রাজশাহী শনিবার, ২৫শে জানুয়ারী ২০২৫, ১২ই মাঘ ১৪৩১


স্মৃতির পাতায় রাজশাহী কলেজ অর্থনীতি বিভাগ


প্রকাশিত:
১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৪৫

আপডেট:
১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৪৬

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

অর্থনীতি বিভাগ রাজশাহী কলেজের অন্যতম একটি বিভাগ। ইচ্ছা ছিল এই বিষয়ে পড়াশোনা করার। সৌভাগ্য ক্রমে সুযোগ ও হয়েছে। কলেজে আসা যাওয়া করার সময় বিভিন্ন ভাবে শুনেছি অর্থনীতি বিভাগ দিবস পালিত হয় , ইতোপূর্বে ২ বার পালিত হয়েছে। সেই আয়োজনে যোগদানের সৌভাগ্য আমার হয় নি। গল্পচ্ছলে বন্ধুদের থেকে জানতে পারলাম ২০২৪ এ আবার অর্থনীতি বিভাগ দিবস পালিত হবে। আয়োজনে যোগদানের আগ্রহ মোটেও ছিল না কিন্তু বন্ধুরা বলল বর্তমান ও সাবেক সকল ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত থাকবে। সবাই মিলে অনেক আনন্দ উৎসবের আয়োজন হবে। চেনা অচেনা সব মুখের দর্শন পাওয়া যাবে। শুনে মনে আগ্রহ জাগল, তাই দেরি না করে কলেজে এসে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করলাম।

এইবার বলা যাক সেই স্মৃতি বিজড়িত ৫-ই ডিসেম্বরের কথা। ৫-ই ডিসেম্বরের আগে থেকেই বেশ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছিল বিভাগে। সাজ সজ্জার কোন কমতি ছিল না। এক সপ্তাহ আগে থেকে পুরো ভবন কে আলোয় সাজিয়ে আলোকিত করা হয়েছিল। সকল প্রকার উৎসবের আয়োজনে ব্যস্ত ছিলো বিভাগীয় ছাত্র ছাত্রীরা। সবাইকে উপহার হিসেবে একটি সুন্দর ব্যাগ ,টি শার্ট, ম্যাগাজিন ও সময়সূচী দেওয়া হয়। সঙ্গে ছিল একটি ম্যাগাজিন যা স্মৃতির পাতায় অম্লান হয়ে থেকে যাবে। চেনা অচেনা সবার পরিচয় সংরক্ষিত হয়ে থেকে গেছে। ৪ ডিসেম্বর রাত থেকে অনেক ব্যাকুল ছিলাম পরদিন সকালের অপেক্ষায়। অনেক রকম ছেলে মানুষি বুদ্ধি মাথায় আসছিল পরক্ষনেই মনে হলো আমি তো আর প্রাইমারি স্কুলের ছোট্ট মেয়েটি নেই এখন আমি সন্মান ২য় বর্ষের ছাত্রী। মুচকি হেসে অপেক্ষায় থাকলাম পরদিনের। সকাল হলে আমি খুব তাড়াতাড়ি উঠে গেছিলাম এতো বড় উৎসব একটু সাজগোজ তো করতেই হবে। মনের মতো করে সাজগোজ করে রওনা হই কলেজের উদ্দেশ্যে। গাড়ি থেকে নেমে কলেজে প্রবেশ করতেই মনের মধ্যে একটা আনন্দ ভাব আসে যেন আমি অনেক খুশি ঠিক যেমন ছোটবেলায় ঈদের আগের দিন রাতে আকাশের চাঁদ দেখে খুশি হতাম। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম,আজ কতটা আনন্দ হবে,সবাই কি আমার মতোই আনন্দিত? যেমনটা ছোটবেলায় ঈদের দিনে আনন্দিত দেখতাম সবাইকে। নাকি বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঈদের আনন্দ হারিয়ে যাওয়ার মতো করে সবার আনন্দ ও অপ্রকাশিত থাকবে। ভাবতে ভাবতেই পৌঁছে যাই অর্থনীতি বিভাগের সামনে। অনেকের সাথে দেখা হলো কথা ও হলো। বুঝতে পারলাম আনন্দ হারিয়ে যায় নি। তখনি একজন ডেকে বলল সবাই এসো এখন শোভাযাত্রা শুরু হবে।

