), ইসমাইল হোসেন (৩৮) ও আরিফুল ইসলাম (৩৭)। তাঁদের মধ্যে ফরিদা, মনোয়ারা ও নার্গিস রাজধানী মহাখালীর একটি নার্সিং কলেজে ১০ বছর ধরে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত। কোহিনুর বেগম ২০০৮ সাল থেকে ঢাকার একটি সরকারি নার্সিং কলেজে নার্সিং প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৬ সালে অবসরে যাওয়ার পর একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইসমাইল রাজধানীর একটি নার্সিং কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং আরিফ ঢাকার একটি নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

তাঁদের কাছ থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের কপি এবং ৯টি মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করা হয়েছে বলে গতকাল সোমবার র‌্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংস্থাটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল ২০ আগস্ট পরীক্ষা শুরুর আগে একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের মোবাইলে প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা দল ও র‌্যাব-১০-এর সদস্যরা ফাঁস চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিতে কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় মহাখালী, ধানমন্ডি ও আজিমপুর এলাকা থেকে ওই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তা শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করার কথা স্বীকার করেছেন।

কমান্ডার মঈন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মোট ৯৮টি নার্সিং কলেজের মধ্যে বর্তমানে ৩৮টি কলেজে পরীক্ষা চলছে। প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা বজায় রাখতে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'জন প্রশ্ন প্রণয়নকারী নিয়োগ দেওয়া হয়, যাঁরা দুই সেট আলাদা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে থাকেন। পরে এই প্রশ্নপত্রগুলোকে যাচাই-বাচাই করার জন্য একটি মডারেটর টিম নিয়োগ করা হয়। যাদের কাজ হচ্ছে প্রশ্নপত্রগুলো থেকে পরীক্ষার জন্য এক সেট পরিপূর্ণ প্রশ্নপত্র তৈরি করে সেগুলো সিলগালার মাধ্যমে চিকিৎসা অনুষদের ডিনের কাছে জমা দেওয়া। চিকিৎসা অনুষদের ডিন বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রশ্নপত্র সরবরাহের জন্য চার সদস্যের একটি গোপনীয় টিম নিয়োগ করে থাকেন। এই টিম প্রশ্নপত্রটি প্রিন্টিং এবং প্যাকিংয়ে নিযুক্ত থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী প্রিন্ট করে আলাদা আলাদা প্যাকিং করে তার ওপরে কেন্দ্রের নাম লিখে সিলগালা করে দেয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই প্রশ্নপত্রগুলো বিভিন্ন কেন্দ্রে বিতরণ করে।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার ফরিদা চার সদস্যের গোপনীয় টিমের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতা। তাঁর কাছ থেকে নার্গিস ও মনোয়ারা প্রশ্নপত্র পান। পরে তাঁদের এই চক্রের আরেক সদস্য ইসমাইলের মাধ্যমে তা কোহিনুর বেগমের কাছে দেওয়া হয়। তবে ইসমাইল নিজের কাছে তাঁর কপি রেখে দেন। কোহিনুর, ইসমাইল ও আরিফ মিলে প্রশ্নপত্রটি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে টাকার বিনিময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পরীক্ষার আগেই পৌঁছে দেন। তাঁরা শিক্ষকতা ও নার্সিংয়ের আড়ালে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিলেন। ২০১৭ সালে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অপরাধে আরিফ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই চক্রে আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে নেওয়ার তথ্য মিলেছে।

সূত্রঃ সমকাল

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top