রাজশাহী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


যেখানে গেলে মুক্তি পায় মানসিক চাপ


প্রকাশিত:
৩১ জুলাই ২০২৩ ০৭:৪৬

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ০০:২৫

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

আমরা বিভিন্ন কারণে সবাই কমবেশি মানসিক চাপে ভুগি। এর বাজে প্রভাব শরীরের ওপরেও পড়ে। যার ফলে অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ, হজমের সমস্যা এবং স্নায়ুর সমস্যার মতো শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। তবে নিয়মিত কাউন্সিল দেওয়া হলে অনেক রোগীই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। মানসিক রোগীকে নিয়মিত বিনা মূল্যের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সিলিং দিচ্ছে রাজশাহী কলেজে অবস্থিত মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। যেখানে গেলে মুক্তি মেলে শত শত শিক্ষার্থীর মানসিক চাপ।

জানা যায়, কলেজের এই মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিয়মিত তিনদিন কলেজের বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক রোগীকে সেবা দিয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় সবাই সুস্থ হয়েছেন।  

কথা হয় রাজশাহী কলেজের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডা. শতরুপার সাথে। তিনি বলেন, ১৪ দিনের বেশি ডিপ্রেশনে থাকলে তাকে মানসিক রোগী বলা হয়। তবে মানসিক রোগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন: ওসিডি, ফোবিয়া, ডিপ্রেশন এনজাইটি ও রেলেশন প্রবলেম। ‌তবে মানসিক রোগ থেকে বাঁচতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

এছাড়া মানসিক রোগের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, কাউন্সেলিং ট্রেনিং দেওয়ায় এর থেকে উপশম পাওয়া যায়। এখানে সপ্তাহে তিনদিন সেবা দেওয়া হয়। যতজন মানসিক রোগী চিকিতসা নিয়েছেন তাদের প্রায় সকলেই মানসিক চিন্তাভাবনা, বিষন্নতা, অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা, ইত্যাদি থেকে উপশম পেয়েছেন। আমাদের স্বাভাবিক জীবনেও সুষম খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান করা ও মেরিটেশন করলে সুস্থ থাকা যায় বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।

মানসিক রোগীদের সনাক্তের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো ব্যাক্তির অস্বাভাবিক আচরণ করা দেখলেই আমরা ভাবি সে হয়তো মানসিক রোগী। কিন্তু আমরা হয়তো জানিনা যে কোনটা মানসিক রোগ। কেউ কোনো বিষয় নিয়ে বিষন্নতা বা চাপে থাকলেই ভাবি সে মানসিক রোগী। কিন্তু না শুধু বিষন্নতা বা মন খারাপ থাকলেই সে মানসিক রোগী হয় না। অনেকেই একটুতেই অনেক বেশি চিন্তা করা, অস্বাভাবিক রাগ, ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে থাকে এগুলোকে মানসিক রোগের কারণ বলা হয়।

কলেজের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সুস্থতা অনুভব করছেন অনেকে। সেবা নেওয়া শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখান থেকে সেবা ও কাউন্সিলিং নেওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে তারা প্রতিফল পেয়েছেন। 

তারা বলেছেন, নিয়মিত কাউন্সিল দেওয়া হলে রোগীরা স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরতে পারবে। মানসিক রোগীকে নিয়মিত বিনা মূল্যের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সিলিং দিচ্ছে রাজশাহী কলেজের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। অনেকে এখান থেকে সেবা নিয়ে এখন ভালো আছেন।  

মনোবিজ্ঞানী বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে প্রায় আড়াই লাখের বেশি মানুষ এমন রোগের শিকার। কয়েকটি কারণে মানসিক রোগের সৃষ্টি হতে পারে যেমন, বংশগত কারণ, পরিবেশগত কারণ, অস্বাভাবিক আচরণের চাপ, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন নেশাদ্রব্যের প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ এবং দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাবে মানসিক রোগের সৃষ্টি হয়। 

‌রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আজমত আলী রকি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজেদের যত্ন নেওয়া খুবই দরকার। তাছাড়া নিজেকে বেশি সময় দিতে হবে, নিজেকে নিয়েই চিন্তাভাবনা বেশি করত হবে নিজেকে ভালো মানুষের মধ্যে রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন রাজশাহী কলেজের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেসকল মানসিকসেবা, কাউন্সিল দেওয়া হয় তাতে অনেক রোগীই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। কারন এখানে যথেষ্ট পরিমাণে ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখতে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়া। কোনো কাজে ব্যাস্ত থাকা। পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো। নিয়মিত ব্যায়ম করা। নিজের ধর্মের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। নিয়ম অনুযায়ী জীবন যাপন করাসহপ্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটালে অনেকটা চাপমুক্ত থাকা যায়।

রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাঃ আব্দুল খালেক বলেন, জীবনে কখনো খারাপ সময় আসলে সেই সময়ের সাথে মোকাবেলাও করতে হয়। আর মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজন শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা। কিন্তু অনেক সময় শারীরিক অসুস্থ্যতার পাশাপাশি মানসিক ভাবেও বিষন্নতার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা শরীরের ঠিকভাবে যত্ন নিলেও মনের যত্ন নিতে পারি না। কিন্তু সকল সুস্থতায় আমাদের জীবনে অপরিহার্য। কিছু বিষয় মানলে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়।

তিনি আরও বলেন, এগুলো মূলত ১৮-২০ বছর বয়সী কিশোর কিশোরীর মধ্যে হয়ে থাকে। কিশোর কিশোরীর এমন মানসিক রোগের সমাধান না করলে তাদের পরবর্তী জীবনে অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের জীবনে মানসিক রোগ বাঁধা সৃষ্টি করে। মানসিক রোগ থেকে বাচার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু কাজের মধ্যে মানসিক রোগ থেকে উপশম হওয়া যায়। তাদের নিয়মিত কাউন্সিল দেওয়া হলে ভালো থাকা সম্ভব।

 

আরপি/ এমএএইচ 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top