রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


সাপের কামড়ে করণীয় এবং ভেষজের ব্যবহার


প্রকাশিত:
১২ নভেম্বর ২০১৯ ০৯:৩২

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ২১:৫৮

ছবি: সংগৃহীত

দরিদ্র গ্রামবাসীরা সাধারনত সাপের কামড়ের ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন। অনেক সময় প্রতিষেধক ও আধুনিক চিকিৎসার সুব্যবস্থা না থাকায় সনাতন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার কারণে দরিদ্র গ্রামবাসীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশী থাকে। তাই সাম্প্রতিক সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজশাহী কলেজ উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারের প্রতিপাদ্য বিষয় সাপের বিষ এবং ভেষজ প্রতিষেধকের ব্যবহার।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান এবং উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ইউজিসি ইমেরিটাস ফেলো ড. এ গোমেজ। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আবু রেজা।

বিজ্ঞানী গোমেজ সাপের বিষ সংগ্রহ এবং বিষের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের নানা বিষয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য এবং সাপে কামড়ালে করণীয় বিষয় তুলে ধরেন।

ড. গোমেজ বলেন, রাজশাহীতে বেজির সংখ্যা বেশি। সে কারণে সাপের সংখ্যাও বেশি। সাপ সব জায়গাতে থাকে। বড় বড় দালানের কারণে সাপের সংখ্যা সাধারণত কমে যাচ্ছে। শুকনোস্থানে,পানিতে, গাছে, গোয়ালঘরে ও মানুষের আবাসস্থলে সাপ থাকতে পারে।

বিষধর সাপে কামড়ালে তার লক্ষণসমূহ: ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত চন্দ্রবোড়া সাপে বেশি মানুষ মারা যায়। এই সাপ কম বিষাক্ত কিন্তু এর ব্যবহার কড়া মেজাজের। বড় দাঁতের জন্য বিখ্যাত এবং অনেক মানুষ দংশিত হয়। রক্ত বন্ধ হয়ে যায় ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মানুষ মারা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক করে মানুষের মৃত্যু হয়। সাপে কামড়ালে পা ফুলে যেতে পারে, চোখে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত বের হতে পারে, কিডনি, লিভার, স্নায়ু আক্রান্ত হতে পারে। সর্বশেষ, সাপের কামড়ে কয়েক মিনিট হতে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোগী মারা যেতে পারে।

সাপে কামড়ালে করণীয় বিষয়ে গবেষক ড. গোমেজ বলেন, যেসব গাছ কিছুটা সাপের বিষের প্রতিদ্বন্দ্বী ভূমিকা পালন করে সেসব(বনহলুদ) গাছের রস বা শেঁকড় খাওয়াতে খাওয়াতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। শক্ত করে পাটের দড়ি কিংবা যে কোন কোন জিনিস দিয়ে বাঁধা যাবেনা। গামছা জাতীয় জিনিস দিয়ে বাঁধতে হবে (যেটা অনেক জায়গাজুড়ে বাঁধা থাকবে) এরকম চিকিৎসা যাকে বলা হয় কম্বিনেশন থেরাপি। যতদ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং এন্টিভেনাম দিতে হবে।

ওঝা বা কবিরাজের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা সাপ চেনে। বিষ নামানো বা রোগী ভালো করার মতো ক্ষমতা ডাক্তারেরই আছে কবিরাজের নেই।

এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কার্বনিক অ্যাসিড বাড়ির আশেপাশে ছড়িয়ে রাখা রাখলে সাপ আসে না ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল। কিন্তু গ্রামে অনেক জায়গাতে দেখা যায় বাড়িতে বেড়াচাঁপা গাছ দিয়ে বেড়া তৈরি করা হয়। তবে এটার কতখানি সত্যতা রয়েছে তা আমার জানা নেই। এটি একটি মানসিক প্রশান্তি বলা চলে।
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শাহানারা বেগমের এক প্রশ্নে ড. গোমেজ বলেন, সাপ মানুষকে কামড়ায় না। তারা খুব নিরীহ। সাপ দেখলে দাড়িয়ে যেতে হবে এবং মুভমেন্ট দেখতে হবে কোন দিকে যাচ্ছে। তাকে মারা কিংবা পালিয়ে যাওয়ার মত কাজ করলেই তারা বিভ্রান্ত হয়ে কামড়াতে পারে।

সেমিনারে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন শাকিলার সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শাহানারা বেগম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. নাজনীন সুলতানাসহ উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সকল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকমণ্ডলী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও কলেজের অন্যান্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

আরপি/এমএইচ

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top