রাজশাহী কলেজ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ ঐতিহ্য ও জ্ঞানের বাতিঘর

বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজ ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। একাডেমিক উৎকর্ষের পাশাপাশি দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও সংস্কৃতির শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রেও এটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এই কলেজের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোর মধ্যে অন্যতম ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, যা ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই বিভাগ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর শামস-উল-হকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিভাগের প্রথম প্রধান ছিলেন জনাব সৈয়দ আজিজুর রহমান হাসেমি। শুরু থেকেই এই বিভাগ ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা দিক নিয়ে গবেষণা ও অধ্যয়ন করে আসছে। এখানে শিক্ষার্থীরা মুসলিম শাসনকাল, দার্শনিক চিন্তাধারা এবং ইসলামের ঐতিহ্য সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পারে। বর্তমানে এই বিভাগটিতে প্রায় ২,৬০০ শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়ন করছে।
এই বিভাগের শ্রেণিকক্ষগুলো বেশ প্রশস্ত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ পদ্ম পুকুরের সামনে অবস্থিত, যা শিক্ষার্থীদের জন্য মনোরম পরিবেশ তৈরি করেছে। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্লাসরুম, প্রজেক্টরের ব্যবহার এবং আন্তরিক শিক্ষকের পাঠদানকে আরও সহজ ও কার্যকর করে তুলেছেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণার দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কায়েস আহমেদ জানান, আমাদের ডিপার্টমেন্ট পদ্ম পুকুরের সামনে হওয়ায় আমরা মনোরম পরিবেশে ক্লাস করতে পারি। মুসলিম ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারছি, যা সত্যিই সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা। এমনকি শিক্ষকরাও অনেক আন্তরিক।
অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো: মোত্তাকিম আলি বলেন, রাজশাহী কলেজ সবসময়ই আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান ছিল। ইসলামের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ থাকায় এখানে ভর্তি হয়েছি। সিনিয়র ভাই-বোনেরা ও শিক্ষকরা সবসময় আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সহায়তা করেন।
অনার্স তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী মোসা: সারা খাতুন বলেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নয়, এটি আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও ধারণা দেয়। বিসিএসসহ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এই বিভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি কুইজ প্রতিযোগিতা, ফুটবল টুর্নামেন্ট, বিতর্ক, ইসলামিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ নানা কার্যক্রমের আয়োজন করে থাকে। প্রতি বছর এখান থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করছে। শিক্ষার আধুনিকায়ন ও গবেষণার প্রসারে এই বিভাগ ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক অনন্য সমন্বয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোসাঃ ইয়াসমিন আক্তার সারমিন বলেন, আমি যখন থেকে এই বিভাগের প্রধান দায়িত্ব নিয়েছি তখন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভাগের উন্নয়নের চেষ্টা করে গেছি যেন এই বিভাগ কলেজের অন্যতম বিভাগে পরিণত হয়। এ বিভাগেরই একটি সংগঠন লাইট হাউস ক্লাব ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল কিন্তু বর্তমানে তা আবারো পুনর্জীবিত করেছি। আমরা শিক্ষকরা যেমন বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত আছি, তেমনি আমার শিক্ষার্থীরাও কিন্তু বিভিন্ন কাজে যুক্ত আছে যেমন- রিপোর্টার্স ইউনিটি, রেঞ্জার, বিএনসিসি, স্কাউট। যেখানে সবাই পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরো বলেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এমন একটা বিভাগ যা রাজশাহী কলেজের সাথে এমনভাবে জড়িত হয়ে আছে যে রাজশাহী কলেজের উন্নয়ন মানে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের উন্নয়ন এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের উন্নয়ন মানে রাজশাহী কলেজের উন্নয়ন।
আরপি/আআ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: