ছাত্রলীগের অপকর্ম
রাজশাহী কলেজ ক্যান্টিনের পোনে দুই লাখ টাকা না দিয়েই পালিয়েছে ছাত্রলীগ
রাজশাহী কলেজ ক্যান্টিনের প্রায় দুই লাখ টাকার বকেয়া রেখে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্যান্টিনের মালিক জানিয়েছেন, গত তিন বছর ধরে ছাত্রলীগের সদস্যরা ক্যান্টিনে খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যেতেন। একাধিকবার টাকা চাওয়ার পরেও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন, তবে এখনও পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। কিন্তু কলেজ প্রশাসন বলছে এ বিষয়ে তারা অবগত ছিলেন না।
কলেজের ক্যান্টিন ও ডাইনিং পরিচালনাকারী ব্যবসায়ীরা গত তিন বছরে ছাত্রলীগ নেতাদের বকেয়া টানতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এই ব্যবসায়ী। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের নেতারা ১ লাখ ৭০ হাজার টাকারও বেশি বাকি রেখেছেন, যা পরিশোধ না করায় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা বহুবার কলেজ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন, কিন্তু কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। বিশেষ করে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা, যারা কলেজের ছাত্র নন, তারাও নিয়মিতভাবে ডাইনিংয়ে এসে বিনা পয়সায় খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা চাইলে তারা হুমকি দিতেন, এমনকি বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ফ্রি খাবারের সঙ্গে চাঁদাও আদায় করা হতো। ফলে ডাইনিং পরিচালনাকারীরা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননি।
ক্যান্টিন ও ডাইনিং পরিচালনাকারীরা জানিয়েছেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের নামে বিপুল পরিমাণ বকেয়া জমেছে। বিশেষ করে, বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতি রাসিক দত্ত’র নামে ৩ হাজার ৪৩০ টাকা, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফরের নামে ১৭ হাজার ৯৯৫ টাকা এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাঈমের নামে ১১ হাজার ১৭৪ টাকা বকেয়া রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য নেতাদের নামেও বেশ কিছু টাকা বাকি রয়েছে।
মুসলিম ছাত্রাবাসের ডাইনিংয়ে বাকি টাকার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, যা ১ লাখ ২০ হাজার টাকারও বেশি। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পিয়াসের নামে ৬০ হাজার টাকা এবং মেহেদি হাসান ও রাফির নামে যথাক্রমে ১৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। এছাড়া ইমন, সিয়াম, সিজারসহ আরও অনেক নেতার নামে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বাকি রয়েছে।
সাবেক হোস্টেল সুপার আনিসুজ্জামান মানিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যিনি নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত করতেন। দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি ছাত্রলীগ নেতাদের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বলা হচ্ছে, তিনি ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতি উদাসীন ছিলেন। বিশেষ করে, হোস্টেলে মাদক সেবন ও নারীর আসর বসানোর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছে, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম শৃঙ্খলাহীনতা সৃষ্টি করেছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, আনিসুজ্জামান মানিকের সময়ে হোস্টেলের পরিবেশ ক্রমশ অবনতির দিকে ধাবিত হয়। তিনি ছাত্রদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শিক্ষাগত বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে হোস্টেলে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতির ঘটনা বৃদ্ধি পায়, যা অভিভাবক ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
এমন অভিযোগও রয়েছে, হোস্টেলের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়ে, তিনি নিজের অবস্থান রক্ষার্থে তার প্রভাবশালী সম্পর্কের অপব্যবহার করেছেন। আনিসুজ্জামান মানিক যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে হোস্টেলের পরিবেশ আবারও নিরাপদ ও শিক্ষার উপযোগী হয়ে উঠতে পারে।
সাবেক হোস্টেল সুপার আনিসুজ্জামান মানিক বলেন, হোস্টেলের ডাইনিং এর সাথে কলেজ প্রশাসনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা তাদের মতো ব্যবসা করেছে। ছাত্রলীগের বাকি সম্পর্কে কোনো কিছুই জানা নাই।ছাত্রলীগের আধিপত্যের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার দলীয় দলগুলো স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতার অপব্যবহারের করে থাকে। আমাদের কলেজে ও করেছিল আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমাকে যেভাবেই হোক হোস্টেল চালাতে বলছিল। তাই আমার যা মনে হয়েছে এটি করলে হোস্টেলের ভালো হবে আমি তাই করছি। হোস্টেলের ডাইনিং’র বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। ডাইনিং পরিচালক ও ছাত্রদের মধ্যকার বিষয় এটা। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে আনিসুজ্জামান মানিক বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং ষড়যন্ত্রমূলক। আমি সবসময় আমার দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি এবং শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য যথাসাধ্য করেছি। ছাত্রলীগ নেতাদের অনিয়মের বিষয়ে আমি কখনোই আপস করিনি এবং হোস্টেলের পরিবেশ ঠিক রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। মাদক ও নারীর আসর বসানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটি আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার একটি প্রচেষ্টা।
ক্যান্টিনের দায়িত্বে থাকা আবুল মাসুদ বলেন, "বাকির খাতা লিখতে লিখতে আমি দিশেহারা। এগুলো নিয়ে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। আমি অনেকবার অধ্যক্ষসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বলেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।"
বর্তমান হোস্টেল সুপার মো. গোলাম রাব্বানি জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পরই বকেয়ার তথ্য কলেজ প্রশাসনকে জানিয়েছেন এবং দ্রুত বাকি আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।রাজশাহী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইব্রাহিম আলী বলেন, "আমি এ বিষয়ে অবগত নই, তবে উপদেষ্টা কমিটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।"
আরপি/জেডএফ
বিষয়: রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগ কলেজের ক্যান্টিন ও ডাইনিং ছাত্রলীগ নেতাদের বকেয়া রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাস শেখ হাসিনা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: