রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


রাবির উন্নয়ন প্রকল্প: ৫ মাসেই ঝড়লো ৩ প্রাণ


প্রকাশিত:
৮ জুন ২০২২ ২০:৪৬

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৫১

ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের অর্ধেক কাজ শেষ না হতেই গত ৫ মাসে ঝরেছে তিনটি তাজা প্রাণ।

জানা যায়, গত ৮ই জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সংস্কার কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন আলেক (৩৫) নামের এক নির্মাণ শ্রমিক। মাস না পেরোতেই ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ক্যাম্পাসের বিশতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণস্থলের সামনের সড়কে প্রাণ হারাতে হয় গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেলকে। সে নিয়ে প্রবল ছাত্র আন্দোলনের মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুধু আলেক আর হিমেলই নয় সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ২০ তলা একাডেমিক ভবনে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট জীবন দিতে হয় সাগর নামের এক শ্রমিককে।

রাবির চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের অর্ধেক কাজ শেষ না হতেই গত ৫ মাসে এভাবেই পর পর ঝরেছে তিনটি তাজা প্রাণ। এ ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কোম্পানিগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।

অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জুতসই তত্ত্বাবধান ও প্রকল্প পরিচালকদের কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর বেখেয়ালি কর্মতৎপরতারই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দায়ী।

এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মজিদ অ্যান্ড সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড একাই করছে দুটি প্রজেক্ট এর কাজ। বিতর্কিত এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে রাবি শিক্ষার্থী হিমেল ও নির্মাণ শ্রমিক সাগরের নির্মম মৃত্যুর ঘটনা।

তবে এসব ঘটনার দায় অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির ডিপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার জহিরুল ইসলাম জানান, ভবনের ভিত্তি প্রস্থরের জন্য এখনও মাটির নিচে কাজ চলছে। মাটির নিচে কাজ করার জন্য যত রকম নিরাপত্তা প্রয়োজন তার সবরকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভবন নির্মাণ কাজের কারিকুলামের বাইরে গিয়ে কাজ করায় সাগর নামের ওই শ্রমিকের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। শ্রমিকদের আরও প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করছে কোম্পানি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের যথাযথ তত্ত্বাবধানের অভাব আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) খন্দকার শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো দুর্বলতা নেই। যারা বলে তত্ত্বাবধানে আমাদের গাফিলতি আছে তাদেরকে বলতে বলেন, কোথায় কোথায় গাফিলতি আছে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।’

এবিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই এবং বিচ্ছিন্নভাবে তিনটি ঘটনা তিন ধরনের। কোনোটার সঙ্গে কোনোটার যোগসূত্র আমরা বলতে পারি না। তবে যা ঘটেছে তা অবশ্য আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক। আমাদের জায়গা থেকে খুব ত্রুটি আছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বার বার সতর্ক করে আসছি। তারপরেও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আমাদের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার তা আমরা গ্রহণ করবো।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমরা যখন কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে কাজ দেই তখন ওই কোম্পানির গুণগত মান দেখে নেই। যে তারা ঠিকমত কাজটা করছে কিনা বা করতে পারবে কিনা। শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি ঠিকাদার কোম্পানিগুলোর নিজস্ব ব্যাপার। তাদেরই এ বিষয়ে সর্বদা সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।’

এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ আছে কিনা সে ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার পরে তাদেরকে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার জন্য বলেছি আমরা। যাতে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এমনকি এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি ঠিকাদার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠকও করেছি। তবে ঠিকাদার কোম্পানিগুলোকে কাজ দেওয়ার আগে এইসব বিষয়গুলোর ব্যাপারে খুঁটিয়ে দেখা উচিত ছিল। কিন্তু আগের প্রশাসন তা করেনি।’

 

 

আরপি/এসআর-০৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top