বোমা ডিসপোজাল করবে ‘রোবট জারসো’!
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ধাঁচে তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করতে উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী কলেজ। যদিও নেই হাজার কোটি টাকার বাজেট! তবুও ষষ্ঠবারের মতো ‘সায়েন্স ফেস্ট ২০২৩’ আয়োজন করেছে কলেজের সায়েন্স ক্লাব। বিজ্ঞানের সৌন্দ্যর্যকে উপস্থাপন ও বিজ্ঞানের বিশালতাকে উপলব্ধি করার লক্ষ্যে দুইদিন ব্যাপী সায়েন্স ফেস্টের আয়োজন করা হয়। বিজ্ঞানমেলায় একদল তরুণের উদ্ভাবন ‘রোবট জারসো’। যা দিয়ে বোমা ডিসপোজাল করা সম্ভব বলে দাবি ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের।
প্রজেক্টের সাথে জড়িতরা বলছেন, রোবট জারসো ল্যান্ড মাইট কিংবা গ্রেণেড যেকোনো ধরণের বিস্ফোরক সনাক্ত করতে পারে। বোমাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে কোনো মানুষের উপস্থিতি ছাড়াই। বিগত বছরগুলোতে বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোবটটি তৈরির চিন্তা আসে তাদের মাথায়। এই রোবটটি কোনো বোমার ওপর দিয়ে গেলে রোবটটি বুঝতে পারবে এবং সাইরেন বেজে উঠবে।
বোমা ডিসপোজাল রোবটটি তৈরি করেছেন, রাজশাহীতে অবস্থিত শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান ডিগ্রী কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের (দ্বিতীয় বর্ষ) শিক্ষার্থী তাসনিমুল হক, আসিকুজ্জমান আসিকসহ সহপাঠীরা।
প্রজেক্ট ম্যানেজার তাসনিমুল হাসান জানান, কিছুদিন আগে বোম ডিসপোজ করতে গিয়ে ইউনিটের এক সদস্য মারা গেছেন। এর কারণ হলো বোমটি বেশি শক্তিশালী ছিল। বিভিন্ন সুরক্ষা নেয়া শর্তেও তিনি বাঁচতে পারেননি। সুরক্ষার নয়া সত্ত্বেও অনেক ঝুঁকি থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করেছি এই সমস্যাটাকে সমাধান করার। একটা রোবট যেকোনো ধরনের বোমা চিহ্নিত করবে। এই রোবটটির মধ্যে একটি সেন্সর লাগানো আছে যেটি আইডেন্টিফাই করবে বোমা ঠিক কোথায় আছে। যখনই কোন বোমার উপর দিয়ে যাবে এই রোবটটি মুভ করবে তখন সায়রেন বেজে উঠবে। এছাড়া আরো সুবিধা রয়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রোবটটিতে রয়েছে একটি ক্যামেরা। যেটি মোবাইল ফোনের মাধ্যম দিয়ে পরিচালনা করা যায়।
এ শিক্ষার্থী আরো জানায়, এই রোবটটি ম্যানুয়ালি বা ডিজিটালভাবে বেশ কিছু কাজ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে বোমার তার সংযোগ লাগানো থাকে এই রোবটটি কেটে দিতে পারবে কোনো রকম ঝুঁকি ছাড়াই।
তাসনিম হাসানের আরেক সহযোগী আশিকুজ্জামান আশিক জানায়, এটি এমন একটি রোবট যেটির মাধ্যমে যেকোনো বোমাকে টাচ না করেই রিসেট করে দিতে পারে। যদি কোনো টাইম বোমা কোন জায়গায় স্থাপন করা থাকে এই রোবটটি সেখানে গিয়ে সেই টাইমকে রিসেট করে দেবে।
শুধু বোমা ডিসপোজাল নিয়ে মেলা বসেছে এমন নয়; এবারের আছে প্রজেক্ট শোকেস, ওয়াল ম্যাগাজিন, স্পিড কিউবিং, সুডোকু সলভিং , ডকুমেন্টারি শো, প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট, সায়েন্টিফিক ফটোগ্রাফি কন্টেস্টসহ বেশকিছু অনলাইন ইভেন্ট।
এই ‘সায়েন্স ফেস্টিভালের মধ্যে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াদের প্রযুক্তিগত মডেল প্রদর্শনী এবং 'তরুণ বিজ্ঞানীদের' সম্মেলনকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক।
সায়েন্স ফেস্ট প্রসঙ্গে আয়োজকরা বলেন, বিজ্ঞান আমাদের জীবনের সঙ্গে অতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বিজ্ঞানকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। তাই বিজ্ঞানের সৌন্দ্যর্যকে উপস্থাপন ও বিজ্ঞানের বিশালতাকে উপলব্ধি করার জন্য আমাদের এই আয়োজন।
রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাঃ আব্দুল খালেক বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানে উৎসাহী করে তুলতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক ধাপও চলতে পারি না। একমাত্র বিজ্ঞানচর্চাই আমাদের কুসংস্কারমুক্ত জাতি গঠনে সহায়তা করবে। তাদের মধ্যে বিজ্ঞানের চিন্তাকে স্থাপন করতে এবং বিজ্ঞানমনস্ক করে শিশুদের গড়ে তুলতে এ ধরনের উদ্যোগ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই নেওয়া উচিত।
আরপি/ এমএএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: