রাজশাহী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১


সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারীদের মানবেতর জীবন!


প্রকাশিত:
৫ মার্চ ২০২৩ ১১:০৯

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ২০:৪৮

ছবি: মানববন্ধন

সরকারি কলেজে কর্মরত বেসরকারি কর্মচারীদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৫ শতাধিক কর্মচারী যোগ দেন।

শনিবার (৪ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে, সরকারী কলেজের বেসরকারি কর্মচারি ইউনিয়নের ব্যানারে একটি মৌন মিছিল রাজশাহী কলেজ থেকে বের হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৪০০টি সরকারী কলেজ ও ৩টি সরকারি মাদ্রাসার বেসরকারি কর্মচারীরা বিগত ৫ থেকে ২৫ বছরের অধিক সময় ধরে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত আছেন। আমাদের মাসিক বেতন ৫০০০ থেকে ৯০০০ টাকা। এই অল্প বেতনে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে জীবন যাপন করছি। অবিলম্বে তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবি জানান তারা।

তারা বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে সাফল্য অর্জন করেছে এই অর্জনে বেসরকারি কর্মচারীদের অবদানের কথা বাদ দিয়ে ভাবা যায় না। আমরা চাকরি স্থায়ী করার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত ৮ নভেম্বর থেকে ২৬ শে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারি কলেজ ও ৩টি মাদ্রাসায় কর্মরত বেসরকারি কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করি।

প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব ও মহাপরিচালককে আমরা স্মারকলিপি প্রদান করি। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে। মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ৩ মাসের জন্য আমাদের কর্মসুচী স্থগিত ঘোষণা করি। আমরা ১৫ থেকে ২৫ বছরের উর্ধ্বে নিজের সন্তানের মতো আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভালোবেসে নিজের বুকে ধারণ করে নিরসলভাবে কান্না করে চলেছি।

এরপরও আমাদের বাদ দিয়ে নতুন নিয়োগের মাধ্যমে নতুন জনবল নিয়োগের দ্বারা আমাদের ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চয়তার মধ্যে ধাবিত হচ্ছে। সে কারণে আমরা চাই নতুন করে জনবল নিয়োগ না দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ যে সকল কর্মচারী বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে বেসরকারিভাবে সেবা দিয়ে আসছে তাদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিকে নিয়োগ দিয়ে সাধারণ কর্মচারীদের বেচে থাকার পথকে সুগম করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানান কর্মচারীরা।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এহসানুল কবির বলেন, আমাদের অনেকের চাকরির বয়স ৩০ বছরের অধিক হয়ে গেছে। আমরা সামান্য মজুরীতে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমাদের নিজেদের সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করতে পারছি না। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে পারছি না। ৫ থেকে ১১ হাজার টাকা বেতনে বর্তমান সময়ে সংসার চালানো যায় না। আমাদের মাতা-পিতা ও সন্তানদের ভরণপোষনের ব্যয় নির্বাহ করতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারি কলেজের সকলেই যে দপ্তরে চাকুরী করছি, সেখানে আমরা সরকারি দায়িত্ব পালন করছি। বিভিন্ন কলেজ সরকারি করা হলেও আমাদের বিষয়টি মানবিক বিবেচনা করা হচ্ছে না। ২০১৩ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল ও আমাদের জাতীয়করণের জন্য মহামান্য হাইকোট ডিভিশনে রিট পিটিশন করা হয়। কিছু কিছু মামলা ইতোমধ্যে আমাদের পক্ষে রায় ঘোষণা দিয়েছে।

২০১৭ সালে মামলার প্রেক্ষিতে কিছু পদ শূন্য রেখে ৩য় শ্রেণীর নিয়োগ সম্পূর্ণ করে। সমগ্র বাংলাদেশের কলেজ সমূহের সূচনালগ্নে যে পদ সৃষ্টি হয়েছিল তা দিয়ে বর্তমান কলেজের অনার্স মাস্টার্স বিভাগ ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে না পেরে আমাদের মাউশির পরিপত্র মোতাবেক কলেজ অধ্যক্ষগণ নিয়োগ প্রদান করেন। অনেক জায়গায় রাজস্ব খাতভূক্ত হলেও আমরা অবহেলিত। এ অবস্থা থেকে মুক্তি দাবি করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারী ক্ষেত্রভেদে ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন পদে কাজ করে আসছেন। স্ব স্ব কলেজ অধ্যক্ষ বেসরকারিভাবে এসব কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়েছেন। ১৯৯১ এর নিয়োগ বিধান মোতাবেক স্ব-স্ব কলেজের শুন্য পদের একশত ভাগের ভিতর ৬০ ভাগ নিয়োগ কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রদান করে। এরপর সিনিয়র হিসেবে কর্মরত কর্মচারীদের চাকুরী রাজস্ব খাতভূক্ত করা হতো মহাপরিচালক বরাবর আবেদনের প্রেক্ষিতে।

কিন্তু ২০১৩ সালে অধিদপ্তর থেকে শতভাগ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় বঞ্চিত হয় সকল বেসরকারী কর্মচারীরা। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৪ এর পরিপত্র অনুযায়ী নিরাপত্তাপ্রহরী/নৈশপ্রহরী/অত্যাবশকীয় কর্মচারী খাত হতে দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মচারীদের মজুরী, কম্পিউটার ও পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি ব্যয়বহন করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৯৯১ সালের নিয়োগ বিধি ৬(৩) (ক) ধারা মোতাবেক অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের আচরণ ও কর্ম সন্তোষজনক হওয়ায় চাকুরী স্থায়ীকরণ করা হয়।

এরপর সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন নং-৩২৭৫/২০১৭ ও ১১৭/২০১৭ বিচারাধীন থাকায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদ সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে নিয়োজিত ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর ৩৩ জন কর্মচারীর চাকুরী আত্মীকরণের সুপারিশ অনুযায়ী ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা ও ৮,২৫০-২২,৪৯০ টাকা বেতন স্কেলে বিভিন্ন কর্মস্থলে নিয়মিতকরণ করে পদায়ন করা হয়।

অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংকের ৭০০ অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারীদের চাকুরী স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়াধীন ও বিমান বাংলাদেশের দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারীদের চাকুরী নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারীরা কোন আশার বানি শুনতে পাননি। শূন্য পদের বিপরীতে অথবা যে কলেজে কর্মরত তার চাকুরী সে স্থানে রাজস্বখাতভূক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

 

 

আরপি/এসআর-০২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top