রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


জেলা-উপজেলায় সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে


প্রকাশিত:
২৪ মার্চ ২০২২ ০৩:২২

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:০২

ফাইল ছবি

দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিনোদনের খোরাক হিসেবে সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আমাদের সিনেমা শিল্পটা অ্যানালগ সিস্টেম থেকে গিয়েছিল। সেটাকে আমি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন করতে চাই এবং তার জন্য আমাদের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত মানুষের বিনোদনের একটা সুযোগ সিনেমাটা দেখতে চাই। সে ক্ষেত্রে আমি তাদেরকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিলাম। মাঝখানে ভাটা পড়ে যাওয়াতে কেউ উদ্যোগী ছিল না। আমরা এক হাজার কোটি টাকার একটা ফান্ড তৈরি করে রেখেছি। আমি চাই আমাদের জেলা-উপজেলায় সব জায়গায় এই সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হোক। যেখানে আধুনিক প্রযুক্তিতে চলচ্চিত্র দেখানো যায়।’

সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, সমাজ সংস্কারের মাধ্যম বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘শুধু বিনোদন নয়, বিনোদনের সাথে সাথে আমাদের সমাজ সংস্কারে, মানুষকে শিক্ষা দেওয়া বা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা এবং এ দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আমি এই আহ্বান জানাব, আপনারা যারা শিল্পী কলাকুশলী আছেন তারা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন, আমাদের গণমানুষের যে আত্মত্যাগ, আমাদের যে এগিয়ে চলার পথ, সেই পথে যেন মানুষের কাছে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন হয়, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ যেন সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বা নতুন প্রজন্ম তারা যেন নিজেদের জীবনকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে সেই মর্মে আপনারা সিনেমাগুলো তৈরি করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করবেন সেটাই আমি চাচ্ছি।’


সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাক বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং আমাদের এই শিল্প আরও এগিয়ে যাবে, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, আমাদের তরুণ সম্প্রদায় যারা এগিয়ে এসেছে এই সিনেমার শিল্পে তাদেরকে আমি বিশেষভাবে অনুরোধ অভিনন্দন জানাচ্ছি। এরাই তো ভবিষ্যৎ।’

আমরা এক হাজার কোটি টাকার একটা ফান্ড তৈরি করে রেখেছি। আমি চাই আমাদের জেলা-উপজেলায় সব জায়গায় এই সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হোক। যেখানে আধুনিক প্রযুক্তিতে চলচ্চিত্র দেখানো যায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এফডিসি করে দিয়ে যান এবং চলচ্চিত্র যেন হয় সে ব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছিলেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব শিল্পী অবদান রেখেছিলেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমাদের যারা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, আমাদের শিল্পী, কলাকুশলী, আমাদের শিল্পীরা যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

শেখ হাসিনা জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এ শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধু এ শিল্পের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। জাতির জনক সবসময় এ শিল্পের প্রতি উৎসাহিত করতেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি সবসময় চেষ্টা করেছি যে আমাদের দেশে সিনেমা শিল্পটা যেন শেষ হয়ে না যায়। আমি একসময় এসে দেখেছি খুবই করুণ অবস্থা ছিল। আজকে যে রাস্তাটা এফডিসি আছে আগে সে রাস্তায় ছিল না। আমি যখন তেজগাঁও এলাকায় ১৯৮৪ সালে যখন সংসদ সদস্য ছিলাম তখন ওই রাস্তা তৈরি করার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।’

‘১৯৯৬ সালের সরকারে আসার পরে যা যা করা দরকার সবই করেছিলাম। আবার দেখলাম যে আবার সবকিছু অনেক পেছনে চলে গেছে। আবার পরবর্তীতে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ভালো একটা সুন্দর কমপ্লেক্স তৈরি করার। সেটা নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। একটু দেরি হয়ে গেছে কিন্তু হয়েছে।’-বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

আমাদের অনেক শিল্পীরা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় বা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাদের একটা করুন অবস্থা হয়। আমার আহ্বান থাকবে আমাদের যারা বিত্তশালী আপনারা এই ফান্ডের টাকা রাখবেন বেশি করে। যাতে করে আমাদের কোনো শিল্পী যেন কষ্ট না পায়।’

সিনেমা শিল্প একটা সময় অনেক ‘বাধাগ্রস্ত’ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ঘটনার সবাই খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। যেহেতু আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি আমি চাই যে, এই শিল্পটা গড়ে উঠুক।’

শিল্পী ও সংশ্লিষ্টদের জন্য উদ্যোগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আপনারা শুনেছেন শিল্পী, কলাকুশলী সকলে যাতে সুযোগ পায় তার জন্য ফান্ড ট্রাস্ট তৈরি করে দিয়েছি। আমি চাই যারা বিত্তবান তারা ফান্ডে আরও বেশি করে টাকা রাখেন। আমি দেখেছি, আমাদের অনেক শিল্পীরা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় বা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাদের একটা করুন অবস্থা হয়। আমার আহ্বান থাকবে আমাদের যারা বিত্তশালী আপনারা এই ফান্ডের টাকা রাখবেন বেশি করে। যাতে করে আমাদের কোনো শিল্পী যেন কষ্ট না পায়।’

চলচ্চিত্রের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলচ্চিত্র আমাদের জীবনের চিত্র। আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা দেখেছি আমরা যদি ইতিহাসে সাক্ষী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্র সমাজ সংস্কার করতে পারে। সমাজ সংস্কারের এই চলচ্চিত্রের বিরাট অবদান রাখতে পারে, যা মানুষের মনে দাগ কাটে। জীবন দর্শন এটাই। এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অনেক বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়। ইতিহাসের বার্তা বাহক হিসেবে কিন্তু চলচ্চিত্র। ইতিহাসে ধরে রেখে অনেক অজানাকে জানার সুযোগ করে দেয়, অনেক হারিয়ে যাওয়া ঘটনা সামনে নিয়ে আসে। যা জীবনের সাথে মিশে যায়। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার জন্য বা সমাজের অনেক ধরনের অনিয়ম উশৃঙ্খলতা দূর করতে চলচ্চিত্র বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েই আমাদের দেশ ও জাতির প্রতি মানুষের যে দায়িত্ববোধ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা সেগুলো প্রকাশ করতে পারি। সে দিক দিয়ে চলচ্চিত্র অবদান রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে আনোয়ারা বেগম ও রাইসুল ইসলাম আসাদকে যুগ্মভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২০-এর আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। আনোয়ারা বেগম অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে মেয়ে মুক্তি পুরস্কার নেন। পুরস্কার দেওয়ার আগে তাদের নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২০ দেওয়া হচ্ছে। এবার মোট ২৭টি বিভাগে ২৯ জনকে সিনেমায় রাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি দেওয়া হবে।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্যসচিব মকবুল হোসেন এবং জাতীয় সংসদের তথ্যবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু অনুষ্ঠানমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

আরপি/এসআর-০৬



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top