প্রথম পর্ব সকাল ৮.৩০ মিনিটে অধ্যক্ষের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা দিয়ে আয়োজনের শুরু হয়। শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীরা এক রকম শাড়ি ও পাঞ্জাবি পড়ে শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহন করে। তবে আমি তা করি নি। ভিন্ন রং এর শাড়ি পরেছিলাম। সেজন্য শোভাযাত্রায় আর অংশগ্রহণ করি নি, দূর থেকে দেখেছি মাত্র।এর পর অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক সহ সকল শিক্ষকদের নিয়ে শুভ উদ্বোধন করা হয় রংবেরঙের বেলুন এর সাথে ছোট ব্যানার লাগানো ছিল যা আকাশে উড়িয়ে দেয়া হয়। উদ্বোধন ঘোষণা পর্ব শেষে আমাদের সকালের নাস্তার সময় আসে। সকলে নিজ নিজ টোকেন দেখিয়ে নাস্তা সংগ্রহ করে। মাঠে হাঁটতে হাঁটতেই নাস্তা খাওয়া শুরু করি। আর ইতিমধ্যেই প্রায় সব ছাত্র-ছাত্রী চলে এসেছিল। কয়েকজন ভাইয়া আর আপু একসাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল সেখানে তাদের সাথে আমিও দাঁড়ায়। পরিচয় দিয়ে কথা বলতেই জানতে পারলাম তারা অনেক বছর আগেই অর্থনীতি নামক কঠিন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এই কলেজ থেকে বিদায় নিয়েছে। তাদের কথায় প্রকাশ পায় তারা খুবই আনন্দিত এই আয়োজনের জন্য। অনেক বছর আবার সেই চেনা অচেনা সবার সাথে একটু আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কাজের চাপে, সময়ের অভাবে, নানান রকম ব্যস্ততায় দিন চলে যায় ইচ্ছে হলে ও তাদের সুযোগ হয় না একসাথে কাটানো ৪ ৫ বছরের সেই পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া বা সময় কাটানোর। তাই তারা খুব খুশি ছিল আর তাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ বলে দিচ্ছিল তারা কতটা আনন্দিত। হুট করে এক বন্ধু ডাকলো ,আই সবাই মিলে ছবি তুলবো। তাকিয়ে দেখি চারিদিকে এই সুন্দর সময় , সাজানো মাঠ আর পরিবেশ এবং চেনা অচেনা সব মানুষ ফ্রেমবন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটায় সময় যাচ্ছে, সবার আনন্দ আলো বাড়ছে। শুধু মাত্র অর্থনীতি বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরাই নয় কলেজের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ও এসেছে এই সুন্দর পরিবেশটা উপভোগ করতে। শুধু তাই নয় পুরো কলেজের বাইরে ও অনেক দর্শনার্থীরা এসেছে।এর মধ্যে দুই একজন সাংবাদিক ও চোখে পড়েছে বড় বড় ক্যামেরা সহ। দ্বিতীয় পর্ব সকাল ৯:৪০ মিনিটে শুরু হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সব প্রতিযোগিতা আমার দেখা হয়নি মাঠের বাইরে বিভাগের সামনে অবস্থান করার কারণে। যারা অংশগ্রহণ করেছিল তারা সবাই আনন্দের সাথে খেলে। ১ম, ২য় ও ৩য় হওয়া প্রতিযোগিরা পুরস্কার পাবে, হয়তো একারণে তারা একটু বেশি আনন্দিত ছিল। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ হলে তৃতীয় পর্ব ১১:১৫ মিনিটে অতিথি বৃন্দের আসন গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ সমূহ পাঠ করা হয়। সকলে শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সাথে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পাঠ করা হয়। এভাবে একে একে আহ্বায়কের স্বাগত বক্তব্য, সার্বিক তত্ত্বাবধায়কের বক্তব্য,মোড়ক উন্মোচন, অনুষ্ঠানে আগত খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এর বক্তব্য পর্ব শেষ করা হয়। খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ কে সন্মাননা প্রদান করা হয়। এভাবে সন্মানিত অতিথির বক্তব্য, সভাপতির ধন্যবাদ জ্ঞাপন,আয়োজক কমিটির পরিচিতি, পুরস্কার বিতরণী ও সংবর্ধনা পর্ব শেষ করতেই আযানের সময় এসে যায়। ১:১৫ মিনিটে আযানের বিরতি দেয়া হয়।আযান শেষ হলে স্টল পরিদর্শন শুরু হয়। অনেক কিছুর স্টল বসানো হয়েছিল। খাবারের ,বইয়ের,হস্ত শিল্পের। পছন্দ মতো মেহেদী পড়ে হাত সাজানোর জন্য কয়েকজন ছাত্রী একটা স্টল করেছিল।স্টল দেখতে দেখতে চোখ পড়ল একটা জিনিসের দিকে,সাদা কাপড় দিয়ে একটু সাজিয়ে রেখেছে।