রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


রাজশাহী কলেজের পিঠা উৎসবে বসন্তবরণের উচ্ছ্বাস


প্রকাশিত:
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:৫৩

আপডেট:
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০৫

কলেজের পিঠা উৎসবে বসন্তের আমেজ

সুন্দরী সূর্যমুখীর সাথে হৃদয়হরণ, জামাই আদরে মনচুরি- না কোন ছড়া নয়, শনিবার রাজশাহী কলেজে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী পিঠা উৎসবের বিভিন্ন স্টলের নাম এগুলো। মনচুরি, বকুল পিঠা ঘর, সূর্যমূখী মাস্টার্স শেষ পর্ব, লবঙ্গ লতিকা, হৃদয়হরণ, সুন্দরী ও জামাই আদরসহ মোট ৮টি আকর্ষণীয় নামের স্টল ছিল পিঠা উৎসবে। ছিল আলাদা মেহেদী স্টল। পিঠার স্বাদ গ্রহণের পাশাপাশি হাতে মেহেদী রাঙিয়ে বাড়তি আরও একদিন বসন্তের আমেজ উপভোগ করেছেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা।

কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংগঠন ‘ক্লাব অব ইকোনমিকস’ দিনব্যাপী এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। এতে অংশ নেন অর্থনীতি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। স্টলগুলোতে গতানুগতিক পিঠার বাইরেও ছিল অনেক অচেনা পিঠার সমাহার।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সূর্যমূখী স্টলে লাভ বার্ড, জামাই আদর, এলিয়েন, বউ ফুসলানী, ক্রাশ কেক, গোলাপ, মনচুরী, নানী পিঠাসহ আরও অনেক পিঠার আয়োজন ছিল। পিঠাগুলো নিজেরাই তৈরী করেছেন বলে জানান, স্টলের কর্ণধার রুমি, রুনি, গোলাপী, নাজিয়া ও ইসমাইলরা।

লবঙ্গ লতিকা স্টলের ডাব পুডিং এর প্রতি ক্রেতাদের বিশেষ আকর্ষণ লক্ষ্য করা গেছে। দুধ পুডিং পরিচিত হলেও ডাব পুডিং ছিল অনেকের কাছে অচেনা। ফলে এটার স্বাদ নিতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ও দৃষ্টিগোচর হয়। স্টলের উদ্যোক্তা সাদিয়া, সাথী ও সোনিয়া জানান- ডাবের পানি, চিনি ও চায়না গ্রাস দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে এই ডাব পুডিং।

 

স্টলে স্টলে দর্শনার্থীদের ভিড়

এছাড়াও হাঁস পিঠা, বিনুনী পিঠা, নিমপাতা, ঝিনুক, কামরাঙা, রস পাতাবাহার, জবা, রস চিতুই, বিভিন্ন রকমের পাকোয়ান, দুধ পুলি, নারকেলের নাড়ু, ফিরনি সহ শত শত পিঠার সরবরাহ ও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সমাগমে জমজমাট ছিল পিঠা উৎসব।

শুধু পিঠা নয়, উৎসবস্থলে ছিল লোকজ ও আধুনিক গানের জলসা। অর্থনীতি বিভাগের সাংস্কৃতিক গ্রুপ ‘ইকোনোরিমিক্স’ এর আয়োজন করে। পিঠা খাওয়ার সাথে সাথে দর্শনার্থীরা উপভোগ করেছেন বিভিন্ন গান। শিক্ষার্থীদের গিটারের ঝংকারের সাথে বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. ওয়াসীম মোহা. মেজবাহুল হকের তবলায় তাল দেয়ার দৃশ্য দেখতে উৎসবস্থলে ভিড় জমান বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা।

এদিন সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন। এসময় অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, কেন চাকরির পেছনে ছুটে বেড়াতে হবে? তোমরা অর্থনীতি পড়ে উদ্যোক্তা হও। আরও অনেককে চাকরি দাও। আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। এই পিঠা উৎসব থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্যোক্তা গড়ে উঠলে তা সার্থক হবে বলে জানান অধ্যক্ষ। এছাড়াও বিভিন্ন সময় অর্থনীতি বিভাগের সৃজনশীল কর্মসূচির প্রশংসা করেন তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাঃ আব্দুল খালেক ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর পিযুষ কান্তি ফৌজদার।

অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. ওয়াসীম মোহা. মেজবাহুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনীতে পিঠা উৎসবের তত্ত্বাবধায়ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নাহিদা আফরোজ, অন্যান্য শিক্ষকমন্ডলী, ক্লাব অব ইকোনমিক্স এর সভাপতি সানোয়ার হোসেন, শামিউল ইসলাম সজীব প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

ক্লাব অব ইকোনমিকস এর সভাপতি সানোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে উদ্যোক্তা তৈরী করা। আমরা যদি উদ্যোক্তা হতে পারি, তাহলে নিজের পাশাপাশি অনেকেরই কর্মসংস্থান করতে সক্ষম হবো। মুজিববর্ষে সেটাই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো। আর সেই লক্ষ্যে বরাবরের মতই ক্লাব অব ইকোনমিকস ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। হোক সেটা ছোট-খাট কোন ব্যবসা, এই আয়োজনে অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্যোক্তা তৈরী হলেই অর্থনীতির ভাষায় এই উৎসবের ‘উপযোগিতা’ (লক্ষ্য) সর্বোচ্চ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়াও এমন বিস্তৃত পরিসরে পিঠা উৎসবের আয়োজন রাজশাহী কলেজে এটাই প্রথম বলে দাবি করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ক্লাব অব ইকোনমিক্স লেখাপড়ার পাশাপাশি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, দক্ষতা ও উন্নত মানসিকতার বিকাশে কাজ করে। বিভিন্ন সময় আয়োজন করে এমন ব্যতিক্রমী উৎসবের।

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top