রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


নির্মাণ সামগ্রীর বাজার চড়া

মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কায় রাজশাহীর আবাসন খাত


প্রকাশিত:
৪ মার্চ ২০২৩ ১১:৩৮

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৪২

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

করোনার ভয়াল থাবা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি খাতেই। ফলশ্রুতিতে লাগামহীন বেড়েই চলেছে প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নির্মাণ সামগ্রীর দামও।

মাস কয়েকের ব্যবধানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে শতভাগ পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলে দাবি আবাসন ব্যবসায়ীদের। এতে অনেকটা দিশেহারা অবস্থা আবাসন খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের। বাধ্য হয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছেন ফ্ল্যাট বাসার দাম। যার বোঝা টানতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকেই।

রাজশাহীতে গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী আবাসন মেলা শেষ হলো শুক্রবার (৩ মার্চ)। ৫ম বারের মতো এ আবাসন মেলার আয়োজন করে রাজশাহী রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন (রেডা)।

রাজশাহীতে আবাসন খাতের অবস্থা ও রেডার কার্যক্রম সম্পর্কে রেডার সভাপতি তৌফিক রহমান লাভলু বলেন, রাজশাহীতে ২০১৭ সাল থেকে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনের (রেডা) কার্যক্রম চলছে। এ পর্যন্ত ৬০টির উপর প্রজেক্ট বাস্তবায়ন শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ৫ শতাধিক ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে।

তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় দেড় শতাধিক প্রজেক্ট বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। রাজশাহীতে চলমান বহুতল ভবন নির্মাণের ৮৫ শতাংশই রেডার।

দ্রব্যমূ্ল্েযর ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গ টেনে এই আবাসন ব্যবসায়ী বলেন, করোনার এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নির্মাণ সামগ্রীর দাম যে বৃদ্ধি পেয়েছে সেই প্রভাব আবাসন খাতেও পড়েছে। অতীতে যে রেটে ফ্ল্যাট দেওয়া গেছে বর্তমানে কিন্তু আর সে রেটে ফ্ল্যাট দেওয়া যাচ্ছে না। কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিটি নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। ৬০ হাজার টাকার এক টন রডের দাম ঠেকেছে এক লাখ টাকায়। কিছু কিছু জিনিসপত্রের দাম শতভাগ বেড়েছে।

কিন্তু আমরা তো ফ্ল্যাটের দাম বাড়াতে পারছি না। আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থা। অনেকে খুব বাজে পরিস্থিতিতে আছেন। কেউ কেউ মনে করেন আবাসন খাতে যারা আছে অনেক ভালো আছে। কিন্তু আমরা খুব একটা ভালো পরিস্থিতিতে আছি এমন না। চাইলেই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া যায় না বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, কয়েক মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ বিলই দুইবার বাড়ল। বিদ্যুৎ বা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু প্রভাবিত হচ্ছে। আমাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। ক্রেতারাও বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন, আমাদের সঙ্গে কিছুটা সহমত পোষণ করেই তাদের সাধ্যের মধ্যে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

আবাসন মেলার ব্যাপারে জানতে চাইলে রেডা সভাপতি বলেন, করোনার দুই বছর মেলা করা যায়নি। এবারের মেলায় লোক সমাগম অনেক বেশি। অন্যবারের তুলনায় এবারের মেলায় প্যাভিলিয়নের চেহারা বা অবয়বে আমূল পরিবর্ত হয়েছে। প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ও সাইজ দুটোই বেড়েছে, নতুনত্ব এসেছে। মানুষের সাড়াও বেড়েছে। দর্শনার্থীর আগমন ও সাড়ায় আমরা সন্তুষ্ট।

এই আবাসন ব্যবসায়ী আরও বলেন, ঢাকা বা চট্টগ্রামের আবাসন মেলায় কিন্তু অনেক ফ্ল্যাট তৎক্ষণাৎ বিক্রি হয়৷ আমাদের রাজশাহীতে সেই চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। মেলায় তৎক্ষণাৎ ফ্ল্যাট বিক্রি হয় না বললেই চলে। ক্রেতারা মেলায় এসে খোঁজখবর নেয়, সুযোগ-সুবিধা জানতে চায়, সরাসরি কিনেন না। আমরা সব এলাকার সব প্রতিষ্ঠানের তথ্য দিয়ে দিচ্ছি। বাসায় গিয়ে তাদের ইনফরমেশন যাচাই করে নেয়, তারপর অফিসে এসে ফ্ল্যাট কিনে।

ব্যবসায়ী লাভলু বলেন, রেডার বাইরেও রাজশাহীতে অনেকে গ্রুপ আকারে আবাসন নির্মাণ কাজ করছে। যাদের পর্যাপ্ত লোকবল, কারিগরি এক্সপার্ট, আরডিএর অনুমোদন, রাসিকের লাইসেন্স কিছুই নেই। তাদের বিভিন্ন প্রলোভনের কারণে কাজের কোয়ালিটি ঠিক রাখাটাও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে রাসিক, আরডিএ, রাজশাহী চেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আবেদন করা হয়েছে। কোনোরকম অনুমোদন ছাড়াই তারা এই শিল্পটার ক্ষতি করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার আবেদন করছেন যেন কৃষি জমি নষ্ট না হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলে যেখানে তিন ফসল হয় সেসব কৃষি জমিও প্লট আকারে বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।

তবে মেলায় আসা ক্রেতাদের দাবি, ফ্ল্যাট কিনতে লোন সুবিধা এখনও আশানুরূপ অবস্থায় পৌঁছেনি। বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং জটিলতায় পড়তে হয়।

মেলায় আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সাব্বির হোসেন জানান, নানা বাস্তবতায় ফ্ল্যাট কিনতে খুব একটা মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ হয়নি। স্বপ্ন দেখছেন, জমানো টাকা দিয়ে শিগগিরই ফ্ল্যাট কিনবেন। এজন্য ঘুরে ঘুরে দেখতে ও বিস্তারিত জানতে মেলায় এসেছেন তিনি।

সস্ত্রীক মেলায় এসেছেন কলেজ শিক্ষক মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ফ্ল্যাট খুঁজছি, জানছি। পছন্দও হয়েছে, তবে বাজেটে কুলায় না। নতুন করে দাম না বাড়লে চলতি বছরের শেষ দিকে ফ্ল্যাট কিনতে চান তিনি।

মেলার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুকর্ণা ডেভেলপার কোম্পানির ডিরেক্টর ওয়াসিফ ইসলাম বলেন, আবাসন মেলায় ভালো সাড়া পেয়েছি। সাতদিনব্যাপী হওয়ায় লোকজন তাদের সুযোগ-সুবিধা মতো সময়ে মেলায় আসতে পেরেছে। তবে ফ্ল্যাট বিক্রির গতি কিছুটা কমে গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এমন হয়ে থাকতে পারে। এটা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে।

রাঙাপরি ডেভেলপার্সের এজিএম আব্দুল্লাহ সাকি নাফিজ বলেন, অন্যবারের চেয়ে এবার বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রিও হচ্ছে, তবে দামে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। রড-সিমেন্টের দাম বাড়তি, আবার ডলারের দামেও তারতম্য রয়েছে। এজন্য ক্রেতারাও অনেক বুঝে শুনে নিচ্ছেন।

এবারের আবাসন মেলায় ছিল ২৭টি কোম্পানির ৬০টি স্টল। আবাসন ব্যবসায়ীর পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, টাইলস, লিফট বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নেয়।

শুক্রবার রাতে র‍্যাফেল ড্র-সহ নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে পর্দা নামে এবারের আবাসন মেলার।

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top