রাজশাহী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১


অনলাইনে শিক্ষা নিয়ে কি ভাবছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা


প্রকাশিত:
১২ জুলাই ২০২০ ০৫:০৯

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:১৮

ছবি: সংগৃহীত

অনলাইনে ক্লাস। এটা এক সময় ছিলো স্বপ্নের। কিন্তু এখন সবি সত্যি। তবে সমস্যা দেখা দিচ্ছে ইন্টারনেটের সুবিধাকে কেন্দ্র করে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে যথাযথভাবে হচ্ছে না পড়াশুনা।

মনোযোগী হওয়া যায়না ক্লাসে। এর মধ্যে কখন যে বিদ্যুৎ চলে যায় তার কোন নিশ্চয়তা নেই। শিক্ষার্থীরা আরো জানান, তাছাড়া মোবাইল ডাটার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

কারণ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষে ডাটা কিনে পড়াশুনা কস্টের। তাছাড়া আয় রোজগারও কমে গেছে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত অন্য কলেজগুলোতে কি এখন অনলাইন ক্লাস চলছে?

অনলাইন ক্লাস চালুর পথে বাধা ও উত্তরণের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে কি ভাবছেন শিক্ষার্থীরা? সেশনজট নিয়েই বা তাদের ভাবনা কি? এসব নানান সমস্যা আর সম্ভাবনার কথা জানাতে আমাদের আজকের আয়োজন ।

মোফাজ্জল বিদ্যুৎ, গণিত বিভাগ, রাজশাহী কলেজ। তিনি রাজশাহী পোস্ট ডট কমকে জানালেন, দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে বসেই দিন কাটছে। বর্তমানে আমি নিজেই করোনায় আক্রান্ত। ফলে কোয়ারেন্টাইনে আছি।

বাসায় থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছি, তবে এখন সুস্থ আছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক গত এপ্রিল থেকে সারা দেশে অনলাইন ক্লাসের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় উত্তর বঙ্গের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এবং টানা চারবারের মতো দেশসেরা রাজশাহী কলেজে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বিভিন্ন বিভাগে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান অনলাইন ক্লাসের জন্য নির্দেশ দেন, তার নির্দেশ অনুযায়ী রুটিন অনুসারে বিভাগের শিক্ষকরা ক্লাস নেন। আর এই ক্লাস এখনও চলমান রয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সেশনজট হওয়াটা স্বাভাবিক। অনলাইন ক্লাস চললেও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। আর পরীক্ষা বন্ধ থাকলে তো সেশনজটে শিক্ষার্থীরা পড়বে। তবে সম্ভব হলে যেই সব শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে তাদের ফলাফল প্রকাশ করা উচিত।

কেননা এতে করে হলেও কিছু সেশনজট লাঘব হবে বলে মনে করি। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে।

আর সেই পরীক্ষার সিলেবাসও কমিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে যেইসব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলমান বা ফরম ফিলাপ হয়েছে তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা আগে করতে হবে। তাহলে শিক্ষার গতি অব্যাহত থাকবে বলে মনে করি।

রাজশাহী কলেজের নান্দনিকতার ক্যাম্পাস আর দৃষ্টিনন্দন ভবন মন কাড়ে যে কারো। আর তাইতো ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বাদ পড়ে না রুটিনে। প্রতিদিনের মতো ক্লাশ বিরতিতে কলেজের পুকুর পাড়ে আসি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।

এছাড়া নিজেকে রিফ্রেশ করতে চা-সিংগাড়া খেতে ছুটে যাই শহীদ দুলাল ক্যান্টিনে। বন্ধুদের সাথে চায়ের কাপে মেতে উঠি আড্ডায়। একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় আলাপ-আলোচনায় শেষ হয় ক্যাম্পাসের সময়।

এ ছাড়া পড়ন্ত বিকেলে রুটিন করে শুরু হয় গ্রুপ স্টাডি। গ্রুপ স্টাডি শেষে আড্ডায় মেতে উঠতাম। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে সোনালী দিন পার করতাম। আজকে দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে মিস করছি সেই সব বন্ধুদের।

