রাবি ভর্তি পরীক্ষা: এক ইউনিটে প্রথম, অন্যটাতে ফেল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় সি (বিজ্ঞান) ইউনিটে অ-বিজ্ঞান শাখায় মানবিক থেকে প্রথম হয়েছেন মো. হাসিবুর রহমান নামে এক ভর্তিচ্ছু। তবে তার সংশ্লিষ্ট এ (মানবিক) ইউনিটে তিনি মাত্র ২০ নম্বর পেয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন।
হাসিব চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় এ ও সি ইউনিটে অংশ নেন। গত ৬ ও ৭ নভেম্বর যথাক্রমে সি ও এ ইউনিটের ফল প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় গ্রুপ-২ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে (রোল ৫৪২৩৩) এমসিকিউয়ে তিনি পেয়েছেন মাত্র ২০ নম্বর। যে কারণে পরীক্ষার শর্তানুযায়ী তার লিখিত খাতা মূল্যায়নের অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
অথচ সি ইউনিটের (বিজ্ঞান) অ-বিজ্ঞান শাখায় মানবিক থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে হাসিব এমসিকিউয়ে ৬০ এর মধ্যে ৫৪ ও লিখিততে ৪০ এর মধ্যে পেয়েছেন ২৬ নম্বর। তার সি ইউনিটে পরীক্ষার রোল ৮০৩১৮।
ফল প্রকাশের পর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের নজরে আসলে প্রায় ১৫ দিন ধরে তার সঙ্গে বিভিন্ন কৌশলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে প্রথম দিন তিনি জানান, গ্রামের বাড়িতে থাকায় তার পক্ষে দেখা করা সম্ভব নয়। তবে দুই-তিন দিন পর রাজশাহীতে এসে তিনি যোগাযোগ করবেন। এর তিন দিন পর টানা দুদিন তার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি খুদে বার্তা দিলেও কোনো উত্তর দেননি হাসিব।
পরে সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার চিফ কো-অর্ডিনেটর ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. একরামুল হামিদকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তিনি জানান, হাসিবকে গতকাল (২৫ নভেম্বর) ডেকে নিয়ে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এবং বলা হয়, আজ মঙ্গলবার ঠান্ডা মাথায় সবকিছু (কীভাবে পরীক্ষা দিয়েছে) ভেবে ডিন অফিসে আসতে। কিন্তু সারাদিন পার হলেও ডিন অফিসে উপস্থিত হননি হাসিব।
২৫ নভেম্বর সি ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ২৮ নভেম্বর ও মাঝখানে বিরতি দিয়ে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মঙ্গলবার বিকেলেও হাসিবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।
হাসিবুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট থানার বাড়ইপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। তিনি রহনপুর মহিলা কলেজের শিক্ষক। হাসিব ২০১৯ সালে রাজশাহীর নিউ গভমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।
হাসিবের একাধিক বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। তিনি ভর্তি আবেদন করেছিলেন। এমনি সিলেট হয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য বাসের টিকেটও সংগ্রহ করেছিলেন। রাজশাহীতে পরীক্ষা দেয়ার পর হাসিব আর কোথাও পরীক্ষা দিতে যাননি। এরই মধ্যে রাজশাহী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে তিনি একদিন ক্লাসও করেছেন বলে তার বন্ধুরা জানায়।
ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে যুক্ত একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে জানান, ‘বর্তমান পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়া খুবই কঠিন। এমনকি পরীক্ষার হলে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করাও সম্ভব নয়। এটা হতে পারে ওই ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্ন পেয়েছিল কিংবা পরীক্ষার ওয়েমার শিট ও লিখিত খাতা ফাঁকা রেখে এসেছিল এবং পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় এটা সম্পন্ন করা হয়েছে।’
সি ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার চিফ কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মো. একরামুল হামিদ বলেন, ‘আমরা গতকাল সোমবার ওকে (হাসিব) প্রায় দেড় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ওর মা-বাবার মোবাইল নম্বর ও কাগজপত্র রেখে দিয়েছি। আজ মঙ্গলবার সকালে ওকে ডাকা হয়েছিল। তবে সে উপস্থিত হয়নি। এর মধ্যে সে না আসলে ২৮ নভেম্বর আমরা আবার তাকে ডাকব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ইউনিট কর্তৃপক্ষ আমাকে ডেকেছিল। আমি গতকাল গিয়েছিলাম। তারা তদন্ত করে প্রক্টরিয়াল বডিকে ব্যবস্থা নিতে বললে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।
আরপি/ এএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: