রাজশাহী বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১


একজন নিবেদিত শিক্ষক : প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম


প্রকাশিত:
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:২৫

আপডেট:
২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৪১

 প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম

শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মন গঠনে, তাদের যোগ্য ব্যক্তিতে গড়ে তুলতে এবং কৌতূহল ও জ্ঞানের শিখা প্রজ্বলিত করতে একটি অপূরণীয় ভূমিকা পালন করেন। তারা কেবল শিক্ষাবিদই নয়, তারা শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শদাতা এবং অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তারা শুধু জাতি গঠণের কারিগরই নন, তারা জাতির পথ নিদের্শক।

একজন শিক্ষকের ভূমিকা সমাহিত, অবিস্মরণীয় এবং অমূল্য। তারা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং নৈতিকতা দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা অসীম কৃতজ্ঞ। এক নতুন দিনের সাথে একটি নতুন আলোকিত দিন প্রস্তুত করতে, শিক্ষক তাদের যোগ্যতা ও সহানুভূতির মাধ্যমে বৃদ্ধি করার প্রস্তুতি নেয়।

শিক্ষকদের দ্বারা আমাদের কাছে যে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেয়া হয়, তা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত দিক নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তারা শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রতি মুহূর্তে সঠিক দিকে চলার পথে সাহায্য করে। তাদের দেয়া জ্ঞান নিয়ে শিক্ষার্থীরা নতুন অনুপ্রেরণায়, নতুন উদ্যমে পথ চলা শুরু করে এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনার পণ করে।

এমনই একজন শিক্ষাগুরু হলেন রাজশাহী কলেজের সদ্য বিদায়ী প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম। রাজশাহী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান এর বিভাগীয় প্রধান (২০২১-২৩) হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় কলেজের খুবই গুরুত্ব পূর্ণ অবকাঠামো বির্নিমাণে চমৎকার দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন । ডিপার্টমেন্টের নড়বড়ে অবকাঠামোকেও ঢেলে সাজিয়ে ছিলেন। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার পাশাপাশি সুন্দর পরিবেশের দিকটি খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছিলেন। শুধু পড়াশোনার দিকেই সীমদ্ধ না রেখে তাদের উদ্ভিদপ্রেমী ও সমাজের সাধারণ মানুষের সাথে সুন্দর সম্পর্ক তৈরী এবং তাদের দিকে মানবিকতার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার  দিকে তাগিদ দিয়েছে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা: প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম ১৯৮০ সালে এস,এস,সি এবং ১৯৮২ সালে এইচ,এস,সি বিজ্ঞান বিভাগে ঢাকা বোর্ড থেকে পরিক্ষায় উত্তীর্ন হয়। ১৯৮৬ সালে বি,এস,সি (সম্মান) ডিগ্রি , ১৯৮৭ সালে জেনেটিক্সে ১ম শ্রেণিতে ১ম হয়ে এম,এস,সি ডিগ্রি অর্জন করেন, ১৯৯৭ এ এম,ফিল এবং সর্বশেষ তিনি ২০০২ সালে পি,এইচ,ডি উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে সম্পন্ন করেন।

বদলি পদায়নের বিবরণঃ জাহাঙ্গীরপুর সরকারি কলেজের ১৯৯৩ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। তারপর সেখান থেকে একই পদে বদলি হয়ে রাজশাহী সরকারী মহিলা কলেজে ২০০০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ বছর কর্মরত ছিলেন। প্রভাষক পদে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং সার্বশেষ ২০০১-২০০৫ সালে পর্যন্ত প্রভাষক হিসেবে রাজশাহী কলেজে চাকরি করেন। এরপর পদায়ন হয়ে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে কারমাইকেল সরকারি কলেজ (২০০৫-০৭), রাজশাহী কলেজ (২০০৭-১০), শাহজাদপুর সরকারী কলেজ (২০১০-১৩) ও রাজশাহী কলেজ (২০১৩-২০১৮) সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। সর্বশেষ রাজশাহী কলেজে (২০১৮-২৩) উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় কর্মজীবনের ইতি টানেন।

প্রশিক্ষণঃ একজন আদর্শ শিক্ষক হতে হলে শুধু শিক্ষাদানে পারদর্শী হলেই হবে না, তার সাথে তাকে নানা দিকে পারদর্শী হতে হবে। আর এই পারদর্শী হবার জন্য তাকে নিতে হবে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ। যেমনটি দেখা যায় রেজাউল করিমের ক্ষেত্রে। নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য ভাবে গড়ে তোলার জন্য সাত ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। রোভার স্কাউট ইউনিট কোর্স (১৯৯৪), উদ্ভিদ বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ কোর্স (১৯৯৪), বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ (১৯৯৭), আর্থ প্রশাসন ( ১৯৯৮), শিক্ষা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন (২০০৮), মাস্টার ট্রেইনার ট্রেনিং (২০১৩) এবং সর্বশেষ এসিইএম (২০১৮) প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। শুধু এগুলো নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সেই প্রশিক্ষণের অর্জিত জ্ঞান ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনোশিয়া ভ্রমণ করেছেন । তার সেই ভ্রমন অভিজ্ঞতার ঝুলি বিশাল থেকেই সাহারা মরুভূমির মতো শুকিয়ে থাকা ভ্রমন পিপাসু শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞানের পিপাসা মিটিয়েছেন। করেছেন দক্ষ ও যোগ্য। যারা দেশের বিভিন্ন শাখায় দক্ষতা ও যোগ্যতার সাক্ষরতার রাখছে।



প্রকাশনাঃ একজন আদর্শ শিক্ষকের শুধু নিজের শিক্ষার্থীদের এবং দেশ নিয়ে চিন্তা করলে চলবে না। তাকে দেশের গন্ডি পার করে সারা পৃথিবীর দিকে মনোনিবেশ করার সাহস করতে হবে। তার জীবনের অর্জিত জ্ঞান যেন গবেষণার কাজে শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এমই চিন্তা ভাবনা থেকে ড. মোঃ রেজাউল করিম বিভিন্ন বিষয়ে তিনি প্রকাশনা বের করা শুরু করেন।


তার মধ্যে কিছু উল্লেখ যোগ্য কিছু প্রকাশনার নাম বিষয় বস্তু তুলে ধরা হলো:

১৯৯২ সালে তিনি ‍Adventitious shoot formation on excised leaf ezplants of in-vitro grown seedlings of Aegle marmelos corr বিষয় নিয়ে v-68(4), p:495-498 এর Journal of Hotricultural Science এ ছাপানো হয়।

এছাড়াও তিনি Plant Regeneration from leaf-derived Callus in Aegle marmelos corr, Plant Regeneration from nucellar tissues of Aegle marmelos trough organogenesis, High Frequency plant Regeneration from cotyledon Cultures of Aegle marmelos corr  সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখেন তিনি এবং সেগুলো বিদেশি নানা গনমাধ্যমে স্থান পাই।

সর্বশেষ তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যয়ের জীববিজ্ঞান-1 বই (এনসিটিবি কর্তৃক অনুমোদিত)  এবং Text book of Biology (For HSC, English medium) মবীন পাবলিকেশনসে ছাপানো হয়।

বিদায়ের ঘড়িঃ একক মানুষের উপর তার অমূল্য শিক্ষানীতি ও উদারতার জন্য পরিচিত ছিলেন প্রফেসর রেজাউল করিম। শিক্ষানীতির পেশাদার অংশটি ছিল সততা, সমর্থন ও বিনয়ীতা। শিক্ষার ক্ষেত্রে একজন উত্তম উদাহরণ হিসেবে প্রস্তুত থাকতেন সব সময়। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে বিনয়ী ভাবে মিশে থাকতেন।



ড. মোঃ রেজাউল করিমের অবসরকালীন বিদায়ের ঘড়ির কাটা মলিন করেছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মন। স্যারের সাথে কাটানো স্মৃতিময় দিনগুলি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মনিকোঠায় বার বার আঁচড় কাটবে । মনের উঠানে তার স্মৃতি গুলো বার বার নাড়া দিবে। 

আরপি/ আইএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top