মাহজেবিন খালেদ জেবা, গণিত বিভাগ, সরকারি আনন্দমোহন কলেজ, ময়মনসিংহ। তিনি বলেন, জুন মাসের ১ তারিখে আমরা অনলাইন ক্লাসের জন্য নোটিশ পেয়েছি, আমাদের এখন অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। ক্লাস করতে যেয়ে দুর্বল ইন্টারনেটের জন্য প্রবলেম হয়।

তবে অনলাইনে ক্লাস করলে পড়ালেখা ভেতরে থাকা হয়। সেশনজট নিয়ে চিন্তায় আছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে, সিলেবাস কিছুটা কমিয়ে সেশনজট কিছুটা লাঘব করা যাবে বলে মনে করি। তবে আশা করছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেশনজট নিরসনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবেন।

এই সময়ে অধিকাংশ সময় বাসায় থাকি, তবে প্রয়োজনের বাইরে গেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যায়। লকডাউন এ পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছি। নতুন নতুন রান্না শিখছি এছাড়া মুভি দেখে, বই পড়ে সময় কেটে যাই। প্রিয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, কোথাও ঘুরতে যাওয়া, ফুচকার দোকানের ফুচকা, কৃষ্ণচূড়া চত্বর অনেক মিস করছি।

মো: ইমাম হোসেন, প্রাণীবিদ্যা বিভাগ, সরকারি ব্রজলাল (বি.এল) কলেজ, খুলনা। তিনি জানান, মার্চ মাসে কলেজ ছুটি হয়ে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস হয়নি। কিন্তু অনলাইন নিউজ থেকে জানতে পারলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুব তাড়াতাড়ি সকল কলেজকে একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসার পরিকল্পণা করেছে। যাতে করে সহজে অনলাইন ক্লাস করানো যায়।

গত কয়েক বছর হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার সেশনজট সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে। আর তাই, নতুন করে আবার সেশনজট হোক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেটা চাইবে না, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবেন আশা করি।

তবে আমার মনে হয় করোনাভাইরাসের মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই তারা একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করবে এবং যতদুর সম্ভব নির্দিষ্ট শিক্ষা বর্ষের সিলেবাস পড়ানোর চেষ্টা করবে।

কলেজ ক্যাম্পাসের সবুজ মাঠে ড. জোহা হলের সামনের খোলা জায়গাটা ছিল আমাদের আড্ডা দেওয়ার প্রিয় একটা জায়গা। ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদী।

তার পাশে বসে প্রায় সময় বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতাম, কলেজ ক্যাম্পাসের আনোয়ার মামার বিখ্যাত ঝালমুড়ি, কলেজ গেটে প্রিন্স ক্যাফের সিংড়া, সমুচা সব কিছুই খবুই মিস করছি। সর্বোপরি কলেজের সবুজ ক্যাম্পাসকে খুবই মিস করছি।

মোছা: তানজিলা ফেরদৌস, রসায়ন বিভাগ, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা। তিনি জানালেন, আমাদের ক্যাম্পাসে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই।অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা পায়নি, তবে ক্লাস করার জন্য আমাদের অধ্যাক্ষের থেকে নির্দেশনা পেয়েছি।

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা তাদের লেকচার ভিডিও করে কলেজের ফেসবুক পেজে আপলোড করেছেন। যেন আমরা যখন দরকার তখন ক্লাস গুলো দেখতে পারি। এই করোনা পরিস্থিতিতে যেহেতু দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে তাই আমি সেশনজটের আশঙ্কা করছি। করোনা মহামারী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

তবে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে আমরা আমাদের শিক্ষার ক্ষতি সামান্য পুষিয়ে উঠতে পারব, যদিও সেটা সরাসরি ক্লাসের থেকে বিস্তর পার্থক্য। অনলাইন ক্লাসে আমরা কখনো অভ্যস্ত ছিলামনা, তবে এটা এখন একমাত্র মাধ্যম।