সেটা কি বুঝতে না পেরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম তখন বুঝতে পারলাম নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য সেখানে লেখার জায়গা করে রেখেছে। অনেকেই সেখানে অনুভূতি লিখেছে কিন্তু আমি লিখি নি কারণ আমার মনের এতো অনুভূতি সেখানে লিখতে গেলে জায়গা পাবো না।মাঠে থাকা অবস্থাতেই দেখলাম দুপুরের খাবার দেওয়া শুরু হয়ে গেছে।দেরি না করে এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান ভবনের ৫ তলাই উঠার যুদ্ধ শুরু করলাম কারণ আমার ক্ষুধা বেড়ে যাচ্ছিল ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উঠার কথা মনে করতেই। অবশেষে খাবারের নাগালে পৌঁছে টোকেন দেখিয়ে খাবার নিলাম । ভেবেছিলাম বন্ধু বান্ধব সবাই একসাথে খাব কিন্তু আমি দেরি করে ফেলেছি তাই সবার খাওয়া প্রায় শেষ তখন আমি খাবার নিই সেজন্য ইচ্ছে অপূর্ণ থেকে গেল। দুপুরের খাবার নেওয়ার পর টোকেন টার প্রয়োজন শেষ হয়ে যায় ঠিক যেমন মজার মজার চকলেট খাওয়ার পর প্যাকেট গুলো আমরা ফেলে দিই। কিন্তু এই টোকেন টার আমার কাছে অনেক স্মৃতিময় তাই চকলেটের প্যাকেটের মতো করে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারলাম না। অনেক যত্ন সহকারে রেখে দিলাম নিজের কাছেই।তারপর খাবারটা আমি প্রসাশন ভবনে অবস্থিত ছাত্রী কমনরুমে বসে খাই । মন খারাপ হচ্ছিল সবার সাথে বসে খেতে পারি নি তাই কিন্তু ক্ষুধার সময় সুস্বাদু খাবার আমার সেই মন খারাপ অনেকটাই ভুলিয়ে দেয়। খাওয়া শেষ করে সেখানেই একটু বিশ্রাম করলাম। কমনরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখি বিভাগের সামনে শিক্ষার্থীদের ভিড় জমেছে নিজেদের আনন্দ ফ্রেমবন্দি করার। এরপর আবার চলে গেলাম মাঠে আয়োজনের স্থানে। চতুর্থ পর্ব দুপুর ২:৪০ মিনিটে আবার অনুষ্ঠান শুরু হয়। সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের রোমন্থন করে। কাটিয়ে যাওয়া সময় ও ফেলে যাওয়া স্মৃতি সবার সামনে তুলে ধরে। এরপর হয় লটারি খেলা।১০ টাকা করে দাম ছিল প্রতি টিকিটের। কেউ ৫ টা কেউ ১০ টা আবার কেউ কেউ তো ১৫ টা করেও নিয়েছে টিকিট। একে একে টিকিট এর মালিক বাছাই হয় এবং লটারি পুরষ্কার ঘোষণা শুরু হয়। লটারি পুরষ্কার ঘোষণা শেষ হতে না হতেই আছর এর আযানের বিরতি সময় এসে যায়। বিরতির পর পঞ্চম পর্ব বিকাল ৪ টায় আরম্ভ হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে নাচ ,গান,নাটক, কৌতুক, কোন কিছুর কমতি নেই। একের পর এক অসাধারণ নাচ দেখে গান শুনে মনে হচ্ছিল বিশাল কোন কনসার্ট এর চেয়ে কম না। বিভাগীয় স্যার ম্যাডাম ও অংশগ্রহণ করেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। এভাবে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে করতে কখন যে রাত হয়ে যায় বুঝতেই পারিনি। আর ততক্ষনে হিড়িক পরে গেছিল রাজশাহী কলেজে এই আয়োজন অনুষ্ঠান উপভোগকারী দর্শনার্থীদের। সবদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। সবকিছুরই শেষ রয়েছে এতো আয়োজন অনুষ্ঠানের ও শেষ সময় চলে আসে । সবশেষে ফায়ার ফেস্টের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।রাত হয়ে যাওয়ায় আর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় শেষ মুহূর্তে আর সবার সাথে মন খুলে কথা বলার সময় মিলল না।

সব মিলিয়ে এখনো চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই আনন্দঘন সময়গুলো। রাজশাহী কলেজ এ ছাত্রী হওয়ার দেখি প্রতিদিনই কোন না কোন অনুষ্ঠান থাকে কিন্তু অর্থনীতি বিভাগ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান সবচেয়ে আলাদা আর মনে থাকার মতোই একটা বিষয়। এতো বড় আয়োজন রাজশাহী কলেজে খুব কমই হয় বলে আমি মনে করি।এ অনুষ্ঠান আমার কাছে স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে। অনুষ্ঠানে উপহার পাওয়া টি-শার্ট ,ব্যাগ , ম্যাগাজিন,সময় সূচি ও টোকেনটি আমার কাছে থেকে যাবে যতদিন আমি থাকবো। সবমিলিয়ে আমার স্মৃতির পাতায় অমর হয়ে থাকবে রাজশাহী কলেজ অর্থনীতি বিভাগ দিবস ২০২৪।

 

 

মোসাঃ তামিম তুলি
শিক্ষার্থী রাজশাহী কলেজ
অর্থনীতি বিভাগ

 

আরপি/জেডএফ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top