রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


নৈসর্গিক সৌন্দর্যে রাজশাহী কলেজ


প্রকাশিত:
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩৪

আপডেট:
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৯

বাঙালি ও বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্পের আদিম নিদর্শন পদ্মাপাড়ের রাজশাহী কলেজ। ভবনগুলোর শৈল্পিক-সুদৃঢ় কাঠামো অনায়াসে ভাবনার জগতে দাগ কাটে যে কারোর। কৃতিত্ব, সৌন্দর্য আর আভিজাত্যের জন্য বিখ্যাত লাল দালানের এই ভবনগুলো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে র্যাঙ্কিংয়ে টানা চতুর্থবারের মতো দেশসেরা হয়েছে রাজশাহী কলেজ। দেশের একমাত্র এই মডেল কলেজ সেরা সরকারি কলেজেরও খেতাবও অর্জন করেছে। রাজশাহী কলেজ জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে তিনবার। শুধু পড়াশোনায় শ্রেষ্ঠ নয়; গাছপালা ঘেরা মনোরম পরিবেশ এবং লাল দেওয়ালের এই বৈচিত্র্যময় কলেজের অপরূপ সৌন্দর্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বাইরে থেকে আগত বিভিন্ন দর্শনার্থীদের মন জয় করে তুলেছে।

কলেজের মনোরম এই পরিবেশ ও সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ হলো ফুলের বাগান। চেনা-অচেনা অসংখ্য গাছ-গাছালি এবং হরেক রকমের ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে এই ক্যাম্পাসের আঙ্গিনা। চারপাশের সবুজ প্রকৃতি পাখির কলরব এবং রং বেরঙের ফুল দ্বারা সেজে উঠেছে তার অপার মহিমায়।

ফুল, সে তো এক প্রশান্তির প্রতীক। কখনো ভালোবাসার প্রতীক আবার কখনো বন্ধুত্বের প্রতীক। অনেকেই বলে থাকে কালো মানেই অশুভ আর শোক প্রকাশ। তবে অধিকাংশ ফুলপ্রেমী কালো ফুল দেখে শোক প্রকাশের পরিবর্তে বিমোহিত হয়ে পড়ে। ফুল মানে নিছকই সৌন্দর্যের বিষয়বস্তু নয় বরং তা ভালোলাগা, ভালোবাসার এক আবেগময় শব্দ। সৃষ্টিকর্তার অন্যতম সৃষ্টি ফুল যা আমাদের পৃথিবীকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। প্রকৃতি তার সৌন্দর্য প্রকাশ করে ফুলের মাধ্যমে। ফুল তার নিজ সৌন্দর্য গুনে চারপাশের পরিবেশকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে।

হরেক রকমের ফুলের কারণেই দৃষ্টিনন্দিত হয়েছে দেশসেরা এই কলেজটি। শীতকালে গাছের পাতা ঝরে রিক্ততা সৃষ্টির মূহুর্তে রকমারি ফুল দিয়ে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করেছে এই ক্যাম্পাসটি। এ যেনো এক অনন্য রূপ!

শীতের সকালে ক্যাম্পাসে ভাসতে থাকে মোহনীয় সব ফুলের সৌরভ। এই স্নিগ্ধ সকালের শিশির বিন্দুতে ভিজে লাল টকটকে রং ধারণ করেছে ডালিয়া। শিশির স্নাতে অপরুপ সাজে সজ্জিত হয়েছে চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, ক্যালেণ্ডুলা, সুইট উইলিয়াম সহ হরেক রকমের ফুল। হিমেল হাওয়ায় সতেজ হয়ে উঠেছে যেন গাঁদাগুলোও। উঁচু ভবন থেকে দেখলে মনে হয় যেন মাটিতে বিছানো রয়েছে এক ফুলের গালিচা। 

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বর, ভবন ও ফাঁকা জায়গাগুলোজুড়ে রয়েছে মোহনীয় সব ফুলের সৌন্দর্য। কলেজের প্রশাসন ভবনের পেছনে পুকুরপাড় সংলগ্ন রয়েছে একটি বাগান। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, জিনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, টাইম ফুল, ব্যাচেলরস বাটন, চাইনিজ ফ্রিঞ্জসহ হরেক রকমের ফুল। এ যেন এক নৈসর্গিক পুষ্পউদ্যান!

প্রতিদিনই প্রায় শত দর্শনার্থীর ভিড় জমে এই পুষ্পউদ্যানে। নৈসর্গিক এই পুষ্পউদ্যানের পাশেই পুকুরটিতে দেখা যায় পদ্ম ফুলের সমারোহ। শুধু পদ্ময় নয়; আরও দেখা যায় দূর্লভ লাল শাপলা। শাপলা-পদ্মের এই নিবিড় বন্ধন এই দেশসেরা কলেজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দ্বিগুন বৃদ্ধি করেছে। 

পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউটের মরিয়ম শান্তা নামের এক শিক্ষার্থী এসেছিলেন এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তিনি বলেন, আমি আজ প্রথম এই কলেজে ঘুরতে এসেছি। অন্যান্য স্কুল, কলেজেও আমি ফুলের গাছ দেখেছি কিন্তু একসাথে এতোগুলা ফুল কখনো দেখিনি। আর ফুল মানেই তো চোখের প্রশান্তি, মনের প্রশান্তি। আমার মনে হচ্ছে এখানে এসে সত্যিই আমি সেই প্রশান্তিটা পাচ্ছি। আমার অনেক ভালো লাগছে। 

রাজশাহী কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাষ্টার্স শেষ পর্বের ছাত্র রিকো মাহমুদ বলেন, আমি এখানে এসেছি কয়েকমাস হলো মাত্র। কলেজ সময় ছাড়াও কখনো কখনো সকালে এমনকি বিকেলে ও ঘুরতে আসি। কারণ ক্যাম্পাসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মনোরম পরিবেশ, নাম না জানা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি, ফুল দেখে সত্যি মনটা ভালো হয়ে যায়। জানা-অজানা এতো শত ফুলের সৌন্দর্যে খুব প্রশান্তি অনুভব করি। ব্যাচেলরস বাটন, চাইনিজ ফ্রিঞ্জসহ এমন কয়েক ধরণের ফুলের সাথে এখানে এসে আমি পরিচিত হয়েছি।

ফুলের সৌন্দর্যের বিষয়ে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাঃ আব্দুল খালেক বলেন, ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। কলেজের সৌন্দর্য বর্ধিত করার জন্যই রং-বেরং এর ফুল গাছ লাগানোর হয়েছে। আর শাপলা-পদ্ম আমাদের সকলের শৈশবকে মনে করিয়ে দেয়। ছোটবেলাকে ফিরে পাওয়ার জন্যই মূলত এই পদ্ম পুকুরের আয়োজন। 

তিনি বলেন, দেশসেরা এই কলেজ একদিকে যেমন লাল ভবন, ভবনের উপরে আঁকা টেরাকোটা দিয়ে ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে, অন্যদিকে তেমনি হাজারো রকমারি ফুল দিয়ে কেঁড়ে নিয়েছে আগতো শত দর্শনার্থীর মন। কলেজটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সকলেই বিমোহিত হয় নিজ ক্যাম্পাস দেখে। 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top