রাজশাহী মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


সাইক্লোন সেন্টারে করোনার ঝুঁকি, সুরক্ষা যে পথে


প্রকাশিত:
১৯ মে ২০২০ ১৪:৫৭

আপডেট:
১৪ মে ২০২৪ ১৯:৩৬

ছবি: সংগৃহীত

মাত্র একদিন আগেই দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। সেই বিপদের মাঝেই সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ এখন উপকূলের মাত্র ৮৭৫ কিলোমিটার দূরে। সাইক্লোন সেন্টারে করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই প্রাণ বাঁচাতে সকাল থেকে ছুঁটছে উপকূলের মানুষ।

ঘূর্ণিঝড় থেকে জানমাল বাঁচাতে সাইক্লোন সেন্টার অবস্থান যেমন জরুরি, সেই সঙ্গে বহু মানুষ অবস্থান করার কারণে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আসঙ্কাও করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। ইতোমধ্যেই, অতিপ্রবল শক্তিশালী তথা এক্সট্রিম সিভিয়ার সাইক্লোন থেকে সুপার সাইক্লোনে উন্নীত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার বিকেলের মধ্যেই বংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

এদিকে এমন সম্ভাবনা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া শুরু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান থেকে নিরাপদ রাখতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯ জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষকে সাইক্লোন সেন্টারে রাখা হবে।

তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের তাৎর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু এবারের বিষয়টি ভিন্ন। করোনার কারণে এ সময়ে সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিতে হলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাটাও জরুরি। পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলাটা এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আবার মানুষ ও গবাদি পশুর মৃত্যু কমাতে হলে সাইক্লোন সেন্টারের কোনো বিকল্প নেই। এ কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত সেন্টার প্রয়োজন, যা একটা চ্যালেঞ্জ। এছাড়া করোনা আক্রান্ত ও আইসোলেশনে থাকা রোগীদের কোথায় রাখা হবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

যদি সেন্টারে আশ্রয় নেয়ার কারণে করোনা সংক্রমণের বিস্তার ঘটে, তাহলে ওই এলাকায় সংক্রমণের সংখ্যাটি অনেক বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সময় মানুষের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাটাও নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসতে পারে। কারণ সেখানে শারীরিক দূরত্ব মানতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে ঘূর্ণিঝড় সামলাতে হবে।

ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজের (বিআইটিআইডি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ড. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘করোনা থেকে বাঁচতে হলে প্রথম শর্ত হলো সামাজিক দূরত্ব ও শারীরিক দূরত্ব।

কিন্তু সাইক্লোন সেন্টারে তা কতটুকু মেনে চলা যাবে তা নির্ভর করছে, সেখানকার ব্যবস্থাপনার উপর। নয়তো একজন রোগীও যদি এর ভেতর থাকেন এবং নিয়ম-কানুন না মানেন তাহলে অন্যরা সহজেই আক্রান্ত হবেন। এজন্য সবাই নিজের ঘরে যে নিয়মগুলো মানেন, তা সাইক্লোন সেন্টারেও মানতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে সবাইকে। বজায় রাখতে হবে দূরত্ব’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাইক্লোন সেন্টারে যারাই আসুক তাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা রাখা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করবেন তাদের শতভাগের মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। তা হলে পুরোপুরি না হলেও সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যাবে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষায় মানুষকে সাইক্লোন সেন্টারে রাখা হলে করোনার সংক্রমণ কেমন হতে পারে এবং এই বিষয়ে করণীয় কী সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে গতকাল সোমবার ভার্চুয়াল মিটিং করে করোনা মোকাবিলায় গৃহীত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের লক্ষ্য সরকারের গঠিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কমিটি।

মিটিংয়ের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা ছিলো- ঘূর্ণিঝড়ের সময় সেল্টারগুলোয় করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি কমানো।

করোনা নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একদিকে সুপার স্ট্রম দেশে আঘাত হানছে, অপরদিকে করোনা। দেশের প্রায় ১৯ জেলায় সরাসরি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বেশি থাকবে। মানুষকে রক্ষায় বহুসংখ্যক মানুষকে সেল্টারগুলোয় নেওয়া হবে।

এ সময় সাইক্লোন সেন্টারগুলোয় সামাজিক দূরত্ব মানানো দূরহ বিষয়। ফলে করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি তৈরি হবে। সে কারণে নাগরিকদের প্রতি বিশেষ পরামর্শ, সেখানে অবস্থানকারীরা ১০০ ভাগ যেন মাস্ক ব্যবহার করেন’।

তিনি বলেন, ‘সাইক্রোন সেন্টারগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য স্বাস্থ্যকর্মী রাখার চেষ্টা করা হবে। এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হবে এ বিষয়ে দেখভাল করা। সেল্টারগুলোতে যেহেতু সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রাখা কষ্টকর, তাই মাস্ক ব্যবহার করলে সংক্রমণ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে’।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার করোনা আক্রান্ত রোগী এবং লকডাউন করা বাড়ির লোকজনদের নিকটবর্তী আইসোলেশন কেন্দ্রে নেওয়া হবে এবং আশ্রয়ন কেন্দ্রে তাদের জন্য বিশেষ কক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে’।

তিনি জানান, জেলায় ২৮৪টি মেডিক্যাল টিম, ২ লাখ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, দেড় লাখ খাবার স্যালাইন ও পর্যাপ্ত জরুরি ওষুধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার যেহেতু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে কোভিড-১৯ এর কারণে, তাই আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হবে।

এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কে কোন আশ্রয়কেন্দ্রে যাবে তারও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে, প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকা স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ব্যবহার করা হবে এবং বাড়ির কাছে থাকা স্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে’।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে সাইক্লোন সেন্টারে লোকজনকে রাখা হবে। এ লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও ২ হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১ হাজার ২৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে’।

চট্টগ্রাম জেলায় এ পর্যন্ত ৮৪৩ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১১১ জন। আইসোলেশনে আছেন ১৫৬ জন রোগী। করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনা প্রাণ নিয়েছে ৩৮ জনের। এছাড়াও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২০ জনের বেশি নারী-পুরুষ।

সূত্রঃ জাগো নিউজ

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top