অনলাইন ক্লাসের সুবিধা বলতে গেলে আমরা বাসায় বসে অনেক সময় ধরে লেকচারগুলো পর্যালোচনা করতে পারি, আমরা পড়ালেখা থেকে একদম বিমুখী হয়ে যাব না। আবার অনলাইন ক্লাসের অসুবিধাও কম নয়।

এখানে যে ডাটা খরচ হবে সেটা বহন করা সবার জন্য সম্ভব নাও হয়ে উঠতে পারে, এবারের বাজেটে ডাটার মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে এজন্য সবার জন্য অনলাইনে ক্লাস করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া দুর্বল গতির ইন্টারনেট সুবিধাতো আছেই।

এই সংকটকালীন মুহূর্তে অধিকাংশ সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কেটে যাচ্ছে পাশাপাশি বই পড়ে এবং পরিবারের সবাইকে সময় দিয়ে। কিন্তু ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়গুলো অনেক মিস করছি। ক্যাম্পাসে ডিগ্রী চত্বরের সেই আড্ডা, মধুর খুনসুটির কথা কল্পনা করলে এখনো হৃদয় শূন্যতা অনুভব করি।

আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ, খুলনা। তিনি বলেন, বর্তমান এই অসুস্থ পৃথিবীতে সুস্থ থাকার জন্য আর সবার মতো আমিও ঘরে আছি। তবে আমি সহিত্যপ্রেমী মানুষ।

এখন অনেক বই পড়ছি আর দু-চার লাইন লিখে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। এতকাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মানেই সবার ধারণা ছিল সেশন জট। তবে এবছরই প্রথম সেশনজটবিহীন প্রথম ব্যাচ বের হওয়ার কথা ছিল।

করোনা সেটা আর হতে দিলো না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের নিয়মিত ক্লাস হয় না। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের। যেখানে প্রায় সবাই টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ বহন করে সেখানে বিগত তিন-চার মাস যাবৎ টিউশনিও নেই।

ওদিকে ঘরভাড়া কিন্তু ঠিকই পুরোটা দিতে হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখনো পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস হওয়ার তেমন কোন আভাস পাইনি। তাছাড়া ইন্টারনেটের অযাচিত দাম, ধীর সংযোগ কিংবা সবার স্মার্ট ফোন না থাকায় সবার পক্ষে অনলাইন ক্লাস করাও সম্ভব নয়।

তাই আমি মনেকরি, সবকিছু স্বাভাবিক হলে আমাদের সিলেবাস কিছুটা কমিয়ে এবং ক্লাস বাড়িয়ে আমাদের পড়ালেখার ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে আনা সম্ভব। ভীষণ মিস করছি আমার বন্ধুদেরকে, ঝালমুড়ি মামাকে আর আমার ছোট্ট ক্যাম্পাসটাকে।

সালমা আক্তার সুমি, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ। তিনি জানালেন, আমাদের ক্যাম্পাসে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে ১মাস হতে যাচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে অনলাইন ক্লাসের কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি।

সেশনজট নিয়ে টেনশন তো আছেই, ইয়ার লস হবে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু কী আর করার। এই সংকটকালীন সময়ে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনলাইন ক্লাসের গুরুত্ব অনেক।

এমনিতেই লকডাউনের ফলে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ উঠে গেছে, অনলাইন ক্লাসের ফলে আমরা পড়াশোনার প্রতি একটু আগ্রহ দেখাতে পারছি। এসাইনমেন্ট, স্যারদের পড়া দেয়া, এসব পড়াশোনার জন্য অনেক সাহায্যকর। এটাও বলা প্রয়োজন যে ইতোমধ্যে আমাদের অনলাইন ক্লাস শেষও হয়ে গেছে, ২ সপ্তাহ ক্লাস হয়েছে। তাই এখন নিজে বাসায় পড়ছি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাসায় বসে যথেষ্ট বিরক্ত হচ্ছি ঠিকই, কিন্তু আমরা চাইলে এই সময়টা অনেক ভাবে কাজে লাগাতে পারি। তেমনই আমি বেশি না হলেও অল্প কিছু পড়ার চেষ্টা করি। আর অবসরে গান গাওয়া এভাবে সময় কেটে যাচ্ছে।

