রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


জাতীয় সংগীতেও আপত্তি সেই তানভীরের?


প্রকাশিত:
২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৫০

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ২১:২১

ফাইল ছবি

শিক্ষার্থীর মা-বাবাকে তুলে গালাগাল, ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি, টাকা আত্মসাৎ এবং ছাত্রীকে মৃত বাবার কাছে যেতে না দিয়ে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দেড় ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনায় অভিযুক্ত রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক নার্সিং কলেজের (আইবিএনসি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তিনি যোগদানের পর থেকে কলেজে রাষ্ট্রীয় দিবসসমূহে জাতীয় সংগীত পরিবেশন হয় না বলে অভিযোগ সিনিয়র শিক্ষার্থীদের। উল্টো ‘ডিজে গান’ বাজানো হয় বলেও তাদের ভাষ্য। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে তানভীরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজটিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবসে জাতীয় সংগীত পরিবেশন হয় না। অথচ এসব দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন থেকে বাজেট বরাদ্দ ও যথাযথ নির্দেশনা থাকে। তারা জানান, সরকারী নির্দেশনার কারণে নামমাত্র দিবস পালন করা হলেও সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ডাকা হয় না অনুষ্ঠানে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ দিবস উদযাপন করতে না পেরে তারা ক্ষুব্ধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, কিছু কিছু সময়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হলেও জাতীয় সংগীত বাজতে দেখিনি কলেজে। এমনকি জাতীয় সংগীতের পরিবর্তে ‘ডিজে গান’ বাজানো হয়েছে। কী কী গান বাজে, তারা নিজেরাও জানে না।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজে অধ্যক্ষ থাকলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর সিদ্দিক সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। আগের অধ্যক্ষ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা থাকাকালীন সব দিবস পালন করা হতো। কিন্তু দুই বছর থেকে এসব দিবস ঠিকমতো পালন করা হয় না। তবে সম্প্রতি তানভীর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার কারণে কৌশল হিসেবে এবারই প্রথম ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতীয় সংগীত পরিবেশন হয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে ডাকা হয় নি অনুষ্ঠানে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানভীর সিদ্দিক কলেজটিতে যোগদানের পর থেকেই সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেন। আটকিয়ে রাখতেন শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য কাগজপত্র। কোনো শিক্ষার্থী সরকারী নার্সিং কলেজে চান্স পেলে ভর্তি বাতিল ও কাগজপত্র উঠানোর আবেদন করলে তানভীর সিদ্দিক তার কক্ষে ডেকে নিয়ে চাপ প্রয়োগ করতেন পুরো চার বছরের কোর্স ফি পরিশোধের জন্য। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা কলেজে আসলে তাদের সঙ্গেও করতেন দুর্ব্যবহার। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তার দুর্ব্যবহারে অনেক অভিভাবক মনোক্ষুন্ন হয়ে সন্তানের কাছে কলেজে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। যে কারণে হোস্টেলে অসহায় হয়ে থাকতে হয় তাদের।

এসব ঘটনায় তানভীর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তির দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামীলীগের সহঃ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কারো অনুদান নয়, এটা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। স্বাধীন দেশে পতাকা উড়বে না, জাতীয় সংগীত বাজবে না। এটা আমরা কোনোদিনই মেনে নিতে পারি না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাহী সদস্য ও রাজশাহী আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান বলেন, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে না। তার অপমানজনক শাস্তি হওয়া দরকার।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত তানভীর সিদ্দিক বলেন, নিয়ম মেনেই সকল দিবস পালন করা হয়। জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মনোয়ারা খাতুন বলেন, শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ সঠিক নয়। আমি এক বছর আগে যোগদান করেছি। তারপর থেকে দিবস পালন করা হয়েছে।

 

 

আরপি/এসআর-০৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top