রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


মাউশির কামাল-রেজার অপসারণ দাবি, শিক্ষা অফিস ঘেরাও


প্রকাশিত:
১০ নভেম্বর ২০২২ ০৪:৩২

আপডেট:
১০ নভেম্বর ২০২২ ০৪:৩৩

ছবি: মানববন্ধন

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চল কার্যালয়ের পরিচালক ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক আবু রেজার অপসারণ দাবিতে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস ঘেরাও করেছে কলেজের শিক্ষকরা।

বুধবার (৯ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শুরু করেন তারা।

বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি ফেডারেশনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে রাজশাহী ছাড়াও অঞ্চলের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা অংশ নেন।

সমাবেশে বক্তারা রাজশাহী অঞ্চলের কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিও, পদোন্নতি এবং উচ্চতর স্কেল পেতে ব্যাপক অনিয়ম এবং হয়রানির অভিযোগ আনেন আঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। উপস্থিত শিক্ষকরা অবিলম্বে পরিচালক ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক আবু রেজার অপসারণ দাবি করেছেন।

বক্তারা বলেন, এর আগেও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ওই দুই কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এরই ধারবাহিকতায় আমরা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী, সচিব এবং ডিজি মহোদয়কে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারক লিপি প্রেরণ করি। পরবর্তীতে আমরা ডিজি মহোদয়ের সাথে সরাসরি স্বাক্ষাৎ করে তাকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি তাৎক্ষণিক একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

ওই তদন্ত কমিটিকে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আঞ্চলিক পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের দুর্নীতি প্রমাণ করতে সক্ষম হই। আমরা ইতি মধ্যে জানতে পেরেছি যে, উক্ত তদন্তের রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার ক্রমে বেড়েই চলেছে বলেও দাবি শিক্ষকদের।

তারা আরও বলেন, পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের সকল অনিয়মের সঙ্গী মাউশি সহকারী প্রোগ্রামার ডলি রানী পাল। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগের প্রমাণও পেয়েছে মাউশি। এরপর বরিশাল অঞ্চলে তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। কিন্তু বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করেননি তিনি। এমন কি তাকে ফেরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মাউশি রাজশাহী কার্যালয়ের পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদ।

সমাবেশ পরিচালনা করেন বাকশিশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাজকুমার সরকার। অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন ও ড. আবু রেজাকে দ্রুত অপসারণ ও বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে পরবর্তীতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচী দেওয়া হবে বলেও হুশিয়ার করেন শিক্ষকরা।

প্রসঙ্গত, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগের সত্যতা মেলায় শাস্তির মুখে পড়েছেন ডলি রানী পাল। চলতি বছরের ৩০ মার্চ মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন শাখার পরিচালক প্রফেসর আমির হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

গত ১২ এপ্রিল রাজশাহীতে এসে সরেজমিন তদন্ত করে যায় ওই কমিটি। গত ২৪ আগস্ট তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর শাস্তিমূলক বদলির সুপারিশ করেন মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-২) তানভীর হাসান।

এদিকে বহু আগে থেকেই মাউশির রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ছিল শিক্ষকদের। এমপিওভুক্তি, পদোন্নতি কিংবা উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তি, কোনোটাই মিলে না আর্থিক উপঢৌকন ছাড়া। অঞ্চলে এমপিওর নামে আড়াই হাজার শিক্ষকের কাছে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছিল, এমপিও আবেদন বাতিলের নামে হয়রানির।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে অভিযোগ আমলে নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মাউশিকে পুরো বিষয় তদন্তের জন্য চিঠি দেয় দুদক। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে মাউশি। সরেজমিন তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিয়েছিল মাউশি।

এছাড়াও পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অসদাচরণ, এমপিওভুক্তি, পদোন্নতি ও উচ্চতর স্কেল প্রদানে অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি রাজশাহী অঞ্চল।

 

 

আরপি/এসআর-০২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top