সবকিছু একদিন ঠিক হয়ে যাবে, সকল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবো বলে আশা করি। কলেজের বন্ধু-বান্ধব আর তাদের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো খুব মিস করছি।

সেই ১০ জন শিক্ষার্থী

 

মোঃ মাইনউদ্দিন তানজিল, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারের সাথেই বেশি সময় কাটছে। বিশেষ করে বাবা গ্রামে ডাক্তারি করেন।

গ্রামের অন্যান্য ডাক্তাররা যখন সাধারণত সর্দিকাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের রোগীকে জরুরী মুহূর্তে চিকিৎসা দিচ্ছেন না, সেখানে আমার বাবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সর্ব অবস্থায় রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন। আমিও বাবার সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন রোগী বাড়িতে যাচ্ছি এবং তাদেরকে সাধ্যমতো সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি।

লকডাউনের এই অবস্থায় সপ্তাহে দু'একদিন জুম অ্যাপস এর মাধ্যমে আমাদের ডিপার্টমেন্টের স্যারেরা ক্লাস নিচ্ছেন। এখন আমরা যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তাদের বর্তমান সময় সম্পর্কে খুবই সচেতন থাকা উচিত।

কারণ আধুনিক এই বিশ্বে খুবই দ্রুত গ্লোবালাইজেশন হচ্ছে, আমরা পিছিয়ে থাকলে চলবে না। অনলাইকে কাজে লাগিয়ে আমাদের পড়াশোনার সকল কাজ চালিয়ে যেতে হবে। ক্লাসের পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু স্কিল ডেভলপ করার চেষ্টা করা দরকার। একটু টেনশন হচ্ছে, সবাইকে নিয়ে।

অনেক নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা এই অবস্থায় খুবই চিন্তায় আছেন। আশা করি যখন পরিস্থিতি ভালো হবে, শিক্ষার্থীদের দাবির আলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আসলে এই লকডাউন অবস্থা না পড়লে, কখনোই বুঝতাম না ক্যাম্পাসের প্রকৃত গুরুত্ব। বন্ধুদেরকে ও ডিপার্টমেন্টের স্যারদের কে খুবই মিস করছি। বিশেষ করে, ভিক্টোরিয়া কলেজ বাদামতলা, হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসের ফটকের সামনের হোটেলগুলোর সিঙ্গারা-সমুচা গুলো অনেক মিস করছি।

সায়মা রহমান পুতুল, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ। তিনি বলেন, আমাদের কোনো অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে না। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি। তাই সাধারণভাবে মোবাইলে বিভিন্ন নাটক আর মুভি দেখে, আম্মুকে ঘরের কাজে সাহায্য করে, আর বিভিন্ন বই পড়ে সময় কাটাচ্ছি।

আর সেশনজট নিয়ে তো ভয় আছে। আশা করি বিভাগীয় শিক্ষকদের আন্তরিকতায় তা কাটিয়ে উঠতে পারবো। বলতে গেলে পুরো ক্যাম্পাসকে সত্যি অনেক মিস করছি। বিশেষ করে কাঁঠাল চত্বর আর জিরো পয়ন্টে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, একসাথে গান আর চাচার সেই ঝালমুড়ি, ফুসকা খুব মিস করছি।

আশা করছি পৃথিবীর মানুষ এই মহামারী থেকে শীঘ্রই মুক্তি পাবে আর পৃথিবী আবার সুস্থ হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ। সর্বোপরি সবার সুস্থতা কামনা করছি।

মোঃ ইকবাল হোসেন, একাউন্টিং বিভাগ, সরকারি ব্রজমোহন(বি.এম) কলেজ, বরিশাল। তিনি রাজশাহী পোস্ট ডট কমকে জানালেন, এ মাসের ১ তারিখ থেকে আমারা অনলাইন ক্লাস এর নোটিশ পেয়েছি, আমাদের অনলাইন ক্লাস চলছে।অবশ্যই সেশনজট নিয়ে টেনশন হচ্ছে।

পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে লকডাউন শেষে অনবরত ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। অনলাইনে ক্লাস করা এখন সময়ের দাবি কারণ কোন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবনে সেশনজটের মতো ভোগান্তির মধ্যে পড়তে চায় না।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যারা গ্রামে বসবাস করে তাদের মোবাইলের নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুতের বেহাল দশা। সেইসাথে রয়েছে বাংলাদেশের সকল মোবাইল সিম অপারেটরদের উচ্চ মূল্যের ডাটা প্যাকেজ, যা এখন অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে এই মূহুর্তে দেয়া সম্ভব নয়।

শুধু কি তাই? অনেক শিক্ষার্থী এখনো এন্ড্রয়েড মোবাইল ব্যবহার করেনা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনলাইন ক্লাস কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়েও আছে দ্বিমত। পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় নোট সামগ্রী এরপর পরীক্ষাসহ নানানরকম প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

তবে কিছু জায়গার ইন্টারনেটের কচ্ছপ গতিকে বাড়ানো ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছা অনলাইন ক্লাসকে এগিয়ে নিতে যেতে পারে। আমার মতো অনেকের মাঝেই অনলাইন ক্লাস নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। এ সময়ে খুবই বোরিং আর অলস সময় কাটাচ্ছি।

তার সাথে আছে করোনা আতঙ্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় অধিকাংশ সময় কেটে যায়, এছাড়া পরিবারের সদস্যদের সাথে সুন্দর সময় কাটানোর চেষ্টা করছি। কলেজের জিরো পয়েন্ট, কবি জীবনানন্দ দাশ চত্বরের আড্ডা ও মন্টু মামার চা, মামার ঝালমুড়ি আর বন্ধুদের খুব মিস করছি।

জান্নাতুল ফিরদাউস মিম, গণিত বিভাগ, সরকারি বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, গোপালগঞ্জ। তিনি বলেন, আমাদের কলেজে এখন পর্যন্ত কোন বিভাগ অনলাইন ক্লাস করার সিদ্বান্ত জানায়নি। তবে এই পরিস্থিতিতে একমাত্র অনলাইন ক্লাসই ভরসা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেহেতু বন্ধ সেহেতু সেশন জটের একটা শঙ্কা আছেই।

ক্লাস ও প্রাইভেট অফ, তাই অনলাইন ক্লাস করলে আমরা আমাদের কোর্স গুলো একটু এগিয়ে নিতে পারতাম। তাহলে পরবর্তীতে সেশন জট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যেত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের উপকারে আসবে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আশা করি।

কোভিড-১৯ এর কারণে সরকার ১৭ই মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করেছে তাদের সিদ্বান্তকে সাধুবাদ জানাই। ক্যাম্পাস, লাইব্রেরী সব বন্ধ তাই বাড়িতেই সময় কাটাই।

সৃজনশীল কাজে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছি, আর এমনিতেই নতুন নতুন বই পড়ে, মুভি দেখে , দাবা খেলে, ঘরোয়া কাজে আম্মুকে সাহায্য করে, অনান্য ধর্মীয় কাজে সময় কাটছে।

তবে সব বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, ডিপার্টমেন্ট, ডিপার্টমেন্টের সকল স্যার, ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাসের সবুজ মাঠ, বকুল তলা অনেক মিস করছি । ইনশাল্লাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার সবাই এক হবো।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দেশের ২ হাজার ২৬০টি কলেজকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালুর নির্দেশনা দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, "যেসব কলেজের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে তারা জরুরি ভিত্তিতে অনলাইন ক্লাস চালু করবে।

আর যেসব কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সুবিধা নেই, তাদেরও দ্রুত এই সুবিধার আওতায় আসতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

এক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করা মোবাইল অ্যাপস কিংবা জুম সফটওয়্যার ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজ ও প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস শুরু করে দিয়েছে"।

 

 

আরপি / এমবি-১৫

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top