রাজশাহী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


হুমকির কারণেই রাবির ছাত্র উপদেষ্টার অব্যাহতি!


প্রকাশিত:
১১ মার্চ ২০২০ ০৩:০২

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ১৫:৪২

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র উপদেষ্টার পদ থেকে অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানুকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অব্যাহতি দেওয়ার পরেই অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু দাবি করেছেন, ছাত্রী শ্লীলতাহানি নিয়ে হাইকোর্টে রিট হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পদচ্যুতির পেছনে প্রশাসনের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির আশ্বাসে আর্থিক লেনদেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকতা-কর্মচারিদের হুমকিসহ বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছে।

এর আগে গত ০৮ই মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়েল ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারী স্বাক্ষরিত এক আদেশে ছাত্র উপদেষ্টার পদ থেকে অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানুকে অব্যহতি দেওয়া হয়। আদেশে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

হঠাৎ করে পদচ্যুতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পদচ্যুতি নিয়ে এ প্রতিবেদকের প্রশাসনের উর্ধ্বতন দুইজন কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষক দুরুল হুদাকে অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিষয়টি স্কুলের সভাপতিসহ প্রশাসনের অনেকে অবহিত ছিলেন। সম্প্রতি দুরুল হুদার বিরুদ্ধে স্কুলের এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন অধ্যাপক লায়লা আরজুমান। দুরুল হুদা অন্যত্র বিয়ে করায় তার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলা হয়েছে বলে প্রশাসনের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। ফলে গ্রেফতার হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিস্কওে গড়িমসি করেন। কিন্তু হাইকোর্টে রিট করে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রুল জারিতে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন উপাচার্যসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকতারা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্র উপদেষ্টা এবং তার স্বামী স্কুল অধ্যক্ষ শফিউল আলম’র কর্মকান্ডের ওপর ক্ষুদ্ধ উপাচার্য। কিছু দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের অবিভাবকরা ওই স্কুলের অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে উপচার্য বরাবর স্বারকলিপি দেন। পরবর্তীতে ছাত্র উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের অভিভাবদের ডেকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেন। বিষয়টি উপাচার্যের কানে গেলে তিনি ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। ছাত্র উপদেষ্টার স্বামী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের এক শিক্ষকের একাউন্ট ব্যবহার করে প্রচুর টাকা লেনদেন করেছেন। প্রশাসনের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে ছাত্র উপদেষ্টা ও তার স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। লায়লা আরজুমান বানুকে অব্যাহতির দেওয়ার পেছনে এসব বিষয় কাজ করতে পারে।

তবে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, প্রশাসনের মধ্যে গ্রুপিং নিয়ে উপাচার্য বেশ সংক্ষুদ্ধ। বিভিন্ন সময় নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ছাত্রী শ্লীলতাহানি নিয়ে রিট করে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রুল জারি করায় উপাচার্য ক্ষুদ্ধ হয়েছে।

আরোও পড়ুন: রাবিতে মানববন্ধন, ৪৩ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের দাবি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, বর্তমান প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক সিনিয়র অধ্যাপকের সঙ্গে মিলে বর্তমান ছাত্র উপদেষ্টা প্রশাসনের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার ফোনালাপ ফাঁস ও পরিবহণ দফতরের প্রশাসক এফএম আলী হায়দারের ফোনালাপ ফাঁসে পেছনে তার হাত থাকতে পারে বলে প্রশাসনের একাংশের ধারণা ছিল। স্কুল শিক্ষার্থী শ্লীলতাহানি অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের রিটের মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রুল জারির মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে ছাত্র উপদেষ্টা প্রশাসনে অংশ হয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। বর্তমান প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা তার কর্মকাণ্ডে ক্ষুদ্ধ, তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানুকে অব্যাহতি দিয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এগুলো বানোয়াট ও কাল্পনিক।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর স্কুল ছাত্রীর শ্লীলতাহানির দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের প্রভাষক দুরুল হুদা গ্রেফতার করে মতিহার থানা পুলিশ। পরে তিনি জামিন পায়। গত ফেব্রুয়ারিতে আইনজীবী জোবাইদা গুলশান আরা হাইকোর্টে জনস্বার্থ শাখায় রিট করেন। যার প্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রুয়ারি রিটের প্রাথমিক শুনানিতে হাইকোর্ট দুরুল হুদার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুরুল হুদাকে সাময়িক বরখাস্ত করতেও বলা হয়। রিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, লিগ্যাল সেলের প্রশাসক, রাবি স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন দফতরকে জবাব দিতে বলা হয়।

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top